পারফরম্ করে যাওয়াটা তানভির ইসলামের জন্য খুব জরুরী। কারণ, ক্রিকেটার হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েই এসেছেন তিনি এই ঢাকা নগরীতে। কে এই তানভির ইসলাম? তানভির অবশ্য মোটেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন কোনো নাম নন। ২০১৭ সাল থেকে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলছেন বরিশালের হয়ে। ধীরে ধীরে হলেও তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের সম্ভাবনা হয়ে উঠতে চলেছেন।
বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার ছেলে তানভির। গ্রামে টেপ টেনিস খেলে বেড়াতেন। টেনিস বল ঘোরানোটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। সেই বলেই দূরন্ত স্পিন করতেন। নিজের মধ্যে স্বপ্ন ছিলো ক্রিকেটার হওয়ার। সাহস করে বাবাকে বলতে পারছিলেন না।
বাবা থাকেন ঢাকায়। ছুটিতে বাড়ি এলে এলাকার কয়েক জন গিয়ে ধরলেন-আপনার ছেলেকে ক্রিকেটে দিয়ে দেন। বাবা এক বাক্যে ‘না’ করে দিলেন-ক্রিকেট খেলে কিছু হবে না। এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো ক্রিকেটার তানভিরের গল্প।
এই সময় ত্রানকর্তা হয়ে এলেন তানভিরের নানা। তিনি বললেন, ‘ক্রিকেটই যখন ভালোবাসে, ওকে একটা সুযোগ দাও। অন্তত দুটো বছর চেষ্টা করুক। না পারলে আবার বাড়ি ফিরে আসবে।’
সেটা ২০১২ সালের ঘটনা। বাবার সাথে ঢাকায় এলেন তানভির। বাবাই ধরে রায়ের বাজার ক্লাবে ঢুকিয়ে দিলেন। সেখানে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেললেন তানভির। প্রথম বছরেই সংগঠকদের চোখে পড়ে গেলেন। সেখান থেকে দ্বিতীয় বিভাগের দল খেলাঘর নিয়ে এলো তানভিরকে।
এই দলে পাঁচ মৌসুমেই দারুণ সাফল্য পেলেন। আর এই খেলাঘরে তাকে দেখলেন সাবেক টেস্ট তারকা নাফিস ইকবাল। নাফিসের প্রতি তাই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই তানভিরের। আরেকজনকে খুব স্মরণ করেন। তিনি হলেন প্রথম কোচ সাইফুল ইসলাম। এই দু’জনই অনেকটা গড়েপিটে ক্রিকেটার হিসেবে বড় করেছেন তানভিরকে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কিংবা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলেন অনেকদিন হল। সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে। প্রথম সুযোগেই জ্বলে উঠলেন। প্রথম জীবনে এক ইনিংসে ৮ উইকেট পাওয়ার আনন্দে ভেসেছেন, এক ম্যাচে নেন ১৩ উইকেট।
বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই তো বাঁহাতি স্পিনারদের ছড়াছড়ি। সেই মোহাম্মদ রফিক থেকে শুরু করে এখনকার সাকিব আল হাসান কিংবা তাইজুল ইসলাম – বাঁ-হাতি স্পিনাররা এখান থেকে যেমন হাত ভরে পেয়েছেন, তেমনি পারফরম্যান্স করে প্রাণ ভরে ফিরিয়েও দিয়েছেন অনেকবার। ফলে, এখানে তানভিরের স্বপ্নপূরণের পথটা সোজা হবে না। তবে তানভির চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি। তাই বলে আবার নিজেকে খুব দ্রুত পরের ধাপে দেখার আশাও করছেন না। আস্তে আস্তেই নিজেকে তৈরি করছেন তিনি।
আর পারফরম্যান্স বলছে, নিজেকে তৈরি করার পথেই আছেন তানভির। বিপিএল কিংবা ডিপিএল – সীমিত ওভারে দেশের দুই বড় ফরম্যাটেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। সর্বশেষ বিপিএলের সেরা স্পিনারদের একজন ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শিরোপা জয়ে রেখেছেন বড় অবদান।
বোঝাই যাচ্ছে, তানভিরের স্বপ্নগুলো একটু একটু করে ডানা মেলতে শুরু করেছে। তাই হোক। হঠাৎ ফুরোতে থাকা বাংলাদেশের স্পিন ধারায় উঠে আসুক নতুন স্বপ্ন। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের মূল বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কাঠামোর বাইরে থেকেও উঠে আসুক দু একটা প্রতিভা। প্রমাণ হোক, দেশের সহজাত প্রতিভার স্রোতেরও জায়গা আছে মূল ধারায়।