ছয় বলে ছয় ছক্কা! শুরুটা হয়েছিল স্যার গ্যারি সোবার্সের হাত ধরে। এরপর রবি শাস্ত্রীও এক ওভারের সবকটি বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। কালক্রমে ছয় বলে ছয় ছক্কার কীর্তিতে সেই সংখ্যাটা এখন ঠেকেছে ৯-এ।
তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় ছক্কার ঘটনা রয়েছে পাঁচ কি ছয়টা। ১৯৬৮ সালে ম্যালকম ন্যাশের এক ওভারে ছয় ছক্কা মেরে গ্যারি সোবার্স এমন কীর্তির শুরু করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এমন ঘটনার সাক্ষী হয় ২০০৭ সালে।
১৬ মার্চ, ২০০৭। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইতিহাস গড়েছিলেন হার্শেল গিবস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো মেরেছিলেন ছয় বলে ছয় ছক্কা! অভাগা সেই বোলার ছিলেন ড্যান ভ্যান বুঞ্জে।
তবে আজকের গল্পটা হার্শেল গিবসকে নিয়ে না। সেই ২০০৭ সালেরই কথা। হার্শেল গিবসের অমন কীর্তির ছয় মাস না পেরোতেই আবারও ছয় বলে ছয় ছক্কার পুনরাবৃত্তি। এবার সেটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছয় বলে ছয় ছক্কার রেকর্ড গড়লেন ভারতের যুবরাজ সিং!
শুধু ছয় ছক্কাই নয়, যুবরাজের অসাধারণ সেই ইনিংসটি আরেকটি কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে ক্রিকেট বিশ্বে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচেই যুবরাজ গড়েছিলেন সবচেয়ে কম বলে অর্ধ-শতকের রেকর্ড। তার করা মাত্র ১২ বলে ফিফটির সেই রেকর্ডটি আজও টিকে আছে।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপেই টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল যুবরাজের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন নিজের চতুর্থ টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। আগের তিনটি ম্যাচে ব্যাট হাতে খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে উইকেটে এসে করেছিলেন মাত্র ছয় রান।
কিন্তু, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যুবরাজ যেন এসেছিলেন অন্য এক রূপে। ১৭ তম ওভারে উইকেটে এসে দ্বিতীয় বলেই শুরু করেছিলেন চার মেরে। ১৮তম ওভারেও মেরেছিলেন দুটি চার। কিন্তু ১৯তম ওভারে যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তার কোনো ধারণাও ছিল না ক্রিকেটপ্রেমীদের।
ইংল্যান্ডের পক্ষে ১৯তম ওভারে বল করতে এসেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। আগের ওভারে ফ্লিনটফের সাথে তর্কাতর্কিই কিনা তাতিয়ে দিল যুবরাজকে। সেই রাগের ঝালটাই বোধহয় মিটিয়েছিলেন ব্রডের উপর দিয়ে। প্রথম বলটা মিড উইকেটের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেছিলেন মাঠের বাইরে।
দ্বিতীয় বলটি ফ্লিক করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে। তৃতীয় বলটি মেরেছিলেন এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। ছয়! টানা তিন বলে তিন ছয় খেয়ে ব্রড যে কিছুটা ঘাবড়েই গিয়েছিলেন, তা বেশ ভালোই বোঝা গিয়েছিল তাঁর চতুর্থ বলটি দেখে। দিয়েছিলেন ফুলটস। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে আবারও ছয় হাঁকিয়েছিলেন যুবরাজ।
দিশেহারা ব্রডের পঞ্চম বলেও সজোরে ব্যাট চালিয়েছিলেন হাঁটু গেড়ে। এবার মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছয়! ষষ্ঠ বলে ইতিহাসগড়া ছয়টা মেরেছিলেন মিড অনের ওপর দিয়ে। আর এই ছয় দিয়েই পূর্ণ হয়েছিল যুবরাজের অর্ধ-শতক।
যুবরাজ সিংয়ের সেই ছয় বলে ছয় ছক্কার কীর্তির আজ ১৫ বছর পূরণ হলো। যুগ পেরিয়ে ১৫ সংখ্যাটা কম নয়। তবে যুবরাজ সিংয়ের সেই ছয় ছক্কার দৃশ্য এখনো লক্ষ কোটি দর্শকের স্মৃতিতে ভাসমান।
২০০৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে যুবরাজের গড়া সেই রেকর্ডটির পাশে অবশ্য এখন আরেকজন বসেছেন। ২০২১ সালে আকিলা ধনঞ্জয়ের এক ওভারে কাইরেন পোলার্ড মেরেছিলেন ৬ ছক্কা। তাঁর আগে সে ম্যাচেই আবার হ্যাটট্রিক করেছিলেন ধনঞ্জয়া।
হ্যাটট্রিকের পর এমনভাবে ওভারের সবকটি বলে ছক্কা হজম- মিশ্র এক অনুভূতি নিয়েই তাই সেদিন মাঠ ছেড়েছিলেন আকিলা। তবে হ্যাটট্রিকের আনন্দ ছাপিয়ে এই ছয় ছক্কা হজমের মুহূর্তই বোধহয় তাকে বেশি বিষণ্ণ করে তুলেছিল সেদিন। এরপর আরও দু’বার ক্রিকেট দেখেছে এমন দৃশ্য।