অজিদের বিপক্ষে এক ইনিংসে ১০ উইকেট শিকার করা ইংলিশ বোলারের নাম কি বলুন তো? জিম লেকার, সহজ উত্তর!
কিংবদন্তীর নাম কেই বা ভুলে যায়! কিন্তু কিংবদন্তীদের কীর্তির আড়ালে চাপা পড়া কীর্তিগুলো মানুষ ভুলে যায় খুব সহজে! প্রশ্ন করুন, সেটা কিভাবে?
উত্তর দেবার আগে, আমিই বরং আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করি টেড ব্যারাটকে চেনেন? নাম শুনেছেন?
জানি, আপনি চেনেন না অথবা নামও শোনেন নাই! অথচ প্রথম ইংলিশম্যান হিসেবে এক ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়া দলের দশজন ব্যাটসম্যানকে আউট করা বোলারের নাম টেড ব্যারাট! জিম লেকার নামক কিংবদন্তীর আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া এক ধুসর বর্নের নক্ষত্র!
টেড যখন কীর্তিটি গড়েন, তখনও অ্যাশেজ নামক রোমাঞ্চের সাথে পরিচিত হয়নি ক্রিকেট বিশ্ব, জিম লেকার বা ব্রাডম্যানেরা পৃথিবীর আলো দেখেননি, তবে ক্রিকেট ততদিনে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছে ধরিত্রীতে!
১৮৭৮, অস্ট্রেলিয়া দল তখন ইংলিশ সফরে। নটিংহ্যামশায়ারের কাছে ইনিংস ব্যবধানের পরাজয় দিয়ে শুরু করলেও, লর্ডসে এমসিসিকে হারিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার মহড়া ঠিকই দিয়ে দিল অজিরা! ফ্রেড স্পোফোর্ত তখন রীতিমত স্টার হয়ে গেছেন, সাথে হ্যারি বয়লি! ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে দিতে প্রতিপক্ষ দলে এই দুটি নামই যথেষ্ট!
যাই হোক, সারের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৭৭ রানেই গুটিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া! এর মধ্যে আবার চার্লস ব্যানারম্যানের একার রানই ৫১! সাতজন ব্যাটসম্যান খাতাই খুলতে পারল না। ঘাতক? হুম, টেড ব্যারাট!
এমন নয় যে টেড খুব আউটস্ট্যান্ডিং কোন বোলার ছিলেন। জেন্টেল মিডিয়াম পেস, রাউন্ড আর্ম অ্যাকশন, অ্যাকুরেসি ইন লাইন এন্ড লেন্থ এবং কিছুটা ওয়ে সুইংয়ের মিশেল!
কিন্তু একটা স্পেশাল গুন তার ছিল! প্রতিপক্ষের নাম অস্ট্রেলিয়া হলেই ক্যারিশমাটিক হয়ে যেতেন টেড! সেবারের সফরে ৪ ম্যাচেই তুলে নিয়েছিলেন ৩৭ উইকেট, গড় ছিল ৯.৩৫!
যাই হোক, ব্যারাট সেদিন টানা বল করেছিলেন ২৯ ওভার, যদিও তখন চার বলে ওভার সম্পন্ন হত। ৪৩ রান খরচায় তুলে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট! সাতটি ক্যাচের সাথে তিনটি স্ট্যাম্পিং।
এটা ছিল অভূতপূর্ব, কারণ কোন ট্যুরিং সাইডের বিপক্ষে কোন ইংলিশম্যানের এমন কীর্তি কখনোই দেখা যায়নি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ানরাও এতটা ইম্প্রেসড হয়েছিল যে তারা বলটিকে রুপা দিয়ে মুড়িয়ে এবং সাথে একটি ৫ পাউন্ডের বিল সহ ব্যারেটকে উপহার দিয়েছিলেন পরবর্তীতে!
এদিকে মাঠের গ্যালারিতে তিন যুবক অর্থ সংগ্রহ করছিলেন দর্শকদের মাঝে! তখনকার ক্রিকেটে এটা বেশ প্রচলিত প্রথা ছিল। এমেজিং কোন পারফর্ম্যান্সকে সন্মান জানাতে অর্থ সংগ্রহ করে সেটা প্রদান করা হত পারফর্মারকে! উচ্ছ্বসিত দর্শকরা সেদিন পকেট উজার করে সন্মান জানিয়েছিল টেড ব্যারেটকে!
অথচ একটি টাকাও জুটলো না টেডের কপালে! অনুসন্ধানে জানা গেল ওই তিন যুবক এক স্থানীয় ঠকবাজ গ্যাংয়ের সদস্য। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টাকা উঠিয়ে হাওয়া! টেডের পার্ফরম্যান্সের মূল্য তাই ওই ৫ পাউন্ডেই সীমাবদ্ধ!
এদিকে ম্যাচ কিন্তু জমে ক্ষীর! জবাব দিতে নেমে মাত্র পাঁচ রানের লিডই নিতে পারল সারে! স্পোফোর্ত প্রায় একা হাতেই গুড়িয়ে দিলেন সারের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ানরা দারুন শুরু করল। ৪৫ রানের ওপেনিং জুটি, তবুও হঠাৎ কলাপ্সেই অলআউট ৮৯ রানে!
সারের সামনে টার্গেট তখন মাত্র ৮৫! হেসেখেলে জিতে যাবার বদলে সারে অলআউট হল ৭৬ রানে! স্পোফোর্তের এবারের শিকার সংখ্যা ৫! অজিরা ম্যাচ জিতে নিল ৮ রানে!
এই ম্যাচটাকে মনে রাখার কারন মূলত দুটি। টেডের অতিমানবিক কীর্তি এবং ১৮৮২ সালের ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের সিনারিওর সাথে হুবহু মিল! সেই ম্যাচেও সারের মত একইভাবে পরাজয়ের শিকার হয় ইংল্যান্ড, হন্তারক সেই একই স্পোফোর্ত! আর, সেই ম্যাচের পরেই ব্রিটিশ মিডিয়ার হাহাকার, পরবর্তীতে অ্যাশেজ নামক রোমাঞ্চের সৃষ্টি!