তামিম ও ঐকিক নিয়মের অংক

ছোটবেলায় ঐকিক নিয়মের অংক ছিল আমার তুমুল অপছন্দের বিষয়। শুধু ভাবতাম এই অংক করে আসলে লাভটা কী? তবুও বাধ্য হয়ে যতটুকু শিখেছিলাম তা আজ কাজে লেগে গেল তামিম ইকবালের বদৌলতে।

টানা চার ইনিংসে ফিফটি করেও একটিকেও সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি তিনি। তামিম তাঁর  ক্যারিয়ারে ৪০ হাফ সেঞ্চুরির কত শতাংশ সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করতে পেরেছেন সেটা আজকের দিনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সেটা বের করতে গিয়ে দেখা গেল এই অংকে তামিমের অবস্থা খুবই বেহাল।

আসলে শুধু তামিম নয় বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই আফ সেঞ্চুরিকে সহসা সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননা। কিংবা সেঞ্চুরিকে দেড়শ বা দুইশতে নিয়ে যেতেও খুব একটা দেখা যায় না। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নামী ব্যাটসম্যানরা আফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করেন নিয়মিতই।

এখানেই আসলে পার্থক্যটা গড়ে উঠে। নাহলে তামিমের নামের পাশে সহজেই থাকতে পারতো ২০ টি সেঞ্চুরি। এমনকি আমাদের দেশেও এমন একজন আছেন যার থেকে এই বিষয়টা শিখতে পারেন তামিমরা। তিনি হচ্ছেন আমাদের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ।

এবার আসুন একটু অংকে মনোযোগ দিই। তামিম তার ক্যারিয়ারে এখন অবধি আফ সেঞ্চুরি করেছেন মোট ৪০ টি। যার মধ্যে সেঞ্চুরি হয়েছে মাত্র নয়টি। অর্থাৎ ঐকিক নিয়মে বের করা গেল তিনি মাত্র ২২.৫ শতাংশ হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরি বানাতে পেরেছেন। এদিকে মুমিনুল তাঁর ক্যারিয়ারে ফিফটি করেছেন মোট ২৪ বার।

তার মধ্যে ১১ টি কেই তিনি সেঞ্চুরিতে নিয়ে গিয়েছেন। অতএব মুমিনুলে হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে কনভার্ট রেট ৪৫.৮৩ শতাংশ। এখন একটু এই সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির কনভার্ট রেট দেখা যাক। কোহলির ক্যারিয়ারে ফিফটি মোট ৫২ টি এবং এর মধ্যে ২৭ টিই তিনি সেঞ্চুরি অবধি নিয়ে গিয়েছেন। অতএব তাঁর কনভার্ট রেট ৫১.৯২ শতাংশ।

এখানে কোহলি আর মুমিনুলের মধ্যে পার্থক্য মাত্র ৬ শতাংশ। হয়তো কোহলির সমান টেস্ট খেললে মুমিনুল সেঞ্চুরি সংখ্যায় কোহলিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন। এদিকে তামিমের নামের পাশেও অন্তত বিশটি সেঞ্চুরি থাকতেই পারতো। যেই ৪০ টি আফ সেঞ্চুরি তিনি করেছেন তাঁর ৫০ শতাংশকে সেঞ্চুরিতে নিয়ে যেতে পারলেই তামিম আজ বিশ্বসেরাদের একজন হতে পারতেন।

আচ্ছা, আরেকটু সহজ হিসাব করা যাক। তামিম এখন পর্যন্ত ৮০-৯৯ এর মধ্যে আউট হয়েছেন ৮ বার। এই ৮০’র ওপর যাওয়া ইনিংস গুলোকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারলেও তামিমের সেঞ্চুরি সংখ্যা হতো ১৭ টি। এক্ষেত্রেও তামিম অনুসরণ করতে পারেন মুমিনুলকে। মুমিনুল তাঁর ক্যারিয়ারে ৮০-৯৯ এর মধ্যে আউট হয়েছেন মাত্র একবার।

খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে একবার তিনি ৮০ রান করে আউট হয়েছিলেন। এছাড়া মুমিনুল যতবার ৮০ ছুঁয়েছেন ততবার সেঞ্চুরিও ছুঁয়েছেন। এমনকি ৯০ এর নার্ভাসনেসও মুমিনুলকে কখনো হারাতে পারেনি।

এদিকে টানা দুই ম্যাচে ৯০ এর ঘরে কাটা পড়লেন তামিম ইকবাল। গত ম্যাচেও আউট হয়েছিলেন ৯০ রান করে। আজও ৯২ রান করে নিজের উইকেট দিয়ে এসেছেন। ফলে আরেকটি সেঞ্চুরির অপমৃত্যু হয়েছে এবং তামিমের দশম টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষাও বেড়েছে।

ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে এত অভিজ্ঞ তামিম নিশ্চই এসবই বুঝেন। এই সেঞ্চুরির আক্ষেপ তাঁর চেয়ে বেশি কারোরই হবার কথা নয়। আমাদের আক্ষেপ হয় এইভেবে যে তামিমের মানের একজন ব্যাটসম্যানকে আমাদের দেশসেরা লিখতে হয়। অথচ এই সেঞ্চুরি গুলো থাকলেই আমরা তাঁকে বিশ্বসেরাও লিখতে পারতাম।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link