বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ

সিঙ্গেল বের করা নিয়ে সমস্যা বা অনীহা, এই ব্যাপারটি যে শুধু এই টুর্নামেন্টের সমস্যা তা কিন্তু নয়, এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যার্থতারও একটা মূল কারণ। অথচ, হাতে প্রচুর পিঞ্চ হিট না নিয়েও যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সফল হওয়া যায়, তা তো কেন উইলিয়ামসনই দেখিয়েছেন। উইলিয়ামসনের স্ট্রাটেজিটা কিন্তু কঠিনও নয়। বোলারের বাজে ডেলিভারিতে চার মারতে হবে, ভাল ডেলিভারিগুলিতে বলকে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল ডাবলস নিতে হবে। ছয় বলে একটাতে চার আর বাকি পাঁচ বলে পাঁচ রান নিতে পারলে ছয় বলে রান দাঁড়ায় নয়! সহজ এই ব্যাপারটি বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের শিখতে হবে খুব দ্রুতই।

জানুয়ারির সেই দিনটাতে কুমার সাঙ্গাকারা খেলেছিলেন ৩১৯ রানের ইনিংস, আমাদের বিপক্ষেই। যারা একটু আধটু ক্রিকেট জ্ঞান রাখেন, সেই দিনটার আর সেই ইনিংসটার কথা আপনার মনে থাকবে। নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমীরা তো সেই দিনটাতে দ্বিধায়ও পড়ে গেছিলেন। ক্লাস, টেম্পারমেন্ট, টেকনিকের মিশেল ঘটানো সাঙ্গার ইনিংস দেখবেন নাকি নিজ দেশের মাঠে নিজের দেশের এই লজ্জাজনক অবস্থা দেখবেন?

৩১৯ রানের মাথাতে সাঙ্গাকারা আউট হয়ে গেলেন । শটটা মিসটাইমিং ছিল কিনা হলফ করে ৬ বছর পর ঠিক বলতে পারব না । তবে হেলমেট হাতে মাথা নাড়াতে নাড়াতে প্যাভিলিওনে ফেরা সাঙ্গাকারার মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছিল- যা খেলতে চেয়েছিলেন সেই শটটি তিনি খেলতে পারেননি!

নাহ পাঠক, আপনি ভুল পড়ছেন না। টেস্ট ক্রিকেটে একটা ইনিংসে ৩১৯ রান করা একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে প্যাভিলিওনে ফিরছেন মাথা নাড়াতে নাড়াতে নিজের প্রতি বিরক্ত হয়ে- স্রেফ ৩১৯ রান করার পর যে শটটা তিনি খেলতে চান তা খেলতে পারেননি।

সাঙ্গাকারার গল্প তো হল অনেক। একটু জো রুটের কথা শুনে আসি চলুন। ২০১৭ সালের কথা সেটা। জো রুটের নিজের কিছু বিবৃতি নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি বের হয়। সেই ডকুমেন্টারির প্রতিটা লাইন ছিল অনন্য, অসাধারণ। সেই ডকুমেন্টারিটার শেষ লাইনটা ছিল- ‘The moment you think you have done it, you are finished.’ ভাবানুবাদে বাংলা করলে দাঁড়ায়, যে মুহুর্তে তোমার আত্মসন্তুষ্টি আসবে, তুমি শেষ!

জো রুট ঘুরে আমরা গল্পটা বলতে পারি স্টিভ স্মিথের, যিনি কিনা একটা সেঞ্চুরি পাননি বলে তিন কিমি দৌড়ে টিম হোটেলে ফিরেছেন নিজেকে শাস্তি দিতে! ভাবতে পারেন? টেস্ট ক্রিকেটে যে লোকটার তুলনা দেওয়া হয় স্যার ডন ব্রাডম্যানের সাথে, সেই লোকটা নিজেকে শাস্তি দিচ্ছেন একটা ম্যাচের একটা ইনিংসে সেঞ্চুরি না পাওয়ার জন্যে!

