এক হাতে এক বালতি সাদা রঙ। অন্য হাতে তুলি। তাসকিন আহমেদের কথা ছিল তার ক্যারিয়ার জুড়ে রঙিন সব ছবি আঁকা। তবে তিনি বরং এখন মনোযোগ দিয়েছেন নিজের রানআপের দাগ টানতে। নিজ হাতে খুটিনাটি মেপেই একেবারে পপিং ক্রিজের সামনে অবধি দাগ টেনে নিলেন।
এরপর মাথায় হিসেব কষে নিলেন। সেই অনুযায়ী বসালেন মার্কার। অফ স্ট্যাম্পের চ্যানেল বরাবর সেই সাদা দাগটা চলে গেল। লেগ স্ট্যাম্পকে চিহ্নিত করতে ব্যবহার করলেন রঙিন মার্কার। দেখে অন্তত আন্দাজ করে নেওয়াই যায় তিনি একটা নির্দিষ্ট চ্যানেল ধরে বোলিং অনুশীলন করবেন। আর সে জন্যেই এতসব আয়োজন।
তাছাড়া ল্যান্ডিং প্রান্তেও বিভিন্ন রঙের মার্কার দিয়ে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল ঠিক করে নিলেন। বোলিং শেষে পেসারদের দৌড় থামাতে খানিক সময় প্রয়োজন হয়। আর সেই দৌড়টুকুতে অনেকেই স্ট্যাম্প বরাবর চলে আসেন। ইনজুরি ফেরত তাসকিনের সেই সমস্যাই যেন হচ্ছে।
পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আগে একদিন অনুশীলনে এই সমস্যাটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। এরপর তিনিই মার্কার ব্যবহার করে তাসকিনকে সেই মার্কারের ভেতরেই নিজের দৌড় শেষ করার অনুশীলন করতে বলেন। সেই কাজটা এদিনও করলেন তাসকিন।
তবে এদিন তিনি একাই যেন নিজেকে ফেরানোর লড়াইটা করে গেলেন। সবকিছু ঠিকঠাক করে নিয়ে হালকা দৌড়ে শরীর খানিকটা গরম করে নিলেন। জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত ঘোরালেন। ক্রমেই দৌড়ের দূরত্ব বাড়ালেন। বোলিংয়ের যেই ছন্দ সেটাই যেন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলেন।
রানআপের দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে বলের গতিও বাড়ল। যেই চ্যানেল ধরে বোলিং করতে চাইলেন সেই চ্যানেলে ক্রমশ বল পিচআপ করালেন। সাথে লেন্থের তারতাম্যও ঘটালেন। কখনো ফুলার লেন্থ, কখনো আবার ইয়োর্কার। কখনো ইনসুইং। বেশ কয়েকটা বল তিনি স্ট্যাম্পেও হিট করালেন। ব্যাটারকে ভরকে দেওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতিই নেওয়ার চেষ্টা তার।
বর্তমান সময়ে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দলে তাসকিন আহমেদ এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দলের পেস আক্রমণের প্রধান সেনানী। বিশ্বকাপের মঞ্চে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। তবে কাঁধে ইনজুরির কারণে নিজের সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দিতে পারেননি তাসকিন। খানিকটা খোলসবন্দী থেকেই শেষ করেছেন বিশ্বকাপ যাত্রা।
সামনের বছরের মধ্যভাগেই আরও একটি বিশ্বকাপ। সেটা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সেই বিশ্বকাপের জন্যে তাসকিন নিশ্চিতভাবেই শতভাগ ফিট আর ফর্মেই থাকতে চাইবেন। সেজন্যে অবশ্য তার মাঠের ক্রিকেটে ফেরা প্রয়োজন। আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই মাঠের ক্রিকেটে ফিরবেন তাসকিন। তেমনটাই প্রত্যাশিত।
ঠিক সে কারণেই নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়ার প্রয়াশে একাই দিন পার করছেন তাসকিন। একাকী এই লড়াইয়ের ফাঁকেই মিরপুর একাডেমি মাঠে থাকা সোহাগ গাজীর কাছেও দোয়া চাইলেন। তাসকিন তো ফিরেছেন বারবার। তার প্রত্যাবর্তনের গল্পে তো রোমাঞ্চিত হয়েছে সবাই। তিনি তো দেখিয়েছেন ফিরে আসা খুব কঠিন কিছু নয়। স্রেফ স্বদিচ্ছা চাই।