সে একটা দারুণ রোমান্টিক সময় ছিল।
তখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কেবল সীমান্তেই ছিল। ক্রিকেটে তাঁরা ‘ভাই ভাই’ ছিল। হাতে হাত রেখে ময়দানে লড়তো দল দুটো। টরোন্টো থেকে শারজাহতে বছরে বছরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, তিন দলীয় টুর্নামেন্ট খেলতো। ওয়াসিম-শচীনদের লড়াই দেখার জন্য সারাটা বছর অপেক্ষায় থাকতো ক্রিকেট দুনিয়া।
তখনও দুনিয়া এতো নিষ্ঠুর হয়ে ওঠেনি।
তেমনই একটা সময়ে কানাডার টরেন্টোতে এক দুর্দান্ত একক প্রদর্শনীর ডালা সাজিয়ে বসেছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে বসে যেভাবে সব জায়গায় ছড়ি ঘুরিয়েছেন, সেদিন তেমন করে মাঠে করেছিলেন এক অবিশ্বাস্য দাদাগিরি।
হ্যাঁ, ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার দিন ছিল এই ১৮ সেপ্টেম্বর; ১৯৯৭ সাল।
টরেন্টোতে সেই সাহারা কাপ ছিলো সৌরভের ব্যাটে-বলে নিজেকে নতুন করে বিশ্বের সামনে দেখিয়ে দেওয়ার এক মঞ্চ। এক ম্যাচে ব্যাটে, এক ম্যাচে বলে জ্বলে উঠছিলেন। প্রথম ম্যাচে ১৭ রান করার পাশাপাশি নিয়েছিলেন ২ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেট আর ৩২ রান। তৃতীয় পরিত্যক্ত ম্যাচে ২ উইকেট।
পঞ্চম ম্যাচে ৭৫ রান ও ২ উইকেট। ষষ্ঠ ম্যাচে ৯৬ রান ও ২ উইকেট।
খেয়াল করে দেখবেন, আমরা ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত চতুর্থ ম্যাচটার পরিসংখ্যান বলিনি। কিন্তু এটাই বলতে বসেছি আজ। এই ম্যাচেই বোলার সৌরভ তার ক্যারিয়ারের সেরা কীর্তিটা করেন। এই ম্যাচে তিনি নিয়েছিলেন ১৬ রানে ৫ উইকেট। ম্যাচে ৫ উইকেট সৌরভ আরও একবার পেয়েছেন। ২০০০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে উইকেট নিয়েছিলেন। সে ম্যাচে খরচ করেছিলেন ৩৪ রান।
রান ও প্রতিপক্ষ বিবেচনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পারফরম্যান্সটা নিশ্চয়ই পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্সের ধারেকাছে আসবে না। কারণ, সেটা ছিলো পরিষ্কার দাদাগিরি।
সেদিন আগে ব্যাট করা ভারত মোহাম্মদ আজাহারউদ্দিনের ৬৭ রানে ভর করে ৬ উইকেটে মাত্র ১৮২ রান করতে পেরেছিলো। সৌরভ মাত্র ২ রান করেছিলেন। আর সে জন্যই কি না, বল হাতে সেরাটা দেওয়ার জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন।
জবাবে পাকিস্তানের শুরুটা খুব খারাপ ছিলো না। শহীদ আফ্রিদি ৩৮ বলে ৪৪ রান করেছিলেন। কুরুভিল্লা ও হরভজন প্রথম ৩ উইকেট তুলে নেন। এরপর মঞ্চে আসেন সৌরভ। একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান ইজাজ আহমেদ, সেলিম মালিক, হাসান রাজা ও মইন খানকে। আর শেষ দিকে এসে আকিব জাভেদের উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট নিশ্চিত করেন।
তার এই দূরন্ত বোলিংয়েই পাকিস্তানকে আরও একটা ম্যাচে হারিয়ে দেয় ভারত। ম্যাচশেষে সৌরভের বোলিং: ১০-৩-১৬-৫!
পুরো সিরিজ জুড়ে এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে আরও একটা রেকর্ড করে ফেলেন সৌরভ। এক দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সেরা বোলার ও সেরা ব্যাটসম্যান, দুটো স্থানই দখল করেন তিনি। সৌরভ এই সিরিজে ২২২ রান করেন; আর কেউ দুই শ রানও করতে পারেননি। সৌরভ এই সিরিজে ১৫টা উইকেট নেন; আর কেউ ১০ উইকেট নিতে পারেননি।
এক সিরিজে সেরা বোলার ও সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার কীর্তি পরে সাকিব আল হাসান করে দেখিয়েছেন। তার আগ পর্যন্ত সৌরভের এই কাজটা অদ্বিতীয় ছিলো। বলা যায়, অদ্বিতীয় দাদাগিরি।