এজন্যই ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা!

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাটিং করে ১৪৪ রান করেছিলো।

পাকিস্তানের রান ছিল ৯ ওভারে ৯২/১। অর্থাৎ শেষ ১১ ওভারে ৫২ রান লাগে, হাতে নয় উইকেট! শেষ ১০ ওভারে দরকার ছিল ৪৬। ৪-৫ ওভার হাতে রেখে এই ম্যাচ জেতা উচিত।

অথচ পাকিস্তান কী করলো? পরের পাঁচ ওভারে করেছে ১৬ রান। আট ওভারে করেছে ৩০ রান। সাত উইকেট পড়ে গেছে।

পাকিস্তানের দরকার ৮ বলে ১৬ রান। হাতে আছে তিন উইকেট। হাসান আলী বল ব্যাটেই লাগাতে পারছে না। এই অবস্থায় সাউথ আফ্রিকাই ফেভারিট হয়ে গেলো।

অথচ সাউথ আফ্রিকান বোলার মাগালা কী করলেন? টানা দুইটা নোবল। প্রথম ফ্রি হিটে হাসান আলী এক রান নিয়ে পরের ফ্রি হিটে নেওয়াজের ছক্কা। ৮ বলে ১৬ হয়ে গেলো সাত বলে সাত!

এখন আসেন একটু বিশ্লেষণ করি।

এই যে পাকিস্তানের শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৪৫ রান লাগতো সেখান থেকে ৮ বলে ১৬ দরকার হয়ে গেলো। এইখানে কি পাকিস্তান ইচ্ছা করে উইকেট দিয়ে ম্যাচ হারার চেষ্টা করেছে? পাতানো ম্যাচ খেলে ম্যাচ জমানোর চেষ্টা করেছে? উত্তর হচ্ছে, না! তাঁরা পারে নাই। হঠাৎ করে ক্রিকেটে এরকম হতেই পারে। উইকেট পড়ে গেছে, ছোট টার্গেটের ট্রিক তাঁরা ঠিকমতো সামলাতে পারে নাই। হঠাৎ উইকেটের প্রেশারে উলটাপাল্টা শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছে! এজন্যেই এটা গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা।

আবার ৮ বলে ১৬ রান দরকার, এই অবস্থায় এতক্ষণ ভালো বল করা মাগালা টানা দুইটা নো বল করলেন! এই যে নো বল দুইটা, তাতে ফ্রি হিটে ছক্কা মেরে পাকিস্তানের ম্যাচে ফিরে আসা- এইটাকে সাদা চোখে দেখলে মনে হতেই পারে যে মাগালা ইচ্ছা করে নো বল করে পাকিস্তানকে ফ্রি হিট দিয়ে দিল!

কিন্তু আমরা যখন খেলা দেখি এটা চিন্তা করেই খেলা দেখি যে এরকম হতেই পারে। এইটাই প্রেশার। এজন্যই আমরা একে আগে ‘চোকিং’ নাম দিয়েছিলাম! ফ্রি হিটে ছক্কা খাবার পরে মাগালার ফ্রাস্ট্রেশনে যে উইকেটের উপর থাপ্পড় মেরে বেল ফেলে দেয়া সেটাও অভিনয় না!

এটাই ক্রিকেট। এখানে হঠাৎ করে নো বল হতে পারে। ৮ বলে ১৬ রান এক ধাক্কায় ৭ বলে ৭ হয়ে যেতে পারে! ৯২/১ (৯ ওভার) থেকে ১৩০/৭ (১৮ ওভার) হয়ে যেতে পারে!

শুধুমাত্র এগুলো দেখবো বলেই আমরা ক্রিকেট দেখি। এইটাকে আমরা পাকিস্তানের গ্লোরিফাইং আনপ্রেডিক্টেবিলিটি বলেই ব্যাখ্যা করেছি, দক্ষিণ আফ্রিকার ‘চোকিং’ বলে হতাশা প্রকাশ করেছি! কিন্তু একটু অনিশ্চয়তার ব্যাপার হলেই ‘ম্যাচ পাতানো’ বলে চিল্লাচিল্লি করিনি!

কারণ সেটার জন্যই আমরা ক্রিকেট দেখি। যদি ওই চিল্লানো চিল্লাতাম, তাহলে ছোটবেলার রেসলিং দেখার মজা এখনও পেতাম। কারণ আমরা যখন জেনেছি যে রেসলিং পাতানো, তখন একটু বড় বয়সে এসে সেই পাতানো খেলা আর দেখতে ভালো লাগে নাই!

অনিশ্চয়তা আর উত্তেজনার খেলা বারংবার উপহার দেয়ায় ক্রিকেটের সকল কুশীলবদের ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link