একই অঙ্গের হাজার রূপ

অনেক রকমের জুতোয় পা গলানো – এই বাক্যের আদর্শ উদাহরণ খুঁজতে ক্রিকেট বিশ্বে বেছে নেওয়া যায় এক লঙ্কানকে। প্রথমত তিনি অবশ্যই একজন ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কার হয়ে ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপও জিতেছেন, বড় ভূমিকাও রেখেছেন। তবে, ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যতটা না – তাঁর চেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন আইসিসির এলিট ম্যাচ অফিসিয়াল হিসেবে। আইসিসির ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানিত ম্যাচ রেফারির নাম করলে তিনি আসবেনই।

অনেক রকমের জুতোয় পা গলানো – এই বাক্যের আদর্শ উদাহরণ খুঁজতে ক্রিকেট বিশ্বে বেছে নেওয়া যায় এক লঙ্কানকে। প্রথমত তিনি অবশ্যই একজন ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কার হয়ে ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপও জিতেছেন, বড় ভূমিকাও রেখেছেন।

তবে, ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যতটা না – তাঁর চেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন আইসিসির এলিট ম্যাচ অফিসিয়াল হিসেবে। আইসিসির ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানিত ম্যাচ রেফারির নাম করলে তিনি আসবেনই।

যদিও, বেশ আগেভাগেই সেই কাজটায় ইস্তফা দিয়েছেন। মনোযোগ দিয়েছেন নিজের পারিবারিক ও ব্যবসায়িক জীবনে। তিনি শ্রীলঙ্কার ওষুধ বাজারজাতকরণ ব্যবসার সাথে জড়িত। এখানেই শেষ নয়, ‘জ্যামন’ নামের একটা ফুড ডেলিভারি অ্যাপও আছে তাঁর। অনেকটা আমাদের পাঠাও কিংবা ফুডপান্ডার মত ব্যাপার-স্যাপার।

সেই ভদ্রলোকটি হলেন দেশবন্ধু রোশান সিরিবর্ধনে মহানামা। ছোট করে বললে – রোশান মহানামা। শুধু ডান হাতি ব্যাটসম্যানই ছিলেন না ক্যারিয়ারে, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফিল্ডারদের একজন তিনি।

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় সময়? – অবশ্যই ১৯৯৭ সালের কলম্বো টেস্ট। ভারতের বিপক্ষে ২২৫ রানের ইনিংস খেলেন মহানামা। সেই সময় সনাথ জয়াসুরিয়া ও মহানামার সৌজন্যে বোর্ডে ৯৫২ রান জমা করে শ্রীলঙ্কা – ম্যাচ ড্র হয় যদিও।

সেই ইনিংসে দ্বিতীয় উইকেটে জয়াসুরিয়ার সাথে মহানামা ৫৭৬ রান যোগ করেন। তখন সেটা টেস্টের সবচেয়ে বড় জুটি ছিল। নয় বছর বাদে সেই জুটি ভাঙেন তাঁরই দুই স্বদেশি কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপটা মহানামা খেলেছেন ওপেনার হিসেবে। হ্যাঁ, আশির দশকের শেষে ও নম্বই দশকের গোড়ায় অরবিন্দ ডি সিলভার অধীনে তিনি ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই বিশ্বকাপে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮৯ বলে করেন ৫৯ রান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩১ বলে ৮০ রান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২১ বলে ৬৮ রান করেন তিনি।

এর আগে স্কুল ক্রিকেটে ‘বিগ ফ্যাক্টর’ ছিলেন মহানামা। আন্তস্কুল প্রতিযোগীতাগুলোতে রীতিমত রানের চূড়ায় উঠতেন নিয়মিত। ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ – টানা দু’বছর তিনি বর্ষসেরা স্কুল ক্রিকেটার নির্বাচিত হন।

মহানামা ২৬৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। প্রায় আট হাজারের কাছাকাছি রান করেছেন। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় আসে ১৯৯৯ বিশ্বকাকে। সেই বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে ২৭.২০ গড়ে করেছিলেন মাত্র ১৩৬ রান। বিশ্বকাপ শেষে দল থেকেই জায়গা হারান।

এর কিছুদিন বাদেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলেন। অবসরের ব্যাখ্যাটা ছিল মোক্ষম। তিনি বলেছিলেন, ‘যখন দেখবেন আপনার চেয়েও বয়সে বড় ক্রিকেটাররা সুযোগ পাচ্ছেন, কিন্তু আপনার সুযোগ আসছে না – তখন বুঝে নেবেন আপনাকে দিয়ে আর হচ্ছে না।’

না, এই বিদায় ঠিক বিদায় নয়। আরো প্রবল বেগে তিনি ফিরেছেন ক্রিকেটে। ম্যাচ রেফারি হিসেবে গড়েছেন ইতিহাস। টানা ১১ বছর ছয় মাস ও ১৫ দিন তিনি ম্যাচ রেফারির পদে ছিলেন। এই সময়ে তিনি ৩১৮ টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতিহাসের প্রথম ম্যাচ রেফারি তিনি যিনি দিবারাত্রীর টেস্টে দায়িত্ব পালন করেছেন।

যখন বিদায় নেন তখন ম্যাচের দিক থেকে তাঁর চেয়ে এগিয়ে ছিল কেবল রঞ্জন মাদুগালে, ক্রিস ব্রড ও জেফ ক্রো। হ্যাঁ, এই তালিকায় মাদুগালেই সবচেয়ে তরুণ। যখন কাজটা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন – তখন বয়স মোটে ৫০ ছুঁয়েছে।

মহানামার আরেকটা পরিচয় আছে। শ্রীলঙ্কায় নিজের গ্রামে তিনি একটা প্রি-স্কুল ও প্রাইমারি স্কুল নির্মাণ করেছেন। সেখানে বিনামূল্যে শিক্ষা নিতে পারেন দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারীরা। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে হয়তো রোশান মহানামার মানের ক্রিকেটার হাজারো আছেন, কিন্তু, সবাই কি তাঁর মানের মানুষ হতে পেরেছেন? উত্তরটা পাঠকরাই ভাল দিতে পারবেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...