যাদের ব্যাটে সফল চেন্নাই

চেন্নাই সুপার কিংসের তিন তারকা - আম্বাতি রাইডু, আজিঙ্কা রাহানে এবং শিভাম দুবে দাঁড়িয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ভিন্ন তিন পর্যায়ে। তবে টি-টোয়েন্টিতে তাঁদের ফর্মটা মোটেই তাঁদের পক্ষে কথা বলছিল না। কিন্তু তাঁদের তিন জনের কাছে থেকেই সেরাটা আদায় করে চেন্নাই সুপার কিংসকে তাঁদের ইতিহাসের পঞ্চম আইপিএল শিরোপা জেতালেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। 

চেন্নাই সুপার কিংসের তিন তারকা – আম্বাতি রাইডু, আজিঙ্কা রাহানে এবং শিভাম দুবে দাঁড়িয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ভিন্ন তিন পর্যায়ে। তবে টি-টোয়েন্টিতে তাঁদের ফর্মটা মোটেই তাঁদের পক্ষে কথা বলছিল না। কিন্তু তাঁদের তিন জনের কাছে থেকেই সেরাটা আদায় করে চেন্নাই সুপার কিংসকে তাঁদের ইতিহাসের পঞ্চম আইপিএল শিরোপা জেতালেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

রাইডু সম্পর্কে ধোনি একবার বলেছিলেন, ‘তাঁকে দলে নিলে আমি কখনোই ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডটা জিতবো না, তবে আমি যেটা জানি সেটা হলো সে মাঠে সব সময় নিজের সেরাটাই দেবে।” রাইডু হয়তো সহজেই মেজাজ হারান, আবেগী হয়ে পড়েন – কিন্তু মাঠে তাঁর আত্ননিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। এবারের আইপিএল ফাইনালের দুদিন আগে অবসরের ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেন আর কোনো নাটকীয়তা নয়।

ক্যারিয়ারের শেষটা শিরোপা দিয়েই রাঙিয়ে গেলেন এই তারকা। ২০১৮ আইপিএলে নিজের সেরা সময়টা কাটিয়েছিলেন রাইডু। সেবারের আসরে ১৬ ম্যাচে ১৫০ স্ট্রাইকরেটের ৬০২ রান করে চেন্নাইকে শিরোপা এনে দেয়ার মূল কারিগর ছিলেন তিনি। অথচ মাস ছয়েক বাদে ফিটনেসের অজুহাত দিয়ে কিনা তাঁকেই বাদ দেয়া হয় ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে।

সেই সময়টাতে হতাশ রাইডু হয়তো ক্রিকেটটাই ছেড়ে দিতেন। কিন্তু এগিয়ে আসে চেন্নাই সুপার কিংস, তাঁদের সিইও কাশী বিশ্বনাথন রাইডুকে দায়িত্ব দেয় শিশুদের ক্রিকেট শেখানোর। এরপরই মূলত ধীরে ধীরে আবারো বাইশ গজে ফেরেন এই তারকা।

ব্যক্তিগত জীবনে স্বল্পভাষী রাইডু মাঠে যতটা আগ্রাসী, মাঠের বাইরে ঠিক ততটাই হাসিখুশি। তাঁদের ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়েই উত্থান-পতনের গল্প। ২০০২ সালে দলের মূল তারকা হয়েই ছোটদের বিশ্বকাপে যাওয়া, এরপর বিতর্কিত আইসিএলে গিয়ে এক প্রকার মূলস্রোত থেকে হারিয়েই গিয়েছিলেন। এরপর ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় ফিরে আসেন জাতীয় দলেও।

আইপিএলের ফাইনাল শেষে রাইডু বলেন, ‘আমি এখন বাকি জীবনটা হাসিখুশি হয়েই কাটিয়ে দিতে পারবো। গত ত্রিশ বছর ধরে যত পরিশ্রম করেছি, আজকে রাতে যেভাবে সবকিছু শেষ হলো তাতে আমি খুশি।’

ফাইনালেও নিজের ব্যাটিংয়ের ছাপ রেখেছেন এই তারকা। মোহিত শর্মাকে টানা দুই ছক্কা এবং চার হাঁকিয়ে জয়ের আরো কাছাকাছি পৌঁছে দেন দলকে।

অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টিতে এক প্রকার বাতিলের খাতাতেই চলে গিয়েছিলেন আজিঙ্কা রাহানের। এবারের আইপিএলে চেন্নাই যখন তাঁকে দলে ভেড়ায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটা নিয়ে হাসাহাসি হয়েছিল বিস্তর। চেন্নাই কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসে রাহানের সাথে কাজ করেছেন, জানতেন এই তারকার সামর্থ্য। সে কারণেই মাত্র ৫০ লাখ রুপিতে রাহানেকে দলের ভেড়াতে দুবার ভাবেননি।

