আরেকবার হোক তাসকিন, আরেকবার

তাসকিন আহমেদের বয়স তখন মাত্র বিশ। টগবগে রক্ত। একেবারে নিরেট, এক্সপ্রেস গতির এক পেসারকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে গেল বাংলাদেশ। সেবারই তো এই ব্রিসবেনে, এই গ্যাবায় গতির ঝড় তোলার কথা ছিল তাসকিনের। অথচ টানা বৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটা ম্যাচও মাঠে গড়ালো না। তাসকিন আহমেদের অপেক্ষা বাড়লো।

অপেক্ষা ফুড়িয়েছে, গ্যাবায় বল হাতে তুললেন তাসকিন। স্পোর্টিং উইকেট, বাউন্সি উইকেট আর তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য সবচেয়ে কাঙ্খিত কম্বিনেশন বোধহয় এটাই। গতি, বাউন্স আর স্যুইংয়ের মিশেলে গড়া এই তাসকিন অনবদ্য, অবিশ্বাস্য।

তাসকিন আহমেদ কী, কতটা ভয়ংকর কিংবা কতটা সুন্দর সেটা প্রথম প্রমাণ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতেই। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেনদের সাথে তাল মিলিয়ে বল ছুড়লেন। গতির ঝড় তুললেন। আতঙ্কের এক নাম হয়ে উঠলেন।

তবে মিরপুরের উইকেট তাসকিনের মর্ম কতটাই বা বোঝে। আর এই মিরপুর, চট্টগ্রাম, সিলেটেই ক্যারিয়ারের অধিকাংশ ম্যাচ খেলতে হয়েছে তাঁকে। কখনো পেরেছেন, কখনো পারেননি। তবে তাসকিন আহমেদ আলাদা, বিশেষ কেউ সেটা তাঁর আগমনী বার্তাতেই স্পষ্ট ছিল।

বাংলাদেশের মরা উইকেটগুলোতেও তিনি হারিয়ে যাননি। আঁকড়ে ধরেছিলেন। আবার কোনদিন অস্ট্রেলিয়া যাবেন, ইংল্যান্ড যাবেন, কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা। এই কন্ডিশন গুলোয় তাসকিন আর তাসকিন থাকেন না, তাঁর নাম তখন তোলা হয় বিশ্বসেরাদের সাথে।

তাসকিন অপেক্ষা করেছিলেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য। ইংল্যান্ডের মাটিতে তাসকিন আরেকবার নিজেকে প্রমাণ করবেন। বুকে একটা পণ করে রেখেছিলেন বোধহয়। তবে হঠাতই সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা করা হলো। ফিটনেসের অযুহাতে দল থেকে বাদ পড়লেন। এমনকি আয়ারল্যান্ডে যে সিরিজটা খেলেছিল বাংলাদেশ সেখানেও তিনি নেই। সাংবাদিকদের সামনে কোনক্রমে চোখের জলটা আঁটকে রাখলেন। বললেন তিনি ফিরে আসবেন। বলেই একাডেমি ভবনের ভিতর দৌড়ে ঢুকে তাসকিনের সে কী কান্না।

এরপর একান্ত নিজের লড়াই। কখনো বালুতে, কখনো আগুনে নিজের শরীরটাকে ঢেলে দিয়েছেন। ফিরে এসেছেন এক অগ্নিশিখা হয়ে। যাকে থামানো যায় না, সেই সাধ্য কারো নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড হয়ে এবার অস্ট্রেলিয়ায় মাঠ কাপাচ্ছেন। ভেজা চোখে অ্যাকাডেমি মাঠের সামনে দাঁড়ানো সেদিনের তাসকিন আর আজকের তাসকিনের ফারাক অনেক।

তাসকিন আহমেদ একেকটা বল ছোঁড়েন আর সেগুলো অগ্নি গোলক হয়ে বের হয়। তাসকিনের প্রতিটা উইকেট, প্রতিটা উদযাপন, প্রতিটা উল্লাসে একেকটা আক্ষেপের জন্ম হয়। এই তাসকিন কেন ব্রিসবেনেই খেলেন না। তাসকিনদের কেন মিরপুরে খেলতে হয়, তাসকিনদের তো সেঞ্চুরিয়ন কিংবা মেলবোর্নেই বেশি মানায়।

ভালো উইকেট, ভালো কন্ডিশন পেলে তাসকিন আহমেদ বিশ্বসেরাদের একজন হতেন। এমনকি উপমহাদেশের বাইরে বাংলাদেশ আরেকটু বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও তাসকিনের পরিসংখ্যানে পরিবর্তন আসতো অনেক। সেসব না পেয়েও তাসকিন ছুটে চলছেন।

উইকেটে পেলে তাসকিনের দৌড় গুলো দেখেছেন? এই একেকটা দৌড় একেকটা সংগ্রামের গল্প বলে, একেকটা দৌড় আমাদের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। আরেকবার হোক তাসকিন, আরেকবার। হোক সেটা ব্রিসবেন কিংবা মিরপুরেই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link