এতকিছু বলার কারণ তামিম ইকবাল। কিছুদিন আগে তামিম ইকবাল একটি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘৩০ বলে ৩০ রান করাতে আমি খারাপ কিছু দেখিনা।’

যেকোন বিবৃতির একটামাত্র লাইন কখনওই সেই বিবৃতিটাকে বিচার করার জন্যে যথেষ্ট নয়। আমি তাই তামিম ইকবালের পুরো বিবৃতিটা এখানে তুলে ধরছি, ‘আমার সাথে যারা খেলছে তাঁরা কোন স্ট্রাইক রেটে খেলছে এটাও তো খেয়াল রাখতে হবে। ৩০ বলে ৩০ রান করাতে আমি খারাপ কিছু দেখিনা যদি পরিস্থিতি ওরকম হয়। যখন আমরা ১৫০ রান তাড়া করছি ঐ সময় যদি ৩ টা উইকেট পড়ে যায়, তখন ২০ বলে ৩০-৪০ রান করা কঠিন।’

তামিম ইকবাল আরো বলেছেন, ‘দিনশেষে যদি আমি ৪০ বলে ৪০ রান করাতে দল জিতে, এটা ভালো। আমি ১৫ বলে ৪০ রান করে দল হারলে এটা ভাল ইনিংস হল না। দিনশেষে কথা হল, আমার দলে আমাকে কীভাবে খেলতে হবে।’

ক্রিকেটীয় বিচারে তামিম হয়তো ঠিক কথা বলছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিচারে তামিম একেবারেই ঠিক কথা বলছেন না। প্রথমত, তামিমের দলে বাকি সদস্যরা কোন স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করছে, তামিম যদি সেই স্ট্রাইক রেট অনুসরণ করতে চান, তাহলে হারতে থাকা একটা দলকে অধিনায়ক হিসেবে তিনি জেতাবেন কিভাবে? এটা তো ওয়ানডে ক্রিকেট নয়, টেস্ট ক্রিকেট নয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অনেক ক্ষেত্রেই ‘ওয়ান ম্যান শো’। একাই একজন ব্যাটসম্যান বা একজন বোলার এক স্পেলে ম্যাচের রঙ পালটে দিয়েছেন, এমন উদাহরণ টি-টোয়েন্টিতে আছে অনেক।

দ্বিতীয়ত তামিম ম্যাচ পরিস্থিতির দায় দিয়েছেন। দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন ম্যাচের পরিস্থিতি অনুসারে কম স্ট্রাইক রেটে ৩০/৪০ রান গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তা অবশ্য পারে। কিন্তু তামিম কি আসলেই যেভাবে ৩০/৪০ করেছিলেন, তা ম্যাচ পরিস্থিতিতে জরুরী ছিল? তামিম ইকবালের যুক্তি কি নিজের ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে ঠিক?

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ফরচুন বরিশালের ম্যাচগুলির দিকে ফিরে দেখা যাক । প্রথম ম্যাচে খুলনার সাথে তামিম করেন ১৫ বলে ১৫ রান, তাঁর দল সেই ম্যাচটি হেরে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে তামিম খেলেন ৬১ বলে ৭৭ রানের ইনিংস, তাঁর দল ম্যাচটি জিতে। তৃতীয় ম্যাচে তামিম করেন ৩২ বলে ৩২ রান, তাঁর দল ম্যাচটি হেরে যায়। চতুর্থ ম্যাচে তামিম খেলেন ৩১ বলে ৩১ রানের ইনিংস, তাঁর দল ম্যাচটি হেরে যায়। পঞ্চম ম্যাচে তামিম খেলেন ২১ বলে ৩২ রানের ইনিংস, তাঁর দল ম্যাচটি হেরে যায়।