ফ্লেমিং বলেন, ‘মৌসুমের মাঝপথে সে দুর্দান্ত ফর্মে ছিল। সে আমাদের শুরুর প্ল্য্যানে ছিল না, কিন্তু মুম্বাইয়ের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েই অনবদ্য এক ইনিংস খেলেছিল।’

অথচ টসের ঠিক আগ মূহুর্তে একাদশে থাকার কথা জানতে পারেন এই তারকা। বেন স্টোকস এবং মঈন আলীর ইনজুরিতে সুবাদে কপাল খোলে তাঁর। ২০২০ আইপিএলের পর আর ফিফটি পাননি, প্রিয় ফরম্যাট টেস্টেও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। সব মিলিয়ে রাহানের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই।

কিন্তু এবারের আইপিএল দিয়ে ক্যারিয়ারের রীতিমতো পুর্নজাগরণ ঘটে রাহানের। অসাধারণ সব ইনিংসে সবাইকে চমকে দেন, তাঁর বিধবংসী ব্যাটিংয়ের জবাব ছিল না প্রতিপক্ষের কাছে। আইপিএলের দারুণ ফর্মের সুবাদে জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের স্কোয়াডে।

অন্যদিকে, ২০২২ আইপিএলে ভুলে যাবার মতোই এক মৌসুম কাটিয়েছিলেন শিভাম দুবে। বিশেষ করে শর্ট বলের বিপক্ষে তাঁর দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সে কারণেই কিনা চেন্নাই এবারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাঁদের শক্তিমত্তাকে সঙ্গী করেই এগোনোর।

স্পিনের বিপক্ষে ছক্কা হাঁকানোর দক্ষতাকে রীতিমতো অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এই তারকা। যুজবেন্দ্র চাহাল, রশিদ খান কিংবা সুনীল নারাইন কেউই রক্ষা পাননি দুবের ব্যাট থেকে।

আইপিএলের ফাইনালে খানিকটা ধীর গতিতে শুরু করেছিলেন দুবে। প্রথম ১১ বলে নিতে পেরেছিলেন মাত্র ১২ রান, অন্যদিকে, রান রেটের চাপ বাড়ছিল দ্রুত গতিতে। রশিদ খান বোলিংয়ে আসতেই যেন বদলে দিলেন চিত্রটা, টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে চাপটা উড়িয়ে দিলেন এক নিমিষে।

ফ্লেমিং বলেন, ‘আমরা শুরুতে দুবেকে নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। তবে ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংসের পর আর দুবার ভাবতে হয়নি তাঁকে নিয়ে। মাঝের ওভারে আমাদের যে ধরনের ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার দরকার ছিল, দুবে ছিল সেরকম একজন।’

গত মৌসুমে ভুলে যাবার মতো সময় কাটিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। মৌসুমের মাঝপথে অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন, দল ছাড়ার গুঞ্জন ছিল। সমর্থকদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। সবাই বলে বাইশ গজে কোনো রূপকথার গল্প লেখা হয় না। কিন্তু জাদেজার ফিরে আসার অবিশ্বাস্য গল্পটাক আপনি রূপকথা ছাড়া আর কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন!

বোলিংয়ে ফেরালেন অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা শুভমান গিলকে, এরপর রান তাড়ার অবিসংবাদিত নায়ক তো তিনিই। শেষ দুই বলে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে জয় এনে দেয়ার কাজটা তাঁর চাইতে ভালো আর কেই বা পারতো!

ফ্লেমিং বলেন, ‘গত দেড় বছর তাঁর জন্য কঠিন ছিল। ইনজুরি-অধিনায়কত্ব সবমিলিয়ে সে বেশ চাপে ছিল। সে এবারের মৌসুমে বল হাতে দারুণ ফর্মে ছিল। নিচের দিকে আমাদের এমন কাউকে দরকার ছিল যে কিনা ঝড়ো ইনিংস খেলতে পারবে, সে কারণেই তাঁকে নিচের দিকে ব্যাট করানো হয়েছে। আইপিএলের ফাইনালে জাদেজা সেই আস্থারই প্রতিদান দিয়েছে। সে আমাদের এক নম্বর অলরাউন্ডার এবং ফাইনালে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে।’

এবারের আইপিএল রোলার কোস্টার রাইড ছিল চেন্নাইয়ের জন্য। ইনজুরির কারণেই কোনো ম্যাচেই নিজেদের সেরা একাদশ নামাতে পারেনি দলটি। মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেও হাঁটুর ইনজুরি সঙ্গী করেই গোটা মৌসুম খেলে গেছেন। কিন্তু সবার থেকে সেরাটা আদায় করেই আরো একবার আইপিএল সেরা হলেন ধোনি-ফ্লেমিং জুটি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...