পিএসএল, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও একজন ফাওয়াদ রানা

আমার কাছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মালিকদের মধ্যে বরাবরই সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগা মনে হয়েছে এই ভদ্রলোককে। ফ্র্যাঞ্চাইজ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশেষ করে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) নিয়মিত দেখে থাকলে তাঁকে না চেনার কোনো কারণ নেই ।তারপরেও যাঁরা চেনেন না তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ভদ্রলোকের নাম ফাওয়াদ নাঈম রানা। তিনি পিএসএলের দল লাহোর কালান্দার্সের কর্ণধার।

আমার কাছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মালিকদের মধ্যে বরাবরই সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগা মনে হয়েছে এই ভদ্রলোককে। ফ্র্যাঞ্চাইজ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশেষ করে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) নিয়মিত দেখে থাকলে তাঁকে না চেনার কোনো কারণ নেই। তারপরেও যাঁরা চেনেন না তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ভদ্রলোকের নাম ফাওয়াদ নাঈম রানা। তিনি পিএসএলের দল লাহোর কালান্দার্সের কর্ণধার।

পিএসএলের পথচলা ২০১৬ থেকে। আজ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে টুর্নামেন্টটির সাতটি আসর যার মধ্যে চারটি আসরই পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে শেষ করেছে লাহোর। এতটুকু বলে অবশ্য পুরো প্রেক্ষাপটটাকে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। বলা ভালো, পিএসএলের প্রথম চার আসরে টানা পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে যাত্রা শেষ করেছে ফাওয়াদ রানার দল।

আজ ওই শুরুর চার আসরের কথা খুব স্মৃতিতে ভাসছে। ইদানীং ফাওয়াদ রানাকে নিয়মিত মাঠে দেখা না গেলেও ওই সময়টাতে প্রতি ম্যাচে মাঠে উপস্থিত থাকতেন তিনি। বলাই বাহুল্য, পুরো চারটা আসরের সিংহভাগ সময়ই গোমড়ামুখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে।

টিভিতে দেখে ব্যক্তিগতভাবে ফাওয়াদ রানাকে ক্রিকেট-অন্তঃপ্রাণ মানুষই মনে হয়েছে আমার। তিনি বেশ আবেগি। যে কারণে প্রতি আসরে হাতেগোনা দুই-তিনটা জেতা ম্যাচের প্রত্যেকটাতেই রাজ্যের আনন্দ খেলা করে যেত তাঁর মুখমণ্ডলে। একের পর এক গোহারা হেরেও ম্যাচের পর ম্যাচে দ্বিগুণ উদ্যমে মাঠে আসতে দেখতাম তাঁকে। তিনি মানুষ হিসেবেও বেশ আশাবাদী। সেজন্য এত এত হারের পরেও প্রতিটা সাক্ষাৎকারেই ইতিবাচক থাকতেন এবং আশার বাণী শোনাতেন।

ব্যাপারটা এমন না যে ফাওয়াদ রানা ভালো ভালো খেলোয়াড় কিনতে পারতেন না বা ভালো কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই দল গুছিয়ে বসতেন। তাঁর দলের ব্যর্থতার ওই চার বছরে গেইল, ম্যাককালাম, ডিজে ব্রাভো, ভিলিয়ার্স, হাফিজদের মতো তারকারাও খেলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

ওই সময়টায় কালান্দারদের ভাগ্যও যে খুব সুপ্রসন্ন ছিল এমনটা বলা যাবে না। তখন বেশ কয়েকটা ম্যাচ শেষ ওভারে গিয়ে হাতছাড়া করেন তাঁরা। আর এটা যেন একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গিয়েছিল যে মাঠে নামলেই লাহোর হারবে এবং প্রতি ম্যাচ শেষে পর্দায় ফাওয়াদ রানার শুকনো মুখখানা ভেসে উঠবে। সে সময়টায় তাঁর মুখের দিকে তাকানোই যেত না। বেশ মায়াই লাগত। আসলে শুরু থেকে পিএসএলকে যাঁরা নিয়মিত অনুসরণ করে আসছেন তাঁরা আমার কথাগুলা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।

অবশেষে ফাওয়াদ রানার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে ২০২০ সালে পিএসএলের পঞ্চম আসরে এসে। সর্বশেষ  চার আসরের সবচেয়ে ব্যর্থ দলটাই কি না সে বার ফাইনাল খেলে বসে। যদিও এখানেও ভাগ্যটা সহায় হয়নি। করাচির সাথে একটা একপেশে ফাইনালই দর্শকদের উপহার দেয় লাহোর।

আজ হঠাৎ করে ফাওয়াদ রানাকে মনে পড়া বা তাঁকে নিয়ে লিখতে বসার কারণটা বোধ হয় না বললেও চলে। তারপরেও কারো কারো জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, কিছুক্ষণ আগেই পিএসএলে নিজেদের প্রথম শিরোপাটা বাগিয়ে নিল লাহোর কালান্দার্স। হ্যাঁ, প্রথম চার আসরে সবার নিচে অবস্থান করা সেই দলটাই অবশেষে অধরা শিরোপার দেখা পেল।

শিরোপার দেখা পেল সেই ভদ্রলোক যাঁকে টানা চার আসরের প্রায় প্রত্যেকটি দিন মন খারাপ করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল।
ফাওয়াদ রানার জন্য বেশ ভালো লাগছে। খুব সম্ভবত তিনি মাঠে নেই। এমন দিনে তাঁকে মাঠে দেখতে পারলে আরও ভালো লাগত। সবসময় তো তাঁর গোমড়া মুখখানাই দেখে গেলাম। এই রাতে নিশ্চয়ই চওড়া হাসির ফাওয়াদ রানাকেও দেখতে পেতাম!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...