Social Media

Light
Dark

এক প্রজন্মের স্বপ্ন ‘বাতিগোল’

ডিয়েগো ম্যারাডোনা এবং লিওনেল মেসি; এর আগে পরে আর কিছু নেই?

একটু যাদের স্মৃতি ভালো, তারা হয়তো মারিও কেম্পেসের নাম বলবেন। একটু যারা বিস্তারিত খোঁজ রাখেন, তারা হয়তো গয়কোচিয়া বা ক্লদিও ক্যানিজিয়ার নাম করবেন। তারপর? এখানেই শেষ?

এহ। এবার আর্জেন্টিনার সমর্থকরা নিশ্চয়ই চটে উঠবেন।

আমরা তো বাতিগোলের নাম করিনি। হ্যাঁ, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। ম্যারাডোনার স্বর্ন সময়েও মানুষ যাকে আলাদা করে চিনতে পেরেছিল। আর্জেন্টিনার হয়ে যিনি আলাদা করে নিজেকে চেনাতে পেরেছিলেন সেই বাতিস্তুতা।

আজকের মেসি-আগুয়েরো-ডি মারিয়া বা তেভেজের কথা তুলে রাখলে ম্যারাডোনার পর নব্বই পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় আর্জেন্টাইন নিশ্চয়ই বাতিস্তুতা।

নাম খুব বেশী লোকের পরিচয় তুলে ধরতে পারে না। কিন্তু তার ক্ষেত্রে নামটাই সব বলে দেয়। তার ডাক নাম-বাতিগোল। তার মানে, গোল করাই তার কাজ!

 

আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ গোল এবং ১৯৯৪ এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক; সোনালী চুলের ফুটবলার। ব্যস! এতটুকুই পর্যাপ্ত গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে পরিচয় করানোর জন্য।

ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল রোজারিও এর ছোট্ট ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে। কিন্তু মোটা হওয়ার কারনেই অনেকে তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল নামডাকহীন এক ক্লাবে। সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে যোগ দেন বিখ্যাত ক্লাব রিভারপ্লেটে। কিন্তু এখানে থিতু হতে পারেননি।

এক মৌসম পরে পাড়ি জমান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে। এখানেই নিজেকে চেনান বাতিগোল। নজর কাড়েন ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্টিনার। ১৯৯১ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে পাড়ি জমান ফিওরেন্টিনাতে। ক্যারিয়ারের স্বর্নালী সময়ে খেলেন ফিওরেন্টিনাতে। এখানে দুর্দান্ত প্যারফরমেন্স করে মন জয় করে নেন। বাতিস্তুতা ছিলেন তার সময়ে ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা।

বাতিগোলের ইনজুরির বছরে ফিওরেন্টিনা রেলিগেটড হয় নেমে আসে সিরি ‘বি’ তে। তখনও ক্লাব ছাড়েননি। ছিল নামীদামী সব ক্লাবে যোগ দানের সুযোগ। ছাড়বেন কেন? তিনি যে এখানে এসেছিলেন শিরোপা জিততে। এক মৌসম পরেই দলকে তুলে আনেন সিরি ‘এ’ তে। সেই বছরেই দলকে জেতান কোপা ইতালিয়া ও সুপার কাপের শিরোপা। বাতিস্তুতার স্বপ্ন ছিল সিরি ‘এ’র শিরোপা জেতা। কিন্তু মিলানের দাপটে ফিওরেন্টিনার হয়ে জেতা হয়নি সিরি ‘এ’ শিরোপা।

দীর্ঘ ৯ মৌসমে ১৫২ গোল করে বনে যান সিরি এ-তে ফিওরেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলাদাতা। ২০০০ সালে, ২৩.৫ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি তে যোগ দেন আরেক ইতালিয়ান জায়ান্ট রোমাতে। রোমায় এসে জুটি বাঁধেন ২৪ বছরে তরুণ টট্টির সঙ্গে। জেতেন স্বপ্নের শিরোপা সিরি এ। রোমাতে দুই মৌসুম খেলে ইন্টার মিলান হয় কাতারের আল-আরাবি ক্লাবে ক্যারিয়ার শেষ করেন বাতিস্তুতা।

ক্লাব ক্যারিয়ারের খুব বেশি বড় শিরোপা জেতার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। হবেই বা কি করে? খেলেননি কোনো নামীদামী ক্লাবে। কিন্তু পেয়েছেন সমর্থকদের অগাধ ভালোবাসা। ফিওরেন্টিনাকে দুইটি শিরোপা এনে দিয়ে পেয়েছেন ফ্লোরেন্স শহরের ভালোবাসা। ফ্লোরেন্সে বসেছে বাতিস্তুতার আবক্ষ ব্রোঞ্জের মূর্তি। মিলানের একক আধিপত্যের সময়ে পরিণত হয়েছেন ফিওরেন্টিনার নায়কে।

ক্লাব ক্যারিয়ার অর্জন খুব কম হলেও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন কোপা আমেরিকা আর কনফেডারেশন কাপের শিরোপা। তার হাত ধরেই এসেছে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ শিরোপা। তাই তাকে বলা হয় আর্জেন্টিনার স্বর্ণালী সময়ের রাজপুত্র। হয়েছিলেন আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা।

রোনালদো, রিভালদো, রোমারিওদের যুগে ফুটবল বিশ্বকে শাসন করেছেন। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেয়া শট কিংবা পর পর ২ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক। সব কারনেই মনে রাখবে ফুটবলপ্রেমীরা।

আবারও সেই নব্বইয়ের দশকটা মনে করা যাক।

সে সময় ম্যারাডোনা ছাড়া আর্জেন্টিনা ভক্তদের কাছে আর কিছুর অস্তিত্ব নেই। সেই ম্যারাডেনাও ১৯৯৪ সালে শেষ হয়ে গেলেন। ২০০২ সালে এসে আর্জেন্টিনা পেলো নতুন একটা প্রজন্ম। এই যে মাঝের সময়টা আর্জেন্টিনার নিভু নিভু বাতিতা জ্বালিয়ে রেখেছিলেন একজন বাতিস্তুতা। আর্জেন্টিনার শেষ আর্ন্তজাতিক ট্রফিটা জয়ে ছিল তাঁর ছোঁয়া।

কেবল একজন ফুটবলার হিসেবে দেখলে বাতিস্তুতাকে হয়তো বিরাট কোনো কিংবদন্তী মনে হবে না। কিন্তু আর্জেন্টিনার এই বাতি জ্বালিয়ে রাখাটা দেখলে বুঝতে পারবেন, তিনি কেনো একটি প্রজন্মের ধারক।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link