গলির ক্রিকেট নিয়ে বোধহয় আমাদের সবারই কম বেশি কিছু মজার স্মৃতি রয়েছে। এই যেমন ধরেন কোনো বোলার যদি ইনজুরি বা অন্য কোনো কারণে ব্যাট করতে না পারে তাহলে সেই দলের ডানহাতি কোনো ব্যাটসম্যান বাঁ-হাতে ব্যাট করতে নামতো। কিংবা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ডানহাতে ব্যাট করতো। তবে এই বিলাসিতা বোধহয় শুধু গলির ক্রিকেটেই সম্ভব। পেশাদার ক্রিকেটে কোন ডান হাতি ব্যাটসম্যান বাঁ-হাতে ব্যাট করতে নেমে যাবেন তা নিশ্চিই চিন্তাও করা যায় না।
হ্যাঁ, আধুনিক মারকাটারি ক্রিকেটে ডেভিড ওয়ার্নার, গ্ল্যেইন ম্যাক্সওয়েলরা প্রায়ই বল ডেলিভারির আগ মূহুর্তে তাঁদের গ্রিপ পরিবর্তন করেন। কিন্তু পুরো একটা ইনিংস কি কোনো ডানহাতি ব্যাটসম্যান বাঁ-হাতে খেলার সাহস করবেন। সবাইকে অবাক করে এই দুঃসাহসিক কাজটি করেছিলেন ভারতের ইতিহাসের সেরা ব্যাটারদের একজন।
১৯৭০-৮০ সেই সময়ে রঞ্জি ট্রফির সবচেয়ে বড় দল ছিল বোম্বে, এখনকার মুম্বাই। সেই সময়ের বোম্বেকে হারানো যেন এক রূপকথার গল্প। ১৯৭৩ সালে রঞ্জি ট্রফির সেমি ফাইনাল খেলতে কর্ণাটক যায় বোম্বে। চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে মাত্র দুই কদম দূরে হট ফেভারিট দলটি।
বোম্বের সেই দলে ছিল তখনকার ভারতের অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকার। এছাড়াও ছিলেন সুনীল গাভাস্কার, রামনাথ পার্কার, অশোক মানকাড দের মত ক্রিকেটাররা যারা সবাই ভারতে হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলে ফেলেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই বোম্বে কে ১৯৭৩ এর সেমি ফাইনালে হারিয়ে বসে কর্ণাটক। ১৯৮১ সালে আবারো একই স্টেডিয়ামে সেই আসরের সেমি ফাইনালে আবার মুখোমুখি হয় দুই দল। এবার বোম্বের সামনে আসে প্রতিশোধের সুযোগ।
কিন্তু কর্ণাটকের স্পিনিং ট্র্যাকে স্পিনার রঘুরাম ভাট প্রচন্ড ভোগাচ্ছিল। বাঁ-হাতি এই স্পিনারের বিপক্ষে রীতিমত দাড়াতেই পারছিল না বোম্বের ব্যাটাররা। ভাট প্রথম ইনিংসে ১২৩ রান দিয়ে তুলে নেন ৮ উইকেট। তারকা বহুল মুম্বাই দল মাত্র ২৭১ রানেই অল আউট হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসেও দ্রুত ৬ উইকেট হারিয়ে ফেললে মুম্বাই ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়ে যায়। সেই ইনিংসের ভাট ইতোমধ্যে ৪ উইকেট নিয়ে ফেলেন। ডানহাতি ব্যাটারদের উপর চেপে বসেন এই স্পিনার।
সেই সময়েই সাত নাম্বার ব্যাটসম্যান ক্রিজে নেমে এক কাণ্ড করে বসেন। ডানহাতি একজন ব্যাটসম্যান বাঁ-হাতে ব্যাট করতে থাকেন। এর এই ব্যাটসম্যানটি হচ্ছে ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার। ডানহাতি এই গ্রেট সেদিন স্পিনার রঘুরাম ভাটকে সামাল দেয়ার জন্য পুরো ইনিংস ব্যাট করেন বাঁ-হাতে। সেদিনের আনপ্লেয়েবল রঘুরাম ভাটকে বেশ ভালোই সামাল দেন এই ব্যাটসম্যান।
সেই ম্যাচে মুম্বাই দলে মাত্র একজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। তিনি হলেন সুরু নায়েক। নায়েক দুই ইনিংসে যথাক্রমে ০ ও ৯ রান করেন। গাভাস্কার সেদিন বাঁ-হাতে ব্যাট করে করেন ১৮ রান। যিনি এর আগে বা পরে তাঁর জীবদ্দশায় আর কখনো বাঁ-হাতে ব্যাট করেননি।
ভারতের এই ব্যাটসম্যান সেই ম্যাচে ১৩ উইকেট নেয়া ভাটের সাথে একাই বাঁ-হাতে লড়াই করে গেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাতকাতে গাভাস্কার বলেন, ‘এই বয়সে এসে আমি চিন্তাই করতে পারিনা যে এমন একটি ম্যাচে আমি বাঁ-হাতে ব্যাট করেছিলাম। কিন্তু আমি সেটা সত্যিই করেছিলাম। এখন আমার কাছেই ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হয়।’