আড়াল হওয়া রোমাঞ্চকর ইনিংস

আইসিসি ইভেন্টে বরাবারই ভারতের পারফরম্যান্স ভাল। বিশেষ করে আধুনিক যুগের ক্রিকেটে ভারত ফেবারিট হয়েই যেকোনো আসর খেলো। সেখানে চাপের মুখে ভাল খেলেছেন - এমন ব্যাটসম্যানের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। তবে, সব ইনিংস আলোচনার ঝড় তোলে না, সব ইনিংস নিয়ে স্মৃতিচারণা হয় না। আজ সেই ভুলে যাওয়া সব ইনিংসেরই স্মৃতিচারণা করা যাক।

একটা বোলিং স্পেল কিংবা ছোট্ট একটা ব্যাটিং ক্যামিও ঘুরিয়ে দিতে পারে যে কোন ক্রিকেট ম্যাচের মোড়। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে রান আটকে রাখা ও ব্যাট হাতে কার্য্যকর এক ক্যামিও ভুলে যাই। কোন এক শতক কিংবা চার থেকে পাঁচ উইকেটের মাঝে হারিয়ে যায় সেই ছোট্ট কার্য্যকরী অবদান। বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট গুলোতে স্বভাবতই চাপটা একটু বেশি থাকে। সেই চাপের মাঝে পারফরম করা অনেক কঠিন।

আইসিসি ইভেন্টে বরাবারই ভারতের পারফরম্যান্স ভাল। বিশেষ করে আধুনিক যুগের ক্রিকেটে ভারত ফেবারিট হয়েই যেকোনো আসর খেলো। সেখানে চাপের মুখে ভাল খেলেছেন – এমন ব্যাটসম্যানের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। তবে, সব ইনিংস আলোচনার ঝড় তোলে না, সব ইনিংস নিয়ে স্মৃতিচারণা হয় না। আজ সেই ভুলে যাওয়া সব ইনিংসেরই স্মৃতিচারণা করা যাক।

  • সুরেশ রাইনা (ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০১১)

২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নিয়েছিলো ভারত। সেই শিরোপা হয়ত অধোরা থেকে যেতো। কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৬০ রানের টার্গেটে ব্যাট করছিলো ভারত।

১৮৭ রানের মাথায় পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। শেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুঁটি ছিলো সুরেশ রাইনা এবং যুবরাজ সিং। অজি বোলাররা খুব ভাল করেই জানতেন রাইনার দূর্বলতা রয়েছে শর্ট বলে। সেই মোতাবেক পরিকল্পনা সাজিয়ে একের পর এক বুক সমান বল ছুড়তে থাকেন অজি বোলাররা।

আর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজের দূর্বলতাকে উপেক্ষা করে ৭৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন রাইনা। সেই পার্টনারশিপই জয় এনে দিয়েছিল ভারতকে। শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ২৮ বলে ৩৪ রানের এক কার্য্যকর ইনিংস খেলেন রাইনা। যার সুবাদে সেমিফাইনালের টিকিট পেয়েছিলো ভারত।

  • বিরাট কোহলি (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০১৩)

শক্তিশালী ইংল্যান্ডে বিপক্ষে ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় ভারত। সেখানে থেকে তাঁদেরকে কোনরকম লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেন বিরাট কোহলি।

স্টুয়ার্ড ব্রড, রবি বোপারাদের লাইন লেন্থ বজায় রেখে করে যাওয়া বলে তাসের ঘরের মতো এক এক করে উইকেট পড়তে থাকে ভারতের। বৃষ্টিতে ভেজা পিচে ব্যাটিং করাটাও ছিল দুঃর্বিষহ এক কাজ। যদিও ৫০ ওভারের খেলা নেমে এসেছিলো ২০ ওভারে।