খুব সহজ একটি প্রশ্ন এখানে দাঁড় করানো যায়। ওপেনিংয়ে নামা তামিমের ৫ ম্যাচের ৩ টাতেই এই কম স্ট্রাইক রেটে ৩০ এর আশেপাশে রান ঠিক কিভাবে ম্যাচ পরিস্থিতি বিচারে সঠিক ছিল? যেখানে সবগুলি ম্যাচে ফরচুন বরিশাল ব্যাট করতে নেমেছে প্রথমে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা একটা দলের কোন একজন ওপেনার কম স্ট্রাইক রেটে কম রানে আউট হয়ে গেলে সেটাকে ম্যাচ পরিস্থিতির অজুহাত দিলে ব্যাপারটা কি একটু হাস্যকর শোনায় না?

তামিম ইকবালের মত এমন হাস্যকর যুক্তি অবশ্য মুশফিকুর রহিম কমই দেন আজকাল। তবে মুশফিকেরও আছে আবেগজনিত সমস্যা। দলে যত ভাল উইকেট কিপারই থাকুক না কেন, সেই উইকেট কিপারলে ভবিষ্যতের জন্যে যত ভালভাবেই তৈরি করা দরকারী হোক না কেন, গ্লাভস হাতে মুশফিক মাঠে নামবেনই। মুশফিকের এই উইকেট কিপিংয়ের প্রতি আবেগ অবশ্য পুরোনো কেচ্ছা। বারবার বলা হলেও, গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে দাঁড়াবেনই । আর শুধু দাঁড়ানোই না, গ্লাভস হাতে একের পর এক ভুলও তিনি করবেনই। এই টুর্নামেন্টেও উইকেট কিপিংয়ে মুশফিককে ছোটখাটো ভুল করতে দেখা গেছে নানা সময়ে।

উইকেট কিপার মুশফিককে নিয়ে যত আক্ষেপই থাকুক না কেন, ব্যাটসম্যান মুশফিককে নিয়ে আক্ষেপটা এতটা বেশি নয়। চলমান টুর্নামেন্টে ৫২.৭৫ এভারেজে ২১১ রান এই ব্যাপারটাই প্রমাণ করে জোরেশোরেই। তবে, এই পরিসংখ্যানও কিন্তু আমাদের একটা বার্তা দিচ্ছেনা- টুর্নামেন্টটা চলছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

টি-২০ ফরম্যাটে প্রান্ত বদলে স্বচ্ছন্দ হওয়াটা আসলে খুবই জরুরী। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে মুশফিক কেন জানি সেটা ঠিক করতে পারছেন না। তিনি হয়তো রান পাচ্ছেন, কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিংটা যেমন করতে হয়, মুশফিক তেমনটা করতে পারছেন না এই টুর্নামেন্টে একদমই।

আপনি যদি খুলনার সাথে ঢাকার ম্যাচটির দিকে তাকান, মুশফিক করেছিলেন ৩৫ বলে ৩৭ রান। এই ৩৭ রানে আছে ৫ টি চার। তার মানে ৫ বলে তিনি করেছেন ২০ রান, আর বাকি ৩০ বলে করেছেন মাত্র ১৭।

এই যে, সিঙ্গেল বের করা নিয়ে সমস্যা বা অনীহা, এই ব্যাপারটি যে শুধু এই টুর্নামেন্টের সমস্যা তা কিন্তু নয়, এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যার্থতারও একটা মূল কারণ। অথচ, হাতে প্রচুর পিঞ্চ হিট না নিয়েও যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সফল হওয়া যায়, তা তো কেন উইলিয়ামসনই দেখিয়েছেন। উইলিয়ামসনের স্ট্রাটেজিটা কিন্তু কঠিনও নয়। বোলারের বাজে ডেলিভারিতে চার মারতে হবে, ভাল ডেলিভারিগুলিতে বলকে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল ডাবলস নিতে হবে। ছয় বলে একটাতে চার আর বাকি পাঁচ বলে পাঁচ রান নিতে পারলে ছয় বলে রান দাঁড়ায় নয়! সহজ এই ব্যাপারটি বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের শিখতে হবে খুব দ্রুতই।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্যেও ভাল যাচ্ছেনা টুর্নামেন্টটা। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মাহমুদউল্লাহ করেছেন যথাক্রমে ১৬ বলে ১৭, ১৩ বলে ৭, ২ বলে ১, ৪৭ বলে ৪৫ , ১৪ বলে ২৪, ১৯ বলে ৩১!

