বব উইলিসের ‘জুতোতে পা গলানো’

তাঁর ভূমিকার কথা স্মরণ করে ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম বলেছিলেন, ‘আমার সময়কালে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মধ্যে একমাত্র বিশ্ব সেরা ফাস্ট বোলার ছিলেন উইলিস।’ উইজডেনের সম্পাদকীয় কলমও এই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিল।দেশ ছিল তাঁর কাছে সবার আগে। টেস্ট উইকেট প্রাপ্তিতে দেশসেবা করার মানসিকতাই তাঁকে চালিত করেছে বার বার। শারীরিক চোটআঘাত উপেক্ষা করেও তিনি দেশের হয়ে তার বোলিং করে গেছেন নিষ্ঠাভরে, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে, অবসরের আগে পর্যন্ত।

৯০ টেস্টে ৩২৫ উইকেটের বা ৬৪ একদিনের ম্যাচে ৮০ উইকেটের ফ্রেমে বব উইলিসকে বেঁধে ফেলা মুশকিলই শুধু নয়, অসম্ভবও। ১৬ বার টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়ার কীর্তি দিয়েও বব উইলিসকে ধরা যায়না।

তাঁর দর্শকদের জন্য নান্দনিক অথচ ব্যাটসম্যানদের জন্য নৃশংস বোলিংকে বরং কিছুটা বোঝাতে পারে ১৯৮১-র অ্যাশেজ সিরিজের হেডিংলর তৃতীয় টেস্ট। যে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তার পরিসংখ্যান ছিল ১৫.১-৩-৪৩-৮।

সেদিন তাঁর বোলিং দাপটে ‘ফালাফালা’ হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইন আপ, যা আলো করে ছিলেন অ্যালান বোর্ডার, হিউজ, ডাইসন, ইয়ালপ, উড, রডনি মার্শ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর এই বোলিং পরিসংখ্যান অদ্যাবধি সর্বকালের অন্যতম সেরা পরিসংখ্যান।

ওই টেস্টে ইংল্যান্ড দল ফলোঅনের কবলে পড়েছিল। তারপর, ইয়ান বোথামের অপরাজিত ১৪৯ রান ও পরবর্তীতে বব উইলিসের ৮/৪৩ বোলিংয়ে ভর দিয়ে ইংল্যান্ড দল নাটকীয় জয় পায় ১৮ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১১ রানে মুড়িয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ফলোঅনে থাকার পরও জয়ের ঘটনা ছিল এটি। ২০০১ সালের কলকাতা টেস্টের আগে এ ঘটনা আর ঘটেনি।

১৯৭১ (২২ বছর বয়সে) থেকে ১৯৮৪ অবধি বিস্তৃত ছিল তাঁর টেস্ট জীবন। আর একদিনের ক্রিকেট তিনি খেলেছিলেন ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৪। ১৯৭৭ সালের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত শতবার্ষিকী টেস্টের প্রথম ইনিংসে তার বাউন্সারে রিক ম্যাককস্কারের চোয়াল ভেঙে যায়।

১৯৮২ সালের জুন থেকে ১৯৮৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ইংল্যান্ড দলের টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়ক ছিলেন বব উইলিস। তার নেতৃত্বে ১৮ টেস্টে ইংল্যান্ড পেয়েছিল সাতটি জয় ও পাঁচটি পরাজয়়। বাকি ছয়টি টেস্ট ড্র হয়। এছাড়াও, ১৬টি একদিনের আন্তর্জাতিকে তার দল জয় পেয়েছিল।

তাঁর ভূমিকার কথা স্মরণ করে ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম বলেছিলেন, ‘আমার সময়কালে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মধ্যে একমাত্র বিশ্ব সেরা ফাস্ট বোলার ছিলেন উইলিস।’ উইজডেনের সম্পাদকীয় কলমও এই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিল।

দেশ ছিল তাঁর কাছে সবার আগে। টেস্ট উইকেট প্রাপ্তিতে দেশসেবা করার মানসিকতাই তাঁকে চালিত করেছে বার বার। শারীরিক চোটআঘাত উপেক্ষা করেও তিনি দেশের হয়ে তার বোলিং করে গেছেন নিষ্ঠাভরে, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে, অবসরের আগে পর্যন্ত।

অবসরের পরে তিনি স্কাই স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকাররূপে তার এককালের বোলিং পার্টনার ইয়ান বোথামের সাথে জুটি গড়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সাল থেকে দ্বিতীয়বারের জন্য ধারাভাষ্যকাররূপে যোগ দিয়েছিলেন। ধারাভাষ্যের পাশাপাশি লেখালেখি, বই প্রকাশ করা ও প্রায়ই ক্রিকেটের আধুনিক সংস্করণের তুখোড় সমালোচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যেত বব উইলিসকে।

তিনবছর আগে থাইরয়েডে ক‌্যানসার ধরা পড়েছিল বব উইলিসের। তখন থেকেই লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। চার ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে সব লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছিল এই লড়াকু বোলারের। ৭০ বছর বয়সে দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছিলেন ১৯৪৯ সালের ৩০ মে তারিখে জন্মানো বব উইলিস।

ঝাঁকড়া চুল আর লম্বা রান আপের সঙ্গে আগুনে বোলিংয়ে একদা বিশ্বকে মাতিয়ে দেওয়া অন্যধাঁচের ফাস্ট বোলার বব উইলিসের ‘জুতোতে পা গলানো’ হয়ত আর কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...