একেবারে অপ্রত্যাশিত এক শিরোপা জয়। ২০০৭ সালে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের বিষয়ে এর থেকে ভাল বিশেষণ বোধহয় আর পাওয়া মুশকিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই বিশ্বকাপের পর ভারতের ক্রিকেটে একটা বদলের হাওয়া এসে লেগেছিল। আর সে বদলের নাম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)।
২০০৭ সালে যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল, তখন ভারতের সিনিয়র খেলোয়াড়দের খানিকটা অনাগ্রহ ছিল সে টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে। সে তালিকায় শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি এবং রাহুল দ্রাবিড়ের মত কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা ছিলেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ এক দলকে পাঠিয়েছিল ভারতের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কেননা বোর্ডেরও মনে হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা স্রেফ একটা তামাশা।
তবে সে তামাশা এখন পরিণত হয়েছে সবচেয়ে বড় বিনোদনে। আর সে ভবিষ্যৎ নিশ্চিতরুপেই আন্দাজ করতে পেরেছিল বোর্ড ফর ক্রিকেট কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। সেই আন্দাজ থেকেই সূত্রপাত আইপিএলের। বছর খানেকের মাথায় আইপিএল হাজির দৃশ্যপটে। সাথে নিয়ে বলিউডকে। বলিউড তারকা শাহরুখ খান ও প্রীতি জিনতাদের সম্পৃক্ততা যেন দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।
তবে আইপিএল শুরুর পেছনে মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে যে এই আইপিএল দিয়েই খেলোয়াড়রা নতুন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেবে। আর তাছাড়া এই সংস্করণের জন্যে যোগ্য খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতেও সহজ হবে। সেই সাথে খেলোয়াড়দের বাড়তি আয় ও বাড়তি সুযোগ মিলবে। তবে সে লক্ষ্যে কি খানিকটা ব্যর্থ নয় আইপিএল?
কেননা সেই ২০০৭ সালে যোগিন্দর শর্মার সেই শেষ ওভার ও শ্রীশান্তের শেষ ক্যাচের পর শিরোপাটা নিয়ে পুরো ভারত বুনো উল্লাস করেছিল। এরপর আর সে শিরোপা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা হয়নি ভারতের। এমনকি এরপর হওয়া ছয় আসরে ভারত কেবল একবার ফাইনালে উঠেছিল। ২০১৪ সালে শিরোপা তাঁরা হেরেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এমন দূরবস্থা হওয়ার তো কথা ছিল না।
যেখানে আইপিএলকে মানা হয় চলমান সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগ গুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা, সেখানে খেলা ভারতীয় ক্রিকেটারদের দাপটের দেখা মেলে হরহামেশাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন শিরোপা খরা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ললাটে বহুবার। তবে পারফরমেন্স যেমনই হোক ২০০৭ এর প্রতিটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে ‘ফেভারিট’ হিসেবেই।
কিন্তু দল হিসেবে ভাল করতে পারেনি তাঁরা। অথচ আইপিএলের বিগত আসরগুলোর আট দলের প্রতিটিতে সাতজন করে ভারতীয় খেলোয়াড় একাদশে সুযোগ যেন ছিল অবধারিত। তাছাড়া প্রতিটা আসরে কোন না কোন উদীয়মান তারকার আগমন ঘটেছে এই আইপিএল থেকে। যাদের কি না মনে হয়েছে বেশ সম্ভাবনাময়। তবে তাঁদের অনেকেই যথাযথ সুযোগ পাননি।
আর তাছাড়া ভারতের সাফল্য ধরা না দেওয়ার পেছনে কাজ করেছে অন্য সব ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলোর বিস্তার। ভারতীয় খেলোয়াড়রা শুধুমাত্র সেই আইপিএলের গণ্ডিতেই আটকে থাকেন। তবে বাকি দেশগুলোর খেলোয়াড়রা প্রায় প্রতিটা টুর্নামেন্টেই খেলতে যান। হয়ত মানের বিচারে সবগুলো আইপিএলের ধারেকাছে নেই তবে অন্তত ভিন্ন অভিজ্ঞতার আয়োজন তো হয় নিশ্চয়ই।
ঠিক সে জায়গাটায় বোধকরি ভারত খানিকটা পিছিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দল নির্বাচনে ভারতের নির্বাচকদের এখন আরও বেশি কষ্ট করতে হয়। প্রথম বিশ্বকাপে এত চিন্তা করবারও কিছু ছিল না। প্রত্যাশার বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা ছিল না। কিন্তু এখন যেন চাপটা ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। নির্বাচকদের আরও বেশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। আরও একটি বিশ্বকাপ সামনে।
এখন নির্বাচকদের সময় একটু ভিন্নভাবে ভাবার। ক্ষুদ্র সংস্করণে আসলে পারফরম করা খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়াটাই হয়ত ভারতের জন্যে ফলপ্রসূ হতে পারে। আইপিএল খেলা প্রতিটা খেলোয়াড় জানেন কি করে ম্যাচের কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে হয়। তাঁরা চাপটা নিতে জানেন। পরিস্থিতি বুঝে ম্যাচ বের করে আনার সক্ষমতা রয়েছে আইপিএলের প্রতিটা খেলোয়াড়ের।
তাছাড়া ভারতের এখন সত্যিকার অর্থেই উচিৎ আইপিএলের পারফরমারদের প্রাধান্য দেওয়া। এবার খেলাটা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। এবার হয়ত সুযোগ একটা নেওয়াই যেতে পারে। কেন না পাইপলাইন বেশ শক্তপোক্ত ভারতের। আর পারফরম করা খেলোয়াড়দের সংখ্যাও কম নয়।
ভারত ১৯৮৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পর ছয়টি বিশ্বকাপ আসর পেরিয়ে জিতেছিল ২০১১ এর শিরোপা। ২০০৭ সালের পর টি-টোয়েন্টির আরও ছয়টি আসর হয়ে গেছে। তাহলে কি এবারই সুযোগ?