শৈলজা সুন্দরের নিজের বাবার ‘ইনট্যুইশন’ এর উপর তেমন আস্থা নেই। তাই যখন তাঁর বাবা এমএস সুন্দর গত মাসে ঘোষণা করেছিলেন তার ছেলে এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করবে তখন মা ও মেয়ে কেউ বিশ্বাস করেনি, এমনকি এই টেস্টে অভিষেক করে নায়ক বনে যাওয়া ওয়াশিংটন সুন্দরও নয় যখন দুই সপ্তাহ আগে বাবার কাছ থেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা সহ এই বার্তা বাবার কাছে পেয়েছিলেন, ‘তুমি ঘরে ফিরবার আগে অবশ্যই একটি টেস্ট খেলবার সুযোগ পাবে।’
২১ বছর বয়স হলেও গত কয়েক বছরে ভারতীয় সার্কিটে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পরিচিত নাম ব্যাটে-বলে দক্ষতার জন্য। এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরেও সীমিত ওভারের দলে ছিলেন। সীমিত ওভারের সিরিজ শেষে ভারতীয় দলের সাথে রেখে দেওয়া হয়েছিল নেটে নাথান লিওঁর বোলিংয়ের প্রতিলিপি করবার জন্য। যদিও তামিলনাড়ুর শক্তিশালী দলে ২০১৭ এর শেষ থেকেই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কিংবা রঞ্জি ট্রফিতে খেলা হয়নি।
তাই ১৪ তারিখ সন্ধ্যায় যখন পরদিন নিজের অভিষেকের কথা ঘরে ফোন করে জানিয়ে ছিলেন ওয়াশিংটন, তখন অন্তত একজন ছিলেন যিনি ওতোটাও বিস্মিত হননি। তিনি আর কেউ নন, বাবা এমএস সুন্দর। তবে আবেগ কিংবা আনন্দাশ্রু কেউ আটকাতে পারেননি এবং সেটাই স্বাভাবিক। বাবাও নন।
তার দিদি শৈলজা বলছিলেন, ‘আমাদের যখন ও বলেছিল ও টেস্ট দলের ওখানেই থাকবে তখন আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম কারন ওখানে থাকলে ও সিনিয়রদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। কিন্তু আমার বাবা ক্রমাগত বলতেন সুন্দর অন্তত একটি টেস্ট খেলবার সুযোগ পাবেই। জানিনা এটা কিভাবে তিনি বলতেন, তবে আজ দেখুন তা সত্যি হয়েছে।’
সুন্দরের ঘরে শুক্রবার ভোর ৩.১৫ হতেই তৈরি ছিল। কারোর চোখেই ঘুম ছিলনা, কারণ তাঁরা কোনো মুহূর্তই হাতছাড়া করতে চাইছিল না। চায়ের কাপ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন এবং মাহেন্দ্রক্ষণ এলো যখন ওয়াশিংটন, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের হাত থেকে ভারতীয় টেস্ট দলের সম্মানজনক টুপিটি পেলেন।
শৈলজা নিজেও রাজ্য দলে খেলেন। তিনি বললেন, ‘ছোটবেলা হতেই ওয়াশি ক্রিকেটকে ধ্যানজ্ঞান করে এসেছে। আমরা জানতাম ভালো কিছু হবেই। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ভারতের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে যা আমাদের ভাবনার বাইরে ছিল তখন। কিন্তু একজন টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবেও তার নাম উচ্চারিত হবে এটা ওর সব দিনের ইচ্ছা ছিল।’
অভিষেক হলো সুন্দরের তেমনই। নিজের প্রথম উইকেট বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ, তার একসময়ের আইপিএল অধিনায়ককে ফেরালেন। বড় পার্টনারশিপ আটকালেন। এরপর গতকাল ব্যাট হাতে শার্দুল ঠাকুরের সাথে অসাধারণ পার্টনারশিপ গড়ে দলকে অক্সিজেন দিলেন এবং টেস্ট জয়ের স্বপ্নও জাগিয়ে তুলছেন।
বাবা এমএস সুন্দর খুব করে চাইছিলেন, ছেলে যেন অভিষেকেই সেঞ্চুরি পান। তিনি বলেন, ‘ও সেঞ্চুরি পায়নি বলে হতাশ হয়েছি। যখন উইকেটে সিরাজ আসলো তখন ও চার-ছক্কা হাঁকানো দরকার ছিল। ও এটা করতে পারে। পুল করে বড় বড় ছক্কা হাকায় ও। সম্ভবত ও আগে অস্ট্রেলিয়ার লিডটা কমিয়ে আনতে চাচ্ছিল।’
তবে, বাবা জানালেন খুব শিগগিরই বড় ইনিংস আসবে। বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়া থেকে ও রোজ ফোন দেয় কথা বলে। আমি ওরে বলেছি সুযোগ পেলেই বড় স্কোর করতে। ও বলেছে ও পারবে।’
এবার তাহলে সুন্দরের সুন্দর এক সেঞ্চুরির অপেক্ষা করা যাক!