টেস্ট অধিনায়কত্বের প্রস্তাবনা

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের যে একটা সংকটকাল চলছে, সেটা বলতে কোনো যুক্তি-প্রমাণের বোধকরি প্রয়োজন নেই। বিষয়টা প্রকাশ্য দিবালোকের মতই সত্য। আর সাদা পোশাকের ঐতিহ্যবাহী এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল নেতৃত্বের সংকট।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের যে একটা সংকটকাল চলছে, সেটা বলতে কোনো যুক্তি-প্রমাণের বোধকরি প্রয়োজন নেই। বিষয়টা প্রকাশ্য দিবালোকের মতই সত্য। আর সাদা পোশাকের ঐতিহ্যবাহী এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল নেতৃত্বের সংকট।

হ্যাঁ, মুমিনুল হক সৌরভের নেতৃত্বে আমরা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ঐতিহাসিক একটা সিরিজ জিতেছি, পেস বোলিং বিভাগটাও মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে। এর বাইরে অর্জনের খাতাটা শূন্য। বরং মুমিনুলের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত, গা-ছাড়া মনোভাবে দল ভুগছে বারবার। আর নেতৃত্ব যে মুমিনুলের ব্যাটিংয়ের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলছে – সেটা বলে না দিলেও চলে।

ফলে, টেস্টে অধিনায়ক পাল্টাতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) প্রথমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধরা যাক, বিসিবি অধিনায়ক পাল্টাতে রাজি হল। তাহলে বিকল্প কি বা কে?

প্রথমত, সবার আগেই আসবে সাকিব আল হাসানের নাম। আসলে, সাকিব টেস্ট নয় যেকোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। এমনকি নিষেধাজ্ঞায় যাওয়ার আগে সাকিব টেস্টের অধিনায়কও ছিলেন।

ফলে, এখানে হিসাবটা পরিস্কার। সাকিবকে তাঁর হারানো জায়গাটা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু, গোলটা অন্য জায়গায়। সাকিব এই মুহূর্তে টেস্ট খেলেন বেছে বেছে। প্রায়শই নানা রকম কারণ দেখিয়ে টেস্ট দল থেকে নাম প্রত্যাহার করেন, ছুটি নেন। তাই, সাকিবকে নিয়ে হয়তো এখানে স্থায়ী কোনো সমাধান আসবে না।

আরেকটা বড় ব্যাপার হল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় কাটিয়ে ফেলা সাকিব হয়তো আরও অনেকদিন জাতীয় দলকে সার্ভিস দেবেন না। বড়জোর আর কয়েকটা বছর। সাকিবের যা বয়স, তাতে সাকিব নিজেও হয়তো একটা অবসর পরিকল্পনা মনে মনে নির্ধারণ করেই ফেলেছেন।

এখন, তাহলে নেতা কোথায় পাওয়া যায়? সেটা খুঁজতে প্রথমত সিনিয়রদের দিকে চোখ দিতে হবে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবসর নিয়ে ফেলেছেন টেস্ট দল থেকে। তিনি প্রথমেই আলোচনার বাইরে। বাকি থাকলেন মুশফিুকর রহিম ও তামিম ইকবাল। এই ‍দু’জনের ক্ষেত্রেই সাকিবের মতই একই কথা খাটে যে – তাঁরা আর লম্বা সময় জাতীয় দলকে কোনো ফরম্যাটেই সার্ভিস দেওয়ার মত অবস্থাতে নেই।

এবার তাহলে তরুণদের দিকে আসা যাক। টেস্টে এখন বাংলাদেশের সেরা পারফরমার হলেন লিটন দাস। যে পজিশনেই ব্যাট করুন না কেন এখন তিনি বিশ্বসেরাদের সাথে পাল্লা দিয়ে রান করে যাচ্ছেন। ফলে, অধিনায়কত্বের আলোচনাতেও তিনি থাকবেন। তবে, সমস্যা হল লিটনের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা খুবই সামান্য।

সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস করতে নেমেছিলেন বটে, তবে সেখানে তাঁর ভূমিকা খুবই অনুল্লেখ্য। আর ঘরোয়া ক্রিকেটে বা বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটেও লিটন অধিনায়কত্ব করেন না বললেই চলে।

