‘ক্যারি দ্যা ব্যাট’ করেও হতাশাই হলো সঙ্গী। বিষণ্ণ চিত্তে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্টিভেন স্মিথকে। চারদিনের পরিশ্রম যেন এক লহমায় হয়ে গেল পণ্ড। স্মিথের বহু চেষ্টার শেষটায় উল্লাসে ভেসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অথচ চিত্রটা ভিন্ন হলেও হতে পারত। অস্ট্রেলিয়া পেতে পারত এক শ্বাসরুদ্ধকর জয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়াকে বেশ ধুঁকতেই হয়েছে। ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণ যেন গ্যাবায় তুলেছে ঝড়। সে ঝড়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৪ বছরের এক তরুণ। শ্যামার জোসেফের দারুণ পারফরমেন্স আড়াল করে দিল স্মিথের শত চেষ্টা।
ডেভিড ওয়ার্নার ছেড়ছেন টেস্ট ক্রিকেট। বেশ হাস্যজ্জ্বল ভঙ্গিমায়, স্টিভেন স্মিথ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাদা পোশাকে ওপেনিংয়ের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বটা হাসির ছলে নিলেও, তিনি যে একেবারে পুরোদস্তুর মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন, সে প্রমাণ মিলেছে ব্রিসবেন টেস্টে।
চতুর্থ ইনিংসে ২০০ রানও যে পাহাড়সম। উইকেটের বৈরিতা, সেই সাথে ক্যারিবীয় আক্রমণে তুখোড় সব পেসার। তাদের বিপক্ষে রান করাটা যে ঝড়ের দিনে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতই। তবে দক্ষ নাবিক হয়ে স্টিভেন স্মিথ পথ দেখাচ্ছিলেন অজিদের। কিন্তু আফসোস, সঙ্গ যে পাননি তিনি।
অবশ্য সে কৃতিত্ব অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের। বিশেষ করে শ্যামার জোসেফের। তিনি একাই যে গুড়িয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডার। তবে শ্যামার জোসেফ, কিমার রোচ ও আলজারি জোসেফরা দমাতে পারেননি স্মিথকে। তিনি থেকে গেছেন অপরাজিত।
১৪৬টি বল তিনি খেলেছেন। তাতে রান করেছেন ৯১টি। চেষ্টার কোন কমতি রাখেননি স্মিথ। ক্যামেরুন গ্রিনের সাথে ৭১ রানের জুটি গড়েছেন। নাথান লিঁও-র বিদায়ের পর হাত খুলে শটও চালিয়েছেন। সিরিজ জয় সর্বোপরি ম্যাচ জয়ের সম্ভাব্য সব কিছুই করেছেন স্মিথ। তবে শেষ অবধি তা আর কাজে লাগেনি। স্মিথের প্রচেষ্টায় ধুলো মিশিয়ে জয়োল্লাস করেছে ক্যারিবীয়রা।
তবে স্মিথ একটা বার্তা অবশ্য দিয়ে রাখলেন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং উদ্বোধন নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোন কারণ নেই। ডেভিড ওয়ার্নারের শূন্যস্থানটা বেশ ভালভাবেই পূরণ করতে পারছেন তিনি। সকলের ব্যর্থতার দিনেও নিজের কাজটা ভালভাবেই করে গেছেন স্মিথ। তবে আক্ষেপটা বাড়িয়েছেন বটে।
নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম হাফ সেঞ্চুরিকে যে সেঞ্চুরিতে রুপান্তরিত করতে পারেননি। অপরপ্রান্ত থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে দেখেছেন সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিল। শেষ ব্যাটার হিসেবে জশ হ্যাজেলউড আউট হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থামে ২০৭ রানে। মাত্র ৯ রান দূরে ছিল অস্ট্রেলিয়ার জয়।
একই দূরত্বে থেমে যেতে হয়েছে স্মিথকেও। তার ৩৩ তম টেস্ট সেঞ্চুরির জন্যও যে সেই একই দূরত্ব পাড়ি দিতে হত। সেটা এ দফা করা হয়ে ওঠেনি স্মিথের। তবে এখানেই নিশ্চয়ই তিনিও টেনে নিচ্ছেন না সমাপ্তি। তিনি বরং নতুন দায়িত্বটায় আরেকটু বেশি আস্থাভাজন হওয়ার জ্বালানি খরিদ করলেন।