টেস্ট ক্রিকেট মানেই ধৈর্য্যর খেলা। টেস্ট ক্রিকেট মানেই ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য্য। কেউ কেউ আবার এই টেস্ট ক্রিকেটকে নিজের আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়ে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি মানেই ওভারের পর ওভার ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ের পর সুযোগ বুঝে রান নিয়ে নিয়ে তিন অঙ্কে পা দেওয়া। তবে কেউ কেউ এই ফরম্যাটেও ওয়ানডে স্টাইলে, কেউ বা আবার টি-টোয়েন্টি স্টাইলেও ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন!
চলুন দেখে নেই একশোর কম বল খেলে কারা টেস্টে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করেছেন।
- বীরেন্দ্র শেবাগ (৭ সেঞ্চুরি)
১০০ এর কম বল খেলে সবচেয়ে বেশি সাত সেঞ্চুরির মালিক হচ্ছেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ । আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মূলত ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার বেশ সুনাম ছিলো তার। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি যেকোনো ফরম্যাটেই তিনি প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর আক্রমণাত্মক ভাবেই ব্যাটিং করতেন। মূলত তার আগ্রাসী ব্যাটিং মনোভাবের কারণেই একশোর কম বল খেলে সাত বার সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি।
২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে ৯৩ বলে সেঞ্চুরি করে এই তালিকায় নাম লেখান তিনি। সেই ইনিংসে ২৪৭ বলে ২৫৪ রান করেন তিনি। এরপর একই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ৭৮ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। সেখানে ১৯০ বলে ১৮০ রানের ইনিংস খেলেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। এরপর ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে সেওয়াগ ৮৭ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ইনিংসে অপরাজিত ২০১ রান করেন তিনি।
বীরেন্দ্র শেবাগ ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে কানপুরে ৯৭ বলে সেঞ্চুরি করে এই তালিকায় আরেকটি সেঞ্চুরির সংখ্যা জুড়ে দেন। এরপর কলকাতায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৭ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি! এবং ২০১০ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯০ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। সবশেষ ২০১২ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আহমেদাবাদে ৯০ বলে সেঞ্চুরি করেন, যা ছিলো একশোর কম বল খেলে তার শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি।
- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৬ সেঞ্চুরি)
একশোর কম বল খেলে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরিতে দুইয়ে আছেন সাবেক অজি অধিনায়ক অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ২০০১ সালেএ ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে সাত নম্বরে নেমে ৮৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এরপরের বছর ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যাপটাউনে ৯১ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরপর ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের ৫ম টেস্টে ৯৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গিলক্রিস্ট।
২০০৩ সালে পার্থে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে একশোর কম বল খেলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে ৮৬ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সেখানে ১৪৬ বলে ১৬২ রান করেন সাবেক এই অজি গ্রেট। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫৭ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েন তিনি! তখনকার সময়ে স্যার ভিভ রিচার্ডসের পর এটি দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিলো। বর্তমানে এটি টেস্টে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি হিসেবে অক্ষত আছে।
- ডেভিড ওয়ার্নার, ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (৪ সেঞ্চুরি)
এখন পর্যন্ত তিনজন আছেন যারা চারটি করে সেঞ্চুরি করেছেন একশোর কম বল খেলে। এই তিনজন হলেন ডেভিড ওয়ার্নার, ক্রিস গেইল এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ২০১২ সালের ভারতের বিপক্ষে পার্থে মাত্র ৬৯ বলে সেঞ্চুরি করে এই তালিকায় নাম উঠান ওয়ার্নার।
এরপর একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৩ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিডনিতে ৮২ বলে সেঞ্চুরি করেন ওয়ার্নার। এবং সবশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনিতে ৭৮ বলে তিনি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন।
২০০৫ সালের আগস্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করেন ম্যাককালাম। এরপর মাঝের দশ বছর একশোর কম বলে সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৮ বলে সেঞ্চুরি করার এক মাসের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবার ৭৪ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
এরপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন! স্যার ভিভ রিচার্ডসের ৫৬ বল টপকে মাত্র ৫৪ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
ক্রিস গেইল তার করা একশোর কম বলে খেলা চার সেঞ্চুরির দুটিই করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ২০০৪ সালে ক্যাপটাউনে মাত্র ৭৯ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি৷ এরপরেরটা ২০০৫ সালে সেন্ট জোন্সে ৯৬ বলে সেঞ্চুরি করেন।
এই দুই সেঞ্চুরি ছাড়া ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টে ৮০ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এবং সবশেষ ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে ৭০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ক্রিস গেইল।
- ইয়ান বোথাম ও শহীদ আফ্রিদি (৩ সেঞ্চুরি)
এই তালিকার চতুর্থ নম্বরে অবস্থান করছেন দুইজন। তারা হলেন ইয়ান বোথাম এবং শহিদ আফ্রিদি দুইজনই ক্যারিয়ারে তিনবার করে একশোর কম বল খেলে সেঞ্চুরি করেছেন।
বোথাম ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৬ ও ৮৭ বলে দুই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তিন নম্বর সেঞ্চুরিটি তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন। ১৯৮৩ সালে কিউইদের বিপক্ষে ৯৯ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
শহীদ আফ্রিদি তার ক্যারিয়ারে দুইবার ৭৮ বলে সেঞ্চুরি করেছেন। ২০০৫ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমটি এবং ২০০৬ সালে লাহোরে ভারতের বিপক্ষে করেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ২০০৬ সালে ফয়সালাবাদে ভারতের বিপক্ষে ৯৯ বলে এই তালিকার তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন এই পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।
- রস টেইলর (২ সেঞ্চুরি)
রস টেইলর তার ক্যারিয়ারে দুইবার একশোর কম বল খেলে সেঞ্চুরি করেন। ২০১০ এর মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় টেস্টে ৮১ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন টেইলর। সেই ইনিংসে ১০৪ বলে ১৩৮ রান করেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে ৯৯ বলে সেঞ্চুরি করে এই তালিকায় আরেকটি সেঞ্চুরি জুড়ে দেন এই কিউই ব্যাটসম্যান।