তানজিম সাকিব, দ্য আনসাং হিরো

রংপুরের দুই সেট ব্যাটার তখন বাইশ গজে। নিজের অর্ধশতক তুলে নেয়া রনি তালুকদার তখন হাত খুলেছেন। অপরপ্রান্তে নুরুল হাসান সোহান ঝড় তুলেছেন। বিশাল বড় টার্গেট তাড়া করেই জিততে চায় তাঁরা। শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ৩৩ রান অর্থাৎ ওভারপ্রতি ১১ রান। রংপুরের জন্য সহজ সমীকরণ। আর সেই সহজ কাজটাই ভীষণ কঠিন করে তুললেন তানজিম হাসান সাকিব।

সেই সময় রনি তালুকদার আর নুরুল হাসান সোহানকে থামানোটা প্রায় অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। দুজনই তখন একেরপর এক বাউন্ডারি মারছেন। ম্যাচ প্রায় হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছেন।

সেই সময় মাশরাফি বিন মর্তুজা নিয়ে এলেন তাঁর সেরা বোলারকে। ব্যাটিং উইকেটেও আজ আগের তিন ওভার বল করে খরচ করেছিলেন মাত্র ১৭ রান। নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটার স্যাম বিলিংসের উইকেট।

মাশরাফি তাই নির্দ্বিধায় বলটা তুলে দিলেন তানজিম সাকিবের হাতে। পুরনো বল, দুই সেট ব্যাটসম্যান, বড় ম্যাচের চাপ কোনকিছুই বাঁধা হল না তাঁর সামনে। মাশরাফির সেরা অস্ত্র সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে করলেন তাঁর সেরা ওভারটাই।

আঠারোতম ওভারে তানজিমের ওই ওভারটাই ফাইনালে নিয়ে গিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে। প্রথম বলেই ফেরালেন নুরুল হাসান সোহানকে। ম্যাচে খানিকটা প্রাণ ফিরে পেল সিলেট। ওখান থেকেও ম্যাচ জেতা যায় সেই বিশ্বাসটা ফিরে এল।

পরের বলটা গুরুত্বপূর্ণ সাকিবের জন্য। কেননা স্ট্রাইকপ্রান্তে থাকবেন দাসুন শানাকা। তবে শানাকাকেও চেপে ধরলেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় বলটায় শানাকাকে একটা সিঙ্গেলের বেশি নিতে দিলেন না।

তবে, অপরপ্রান্তে তো রনি তালুকদারও আছেন। যিনি তখন বাউন্ডারি ছাড়া করার খেলায় মেতেছেন। অথচ তানজিমের তৃতীয় বলটা ছিল একেবারে নিখুঁত ইয়োর্কার। যার কোন উত্তর ছিল না সেট রনির কাছেও।

ডট বল দিয়ে রনিকে চাপে ফেলে দিলেন সাকিব। রনি তখন বাইশ গজে ছটফট করছেন। সাকিবের একেকটা বল সিলেটকে এগিয়ে দিচ্ছে ফাইনালের দিকে। সেই সময় ১৫ বলে রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন ৩২ রান। সমীকরণ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।

চতুর্থ বলটা অফ স্ট্যাম্পে পড়ে বাক খেয়ে বেরিয়ে গেল। রনি তালুকদার বুঝতেই পারলেন না। ব্যাটে-বলেও করতে পারলেন না। বল চলে গেল উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা জাকির হাসানের কাছে। টানা দুই ডট দিয়ে দিশেহারা রনি সিঙ্গেল নিতে চাইলেন। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে জাকিরের ডিরেক্ট থ্রো। ব্যাস!

সিলেটের জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে থাকা রনি তালুকদারকেও তুলে নেয়া গেল। দারুণ ভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে তাঁরা। আরেকবার মনে করিয়ে দিই। আঠারোতম ওভারের চার বল হয়ে গিয়েছে।

সাকিব খরচ করেছেন মাত্র একটা রান। তখনো ১৪ বল থেকে প্রয়োজন ৩২ রান। পঞ্চম বলে খরচ করলেন ১ রান। পাঁচ বলে মাত্র ২ রান দেয়া সাকিবের জন্য তখন শেষ বলটা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শেষ বলটায়ও মাপা ইয়োর্কার, একে বারে দুই পায়ের মাঝখানে। আর ডট বল।

ওভারে মাত্র দুই রান দিয়ে তুলে নিলেন সোহানের উইকেট। রনি তালুকদারকেও রান আউট হতে বাধ্য করেছেন। সাকিবের ওই ওভারের পর সিলেটের জয়টা স্রেফ সময়ের ব্যাপার ছিল।

চার ওভার বল করে মাত্র ১৯ রান খরচ করে দুই উইকেট। দুইটা উইকেটই ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সময়ে। একটা নতুন বলে একেবারে শুরুতে, আরেকটা ডেথ ওভারে নিজের শেষ ওভারে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের জয় নায়ক তো আজ তানজিম সাকিবই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link