প্রতিকূলতা সব মেনে নিয়ে বিরাট ব্যাট করে যেতে থাকেন। তিনি তাঁর ইনিংস শেষ করেছিলেন ৪৩ রান করে। যার সুবাদে ১২৯ রানের একটি মোটামুটি মানের সংগ্রহ দাড়া করাতে সক্ষম হয় ভারত। সেদিনের বিপর্যয় সামলে দেওয়া ইনিংসটির নিশ্চয়ই মাহাত্ম্য অনেক।

  • যুবরাজ সিং (ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০০৩)

পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে তুলে নেন এক দূর্দান্ত শতক। সেই শতকের বদৌলতে ভারতকে পাকিস্তান ২৭৭ রানের এক বিশাল টার্গেট দিয়েছিলো। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বিধ্বংসী করে ভারত।

শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দ্র শেবাগ চড়াও হন পাকিস্তানি বোলারদের উপর। তবে পাশার দান পালটে যায়। ওয়াকার ইউনুস দ্রুত সময়ের মাঝে শেবাগ ও সৌরভ গাঙ্গুলিকে ফিরিয়ে দিলে বিপাকে পড়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। ১৭৭ রানের মাথায় প্যাভিলনে ফেরেন শচীন ও মোহাম্মদ কাইফ।

তরুণ যুবরাজ সিংয়ের উপর এসে যায় বিশাল বড় এক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব ভেঙে যেতে দেয়নি যুবরাজকে। তিনি অনড় থেকেছিলেন এবং সময়োপযোগি এক পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে। শেষমেশ যুবরাজ ৫৩ বলে ৫০ রান করে দলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন।

  • রোহিত শর্মা (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০০৭)

সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা বহু আগেই নিজেকে প্রমাণ করেই দলে থিতু হয়ে আজকের এই জায়গায় এসে পৌঁছেছেন। তবে ২০০৭ সালে অভিষেক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতিয়েছিলো তাঁর ছোট্ট এক ক্যামিও।

সেবার আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলো না ভারতীয় ব্যাটাররা। উমর গুল ও সোহেল তানভিরদের বোলিং তোপে ১৫.২ ওভার শেষে মাত্র ১১১ রানে চার উইকেট হারিয়ে খানিক দোলাচলে ভুগতে থাকে টিম ইন্ডিয়া।

কিন্তু তখনও রোহিত শর্মার রুদ্রমূর্তি দেখা বাকি। মাত্র ১৬ বলে ৩০ রানের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন রোহিত। সেই ইনিংসে কেবল দুইটি চার ও একটি ছয় মারা রোহিত রানিং বিটুইন দ্য উইকেট অব্যাহত রেখেছিলেন রোহিত। সেই ৩০ রানের উপর ভর করে ১৫৭ রানের একটা লড়াই করার পুঁজি পেয়েছিলো ভারত।

  • বিরাট কোহলি (ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০১১)

গৌতম গাম্ভীর আর মহেন্দ্র সিং ধোনি এই দুইজনের নামই হয়ত মাথায় আসে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্মৃতি রোমন্থনে। গৌতমের অনবদ্য ৯৭ আর ধোনির শেষ বলের ছয়ে ৯১ই হয়ত জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়েছিলো ভারতের নৌকাকে।

কিন্তু, সেই নৌকাকে স্থিতিশীল রাখার কাজটি করে গিয়েছিলেন তরুণ বিরাট কোহলি। শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দ্র শেবাগ দ্রুতই প্যাভিলনে ফিরে গেলে চাপের মুখে পড়ে যায় ভারত। সে জায়গা থেকে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিতে গৌতমকে সহয়তা করেন বিরাট।

যদিও, বিরাট কেবল ৩৫টা রান যোগ করতে পেরেছিলেন। রান বিবেচনায় খুব বেশি না হলেও বিরাটের সেই ইনিংসের মাহাত্ম্য হয়ত শব্দে বেঁধে ফেলা যাবে না। যদিনা তখন তিনি ধৈর্য্য ধরে খেলতেন তাহলে হয়ত ফলাফল ভিন্নও হতে পারতো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...