এখন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সক্ষমতা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি লিগেও তিনি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। মাহমুদুল্লাহর এই বেশিরভাগ ম্যাচে টি-২০ ব্যার্থতা তাই আমাদের হতাশ করে সবচাইতে বেশি। এমনও নয়, লকডাউনের পর হুট করেই খেলতে নেমেছেন তিনি। এর আগে একটা আস্ত ওয়ানডে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে।

ঘরোয়া একটা টুর্নামেন্টে রান না করায় মাহমুদউল্লাহর সমালোচনা করা ঠিক হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নও আপনি করতে পারেন। এই প্রশ্নটার উত্তরে একটা ছোট্ট পালটা প্রশ্ন রাখা যাক তাহলে, টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে যদি মেজাজটা টি-টোয়েন্টি এরই না হয় বেশিরভাগ ম্যাচে, তাহলে কি সমালোচনা হবেনা?

এ তো গেল, ব্যাটসম্যান রিয়াদের কেচ্ছা। অধিনায়ক রিয়াদ কেমন করছেন টুর্নামেন্টে? খেলতে নামার আগে প্রতিপক্ষকে কেস স্টাডি করে নামতে হয়। নামতে হয় নিজের দলের প্রতিটা সদস্যকে জেনেশুনেই। আদতে জেমকন খুলনাকে দেখে তা মনে হচ্ছেনা।

জেমকন খুলনা তাদের দুই ওপেনার হিসেবে প্রথমদিকে বেছে নিল আনামুল আর কায়েসকে। তিনে নামছেন সাকিব, চারে রিয়াদ, পাঁচে নামছেন জহুরুল!

জহুরুল? হ্যা জহুরুল! জহুরুল ইসলাম অমির একমাত্র স্ট্রং জোন কাউ কর্নার । গত বিপিএলেও তিনি যে রানগুলো করে আলোচনায় এসেছিলেন, তার বেশিরভাগই ছিল কাউ কর্নারে উড়িয়ে মারা শটে। যে বলগুলো ব্যাটে লেগেছে সেগুলো হাওয়ায় ভেসেছে, যেগুলো লাগেনি, আউট হয়েছেন। মোটাদাগে জহুরুলের প্লেয়িং স্টাইল এটাই । এমন একজনকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে নামিয়ে দেওয়া কোনভাবেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হতে পারেনা। কিন্তু জেমকন খুলনা সেটাই করেছে।

জহুরুলকে খেলাতে হলে তাই খেলাতে হত ওপেনার হিসেবে, বিজয় কায়েসের জন্যে তা সম্ভব না হলে মিডল অর্ডার অন্তত জহুরুলের জায়গা নয়, পাঁচ নম্বর তো নয়ই!

এই ভুলটা অবশ্য শেষের দিকে রিয়াদের খুলনা শুধরে নিয়েছে। জহুরুলকে টপ অর্ডারে পাঠানো হচ্ছে।

এর মধ্যে আবার রিয়াদ ব্যাট করতে নেমেছেন চারে বা পাঁচে। আচ্ছা, ন্যাশনাল টিমে জাতীয় দলে রিয়াদ চাইলেই টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করেন না। বোঝা যাচ্ছে, ম্যাচ জেতাতে তুলির শেষ আঁচড় দিতে তিনি নেমে পড়েন ৬-এ! তিনি যদি ফিনিশারই হবেন, জাতীয় দলে তাঁর রোল যদি হবে এটাই, তাহলে ডমেস্টিকে কেন তিনি চারে বা পাঁচে নামছেন? ডমেস্টিক দিয়েই তো আমরা ন্যাশনাল টিমের জন্যে প্রস্তুত হই, নাকি?

সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং ব্যার্থতার একটা কারণ অবশ্য অনুমেয়ই। তিনি তো একটা বছর ক্রিকেট থেকে দূরেই ছিলেন। এক বছর পর ক্রিকেটে ফিরে এসে হুট করেই চোখ ধাঁধানো পারফর্ম্যান্স করা আসলে কারো পক্ষে সম্ভব না। সম্ভব হয়নি সাকিব আল হাসানের পক্ষেও। তবুও, এই রান আর পরিসংখ্যানের বাইরেও সাকিবের ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট আড়ষ্টতা চোখে পড়েছে। উইকেটে নড়াচড়াতেও তিনি যে খুন স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন এমন বলা যাবেনা। এখানেও একই কথা অবশ্য চাইলে বলা যায়, এক বছর পর ক্রিকেটে ফিরেই স্বচ্ছন্দ্য হওয়া তো আসলে খুবই কঠিন। তবুও এই একটা ব্যাপার আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট বার্তা কিন্তু ঠিকই দেয়। সেই বার্তাটি বিশ্বকাপের।

বিশ্বকাপে সাকিব ছিলেন অতুলনীয়। ক্রিকেট রেকর্ড দুমড়ে মুচড়ে নিজের ব্যাটিং স্বত্তাটাকে অন্য একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন তিনি। এর মূল কারণ ছিল সাকিবের ফিটনেস। সাকিব তো কখনই ব্যাকরণিক ব্যাটসম্যান নন, তাকে রান তাই করতে হয়েছে ব্যাকরণ ছাড়াই। সেজন্যে, সাকিবকে জোর দিতে হয়েছিল ফিটনেসের উপর।

আর এখন, এই টুর্নামেন্টে যখন নিজের ফিটনেস হারিয়ে ফেলেছেন তিনি, ব্যাটিংয়ে রান পাচ্ছেন না, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। এই একটা ব্যাপারই আমাদের যৌক্তিক উপসংহারে পৌছাতে পারে, সাকিবের অমন অতিমানব হয়ে ওঠার মূল রহস্য ছিল ফিটনেস, আর এই ব্যার্থতারও মূল কারণ ফিটনেস!

চার সিনিয়র নিয়ে অনেক আলোচনা করে ফেললাম। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে চার সিনিয়রের ব্যার্থতাই আসলে ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করেছে বেশ। সামনে থেকে এই টুর্নামেন্টে খেলতে নামবেন আরেকজন সিনিয়র, মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেখার বিষয়, মাশরাফি চার সিনিয়রকে অনুসরণ করবেন নাকি নিজেই ছাপিয়ে যাবেন এই চারজনকে! অবশ্য আমাদের মনে রাখতে হবে, এই মুহুর্তে মাশরাফির হারানোর কিছু নেই। কিন্তু তবুও, এই লাইনটার পর আমরা যতই বলিনা কেন মাশরাফি খেলতে নামবেন মনের আনন্দে, দিনশেষে এটা তো একটা প্রতিযোগিতামূলক খেলাই!

প্রিয় পাঠক, একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্টের ব্যার্থতা নিয়ে এতজন সিনিয়র খেলোয়াড়কে বিচার করা উচিত হবেনা এমনটা আপনি ভাবতে পারেন। এই ভাবনার উল্টোপিঠে আমি জবাব দিচ্ছিনা। আসলেই তো, সামান্যই তো একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট।

কিন্তু, আমি শুরুতে বলা জো রুটের ডকুমেন্টারির একটা লাইন বলে আজকের এই আলোচনাটা শেষ করে ফেলবো – ‘There are no weekends in sports, no excuses. Every day is a chance to move forward, to overtake the enemy. But the enemy is not India, Australia, South Africa or the West Indies, its you!’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...