তাহলে বাদ থাকল কে? হ্যাঁ, মেহেদী হাসান মিরাজ। লিটন বা সাকিবের পর টেস্টে এখন মিরাজ বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। বল হাতে সাদা পোশাকে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। এখন ব্যাটিংয়েও নিজেকে নিয়মিত প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। দেশের বাইরেও অলরাউন্ডার হিসেবে সাফল্য পাচ্ছেন। ফলে, অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে বিবেচনায় রাখা দরকার।

আর অভিজ্ঞতার কথা যদি বলেন, তাহলে বলতেই হয় এখনকার যে টেস্ট দল তাতে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে অভিজ্ঞদের একজন হলেন মিরাজ। ২০১৬ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে তাঁর অধীনেই খেলে বাংলাদেশ। শুধু খেলাই নয়, দেশের মাটিতে সেবার বাংলাদেশ দলের যাত্রা থামে সেমিফাইনালে গিয়ে।

আর সেই সাফল্যের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন মিরাজই। সেই আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেন। তাই, অধিনায়কত্ব করেও পারফরম করে যাওয়ার অনুশীলনটা তাঁর মধ্যে একদম শুরু থেকেই আছে। ফলে, নেতার কাজটা তিনি যে জানেন – সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই।

আর মিরাজের ক্ষেত্রে আরেকটা ব্যাপার বলা দরকার যে, তিনি হলেন পরিপূর্ণ একজন টিমম্যান। হ্যাঁ, গণমাধ্যমে অনেক সময়ই তিনি সিনিয়রদের নিয়ে এমন কিছু কথা বলেন, যাতে করে তাঁকে ঘিরে স্যোশাল মিডিয়াতে সমালোচনা হয়। আসলে, ব্যাপার হল স্যোশাল মিডিয়ার সব রকম সমালোচনা মাথায় নিলে – অধিনায়কত্ব ইস্যুতে এগোনো যাবে না। আর মিরাজ নিশ্চয়ই মিডিয়াতে এসে সরাসরি সিনিয়রদের বিরুদ্ধেও কিছু বলবেন না। আর মিরাজের এসব কথাই প্রমাণ করে যে তিনি দলকে আগলে রাখতে জানেন। দরকার শুধু একটু যোগ্য সহায়তা।

সেই সহায়তাটা চাইলে তাঁকে সাকিব করতে পারেন। এই মুহূর্তে হয়তো মিরাজকে অধিনায়কত্ব সরাসরি দিয়ে দেওয়া হবে না। বা সেটা ঠিকও হবে না। তবে, তাঁকে নেতৃত্বে বিভাগে ঠাই দেওয়া যেতেই পারে। সাকিবকে যেহেতু লম্বা সময় পাওয়া যাবে না, তাই মিরাজকে অন্তত সহ-অধিনায়কের দায়িত্বটা দেওয়া হোক।

অল্প সময়ের জন্য হলেও টেস্ট অধিনায়ক আপাতত সাকিবকেই করা হোক। অবশ্যই সাকিব যদি রাজি থাকেন। গুঞ্জনও বলছে, আবার সাকিবকেই নেতৃত্ব দিচ্ছে বিসিবি। সেক্ষেত্রে সাকিবের ডেপুটি মিরাজকে করা যেতেই পারে। তাহলে সাকিবের কাছ থেকে শিখে-পড়ে নিজের অধিনায়কত্বের ঘাটতি কিংবা আচরণগত ঘাটতিগুলোও শুধরে নিতে পারবেন মিরাজ। নেতা এভাবেই গড়ে ওঠেন।

বিরাট কোহলিও কিছুদিন মহেন্দ্র সিং ধোনির ছায়াতলে ছিলেন বলেই তিনি বিশ্বসেরা টেস্ট অধিনায়ক বনেছিলেন। টেস্ট অধিনায়ক চাইলেই রেডিমেট পাওয়া যায় না, গড়ে নিতে হয়। এবার দেখার বিষয় হল, বিসিবির সেই গড়ে নেওয়ার মানসিকতাটা আদৌ আছে কি না!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...