সিলেটের নেট। হাসান মাহমুদ তখন ব্যাটিংয়ে। খাটো লেন্থের বল। বলটাকে ডিল করতে বিপাকেই পড়লেন হাসান। বাউন্সে মূলত তিনি পরাস্ত হয়েছেন। এরপর আরও একটি খাটো লেন্থের বল। এবার বলের উচ্চতা মেরে খেলার মত। শরিফুল ইসলাম তাই করলেন। তিনি সজোরে চালালেন।
হাসান মাহমুদের এমন আত্মসমর্পণ থেকে শরিফুলের এমন আত্মবিশ্বাসী শট। ঠিক এই ট্রানজিশনটাই এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। তাইতো সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুশীলন ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনটা ছিল টেল এন্ডারদের জন্য বরাদ্দ।
চান্দিকা হাতুরুসিংহে তার শিষ্যদের নিয়ে এবার বেশ সতর্ক। তিনি জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড়েকে রেখেছেন নিবিড় পরিচর্যায়। প্রতিটা ইউনিটকে তিনি সমান শক্তিশালী করতে বেশ বদ্ধপরিকর। তাইতো একেবারে আগাগোড়া সব খানেই নজর তাঁর।
সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের টেল এন্ডার ব্যাটারদের ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে ব্যাট হাতে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা রীতিমত পরীক্ষাগার বানিয়ে ফেলেছেন হাতুরু। তার কড়া নির্দেশ গণমাধ্যম সুযোগ পাবে কেবল ত্রিশ মিনিট।
সেই ত্রিশ মিনিটে হাতুরু সুদর প্রসারী চিন্তা ধারার একটা আভাস মেলে। চা বাগানের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা মনোমুগ্ধকর এক স্টেডিয়ামে। সেখানেই পড়ন্ত বিকেলে ব্যাট-প্যাডে সজ্জিত হয়ে নেট অনুশীলনে হাজির তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলামরা।
পড়ন্ত বিকেলের মতই ব্যাটিং ইনিংসের পড়ন্ত সময়ে হাল ধরতে হয়ে দলের টেলএন্ডারদের। বাংলাদেশের শেষের দিকের ব্যাটাররা অধিকাংশ সময়ই খাবি খেয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে সে সময়টার পরিত্রাণ চান হাতুরু। একই মত সম্ভবত ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের। সাথে বাদ জাননি স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। পুরো কোচিং ইউনিটটা এক হয়ে আজ অনুশীলন করিয়েছে দলের টেলএন্ডারদের।
মূলত বল হাতেই যত কারিকুরি দেখানোর কথা। তবে ব্যাটটাও চালাতে জানতে হয়। আখেরে তাতে লাভটা দলেরই। সেই মন্ত্রই ছড়িয়ে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। তাইতো দলের সাথে থাকা প্রতিটা বোলারকে ব্যাট হাতে দিতে হচ্ছে বাড়তি মনোযোগ।
সিলেট ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলটা ছিল টাইগারদের লেজ পুষ্ট করবার। তাদের দৃঢ়তায় ম্যাচ জেতা সম্ভব, সাথে সম্ভব পরাজয় এড়ানো। সেটা বুঝতে খুব বেশি ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নাই। সেই দিকটা দেরীতে হলেও আমলে নিয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। তাইজুলকে এদিন ব্যাট হাতেই ব্যাস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে বেশি।
তিনি কখনো সেন্টার উইকেটে ব্যাট করেছেন, কখনো বা সাইডনেটে। শুক্রবার দুপুরের শুরু হওয়ার অনুশীলনের প্রথমভাগটায় হয়ত হাতও ঘুরিয়েছেন তিনি বল হাতে। লম্বা সময় ধরেই তাকে ব্যাট করতে দেখা গিয়েছে সিলেটের ভিন্ন ভিন্ন পিচে।
অন্যদিকে, শরিফুল আর হাসান মাহমুদকে যেন একটু রয়ে সয়েই শেখানোর প্রচেষ্টা টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টের। দিনের অনুশীলনের প্রথম দিকে বল করেছেন তারা। এরপর সেন্টার উইকেটে মিনিট বিশেক ব্যাট চালিয়েছেন। তাদের ভুলত্রুটি সামনে থেকে দেখেছেন হাতুরু। আর পেছন থেকে শুধরে দিয়েছেন জেমি সিডন্স। এই দুইজনের কড়া তদারকিতে হয় বোলারদের ব্যাটিং অনুশীলন।
এছাড়াও পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীও এদিন ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। তিনি আগেরদিন নিজের ব্যাটিংটা ক্লিক করবার অপেক্ষায় থাকার কথা। তিনিও মড়িয়া নিজেকে জাতীয় দলের জন্য যোগ্য প্রমাণে। জাতীয় দলের স্কোয়াডে থাকার এই সময়টুকুর পূর্ণ ব্যবহারই করছেন তিনি।
বেশ আটঘাট বেঁধেই বাংলাদেশ দল নেমেছে। নিশ্চয়ই মূল টার্গেট বছরের শেষভাগে হওয়া বিশ্বকাপ। এবার অন্তত আন্তর্জাতিক কোন বড় অর্জন হাতছাড়া করতে নারাজ গোটা দল। তাইতো দলের শুরু থেকে শেষ অবধি সবার খেয়ালই রাখছে গোটা কোচিং ইউনিট।