চাকায় আঁটকে থাকা প্রোটিয়া ক্রিকেট

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের গন্তব্যতা কোথায়? কোথায় গিয়ে থামবে প্রোটিয়া ক্রিকেট। গত কয়েকবছর ধরেই ক্রিকেট পাড়ায় সবচেয়ে বেশিবার উঠা প্রশ্ন এটি। প্রোটিয়া ক্রিকেটের সেই উত্তাপ কোথায় যেন হারিয়ে গেল। অবশ্য দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসেই যে অনেক দাগ। তবে এবার মাঠেও সময়টা ভালো যাচ্ছেনা দক্ষিণ আফ্রিকার।

আর যত যাইহোক, দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরের মাঠগুলোকে একেকটা দুর্গ ভাবা হয়। সেখানে গিয়ে বাইরের কোণ দেশের টেস্ট জয় করারটা মুখের কথা নয়। আর উপমহাদেশের দেশগুলোর জন্য তো এটা বেশ কঠিন কাজই। সেই কাজটাই করে দেখাল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের ঘরের মাঠে টেস্ট ম্যাচ হারলো ভারতের কাছে।

এছাড়া গত কয়েকবছরেও বড় কোন সাফল্য নেই। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও শেষ করেছিল সাত নম্বর দল হিসেবে। শুধু এগিয়েছিল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের থেকে। তবে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য ভালো ক্রিকেট খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সুপার টুয়েলভের চারটি ম্যাচ জিতেছিল তাঁরা। যদিও খেলা হয়নি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল।

তবে সবমিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটটা কোথায় যেনো থমকে আছে। বর্ণবাদ দেশটির ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকেই জড়িয়ে আছে। শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এই ইস্যুতে ভুগতে হয়েছে দলটাকে। এক ম্যাচে মাঠেই নামেননি কুইন্টন ডি কক। এখন আবার টেস্ট ক্রিকেটকেও বিদায় জানিয়েছেন পরিবারকে বাড়তি সময় দেয়ার জন্যে। যদিও তাঁর এই অবসর নিয়ে আছে আরো নানারকম আলোচনা।

এছাড়া আইপিএল বা ক্লাব ক্রিকেট নিয়েও ভুগছে দেশটি। দেশের ম্যাচ রেখে আইপিএলের মত ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো খেলাটাই যেনো স্বাভাবিক হয়ে উঠছে প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের জন্য। এছাড়া ক্লাব ক্রিকেট নিয়েও আছে নানরকম জটিলতা। ফলে প্রভাব পড়ছে মাঠের ক্রিকেটে। নতুন ক্রিকেটারদের উপরও এর প্রভাব পড়েছে।

এছাড়া বর্ণবাদের জন্যেও অনেক ক্রিকেটারকেই হারিয়েছে দেশটি। অনেকেই ক্রিকেট খেলেছেন অন্য কোন দেশের হয়ে। এমনকি কেভিন পিটারসনের মত ক্রিকেটারও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে পারি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। এছাড়া কোটার কারণেও অনেক সময় দলে যোগ্য ক্রিকেটার জায়গা পেতেন না। বলাবলি হয় এখনো দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন ক্রিকেটারকে প্রথমে বিচার করা হয় তাঁর গায়ের রঙ দিয়ে।

সবমিলিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে একটা হযবরল অবস্থা। মাঝে তো বর্ণবাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বন্ধ হবার জন্য চাপ এসেছিল। এছাড়া বোর্ডের সাথেও ক্রিকেটারদের দূরত্ব স্পষ্ট। ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারর্সের জন্য যে খেলা শুরুর আগে ক্রিকেটারদের হাটু গেরে বসতে হবে সেটা তো আগে থেকেই জানা।

তবুও বিশ্বকাপের মাঝে হঠাত এক ম্যাচে বেঁকে বসলেন কুইন্টন ডি কক। এরপর আবার ঠিকই ম্যাচ খেলেছেন। ফলে বোর্ডের সাথে তাঁর যোগাযোগটা যে কতটা দুর্বল সেটাও বোঝা যাচ্ছে। তাই এমন অবস্থায় মাঠের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘুরে দাড়ানোটাও বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও আশা করতেই হয় বর্ণবাদকে ভুলে মাঠের ক্রিকেটেই প্রোটিয়ারা উত্তাপ ছড়াক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link