সেরা হয়ে শুরু তাঁদের

বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে আলো ছড়ানোর রেকর্ড বেশ পুরনো। অভিষেকে দুর্দান্ত পারফর্ম করে হারিয়ে যাবার তালিকাটাও বেশ লম্বা। আইরিশদের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই ৯২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলা তাওহীদ হৃদয় কতদূর যাবেন সে প্রশ্নটা তোলা রইলো ভবিষ্যতের জন্যই। আসুন দেখে নেয়া যাক বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকেই ম্যাচসেরার পুরষ্কার জেতা চার ক্রিকেটারকে। 

  • সোহাগ গাজী

টেস্ট অভিষেকেই বিশ্বরেকর্ড গড়ার পর একদিনের ক্রিকেটে অভিষেকের জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সোহাগ গাজীকে। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওডিয়াইতেই একাদশে সুযোগ পান তিনি। সাদা বলের ক্রিকেটেও অভিষেক ম্যাচে সমান উজ্জ্বল ছিলেন এই তারকা, ২৯ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জেতেন তিনি। 

ক্রিস গেইলকে একপ্রকার নিজের ‘বানি’ বানিয়ে ফেলেছিলেন সোহাগ। গেইল ব্যাটিংয়ে থাকলে সোহাগকে বোলিং প্রান্তে নিয়ে আসাটা যেন ছিল বাধ্যতামূলক।

এই অফস্পিনারও অধিনায়কের সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন, ওডিয়াই ক্যারিয়ারে তাঁর প্রথম উইকেটটাই যে গেইলের। এরপর একে একে সাজঘরে ফেরত পাঠান মারলন স্যামুয়েলস, ডেভন থমাস এবং সুনীল নারাইনকে। তাঁর দারুণ বোলিংয়ের সুবাদেই সেদিন সহজে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। 

  • তাইজুল ইসলাম

মূলত লাল বলের ক্রিকেটে নিয়মিত হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে অনন্য এক কৃতিত্ব আছে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। প্রথম বোলার হিসেবে ওডিয়াই অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করেন এই তারকা। মাত্র ১১ রান দিয়ে চার উইকেট নেয়া তাইজুলই সেদিন জিতেছিলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

আগের চার ম্যাচই জিতে নেয়ায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল কেবলই নিয়মরক্ষার। সফরকারীরা জয় দিয়ে শেষ করতে চাইলেও স্বাগতিকদের মাথায় ছিল হোয়াইটওয়াশ করার মন্ত্রণা। আগে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে বড় সংগ্রহের দিকে আগাচ্ছিল, কিন্তু ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে যায় তাইজুল বোলিংয়ে আসলে।

২৭তম ওভারের শেষ বলে তিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করে শুরু, এরপর ২৯ তম ওভারের প্রথম দুই বলে ফেরান জন নিয়াম্বু এবং তেন্ডাই চাতারাকে। মূহুর্তে পথ হারিয়ে ১২৮ রানে অল আউট জিম্বাবুয়ে, ম্যাচ জিততে বিশেষ বেগ পোহাতে হয়নি বাংলাদেশকে। 

  • মুস্তাফিজুর রহমান

টি টোয়েন্টি অভিষেকে আলো ছড়ালেও মুস্তাফিজুর রহমান নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন ভারতের বিপক্ষে ওডিয়াই অভিষেকের জন্য। প্রথম স্পেলটা ভালো না হলেও দ্বিতীয় স্পেলে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়ে দলকে এনে দিয়েছিলেন অবিস্মরণীয় এক জয়। ফলশ্রুতিতে অভিষেকেই ম্যাচসেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন এই বাঁহাতি পেসারই। 

অথচ মুস্তাফিজের জন্য অভিষেক ম্যাচটা হয়ে রইবে ঘটনাবহুল! রোহিত শর্মা এবং আজিংকা রাহানেকে আউট করার পর ধোনির সাথে ধাক্কায় মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল বেশ কিছুক্ষণ।

মাঠে ফেরার পর অবশ্য ফিরে তাকাতে হয়নি, পাঁচ বলের মাঝে তুলে নেন তিন উইকেট। তাঁর ৫০ রানে পাঁচ উইকেট শিকারের সুবাদে ৭৯ রানের ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। এমন পারফরম্যান্সের পর ম্যান অব দ্য পারফরম্যান্সের পুরষ্কারটা অনুমিতভাবেই উঠেছিল মুস্তাফিজের গলায়। 

  • তাওহীদ হৃদয়

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্বপ্নের মতো এক অভিষেক ম্যাচ কাটিয়েছেন তরুণ ব্যাটসম্যান তাওহীদ হৃদয়। মাত্র আট রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করলেও তাঁর মারকুটে ব্যাটিংয়েই ম্যাচে ফেরে স্বাগতিকরা। 

হৃদয় যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন ৮১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপাকে স্বাগতিকরা। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে পাল্টা আক্রমণে আইরিশ বোলারদের রীতিমতো ছন্নছাড়া করে দেন এই তরুণ, সাকিব আল হাসানকে সাথে নিয়ে গড়েন ১৩৫ রানের জুটি।

গ্রাহাম হুমের বলে আউট হবার আগে আট চার এবং দুই ছক্কায় হৃদয় খেলেন ৮৫ বলে ৯২ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। ওডিয়াই অভিষেকে এটাই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সাকিব আল হাসান কিংবা এবাদত হোসেনকে ছাপিয়ে ম্যাচসেরার পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন হৃদয়। মজার ব্যাপার হল, এই তালিকায় থাকা একমাত্র ব্যাটার তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link