১৬ তম ওভারের চতুর্থ বল। মিনিস্টার ঢাকার একমাত্র ভরসা হয়ে তখন বাইশ গজে দাঁড়িয়ে আছেন আন্দ্রে রাসেল। নাসুমের বলে সিঙ্গেল নেয়ার সুযোগ থাকলেও নিজের কাছে স্ট্রাইক রাখলেন। একবার লেগের উপর দিয়ে ছয় মারার শ্যাডো প্র্যাকটিস করে নিলেন। নাসুমের পরের বলেও মারলেন রাসেল, তবে সেটা গিয়ে সরাসরি পড়লো শামীম পাটোয়ারির হাতে। স্নায়ুচাপের এক যুদ্ধ জয় করে নাসুমের বুনো উল্লাস।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্পিন বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন। গতবছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়েরও ছিলেন অন্যতম নায়ক। বিশেষ করে খেলা যখন বাংলাদেশের মাটিতে নাসুম আহমেদ তখন এক ভরসার প্রতীক। নাসুমের প্রতি ভরসা রেখেছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সও। ডিরেক্ট সাইনিংয়ে এই বাঁহাতি স্পিনারকে দলে ভিড়িয়েছিল চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে সেই প্রতিদানই দিলেন নাসুম আহমেদ। রাতের ম্যাচগুলোতে শিশিরের কারণে স্পিনাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তবুও মিরপুরে অপ্রতিরুদ্ধ নাসুম আহমেদ। আজ ঢাকার ব্যাটসম্যানদের রীতিমত নাভিঃশ্বাস তুললেন। নাসুমের বোলিং স্পেলেই টানা দুই হার দেখতে হলো তামিম, রিয়াদদের নিয়ে গড়া ঢাকাকে।
নিজের প্রথম শিকার হিসেবে তুলে নেন নাঈম শেখের উইকেট। এরপরই নেন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট। পরপর দুই উইকেট হারিয়েই চাপে পড়ে ঢাকা। তবুও শেষ আশা হয়ে বাইশ গজে এসেছিলেন আন্দ্রে রাসেল। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই তারকাকেও স্নায়ুযুদ্ধে হারান নাসুম আহমেদ।
মিরপুরের উইকেটে তিনি যে কতটা ভয়ংকর তা আরেকবার প্রমাণ করলেন এই স্পিনার। শুধু তিন উইকেট নিয়েই নয়, তাঁর ইকোনমি রেটও ছিল অবিশ্বাস্য। চার ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ৯ রান। ডট বল দিয়েছেন মোট ১৯ টি। একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৪ টি বল করে বাউন্ডারি খেয়েছেন মাত্র ১ টি।
এছাড়া চট্টগ্রামের তরুণ তুর্কি শরিফুল ইসলামও করেছেন দারুণ বোলিং। তামিম ইকবালকে ফিরিয়েছেন এই পেসার। এছাড়া সবমিলিয়ে চার ওভার বোলিং করে শরিফুল নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়া মুকিদুল ও নাইম নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
ফলে অভিজ্ঞ দল নিয়েও টানা দুই ম্যাচে হারলো মিনিস্টার ঢাকা। তামিম একবার দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করলেও কোনটিই ম্যাচ জেতাতে পারেনি ঢাকাকে। আজকের ম্যাচে অবশ্য তামিমের ইনিংসই ঢাকাকে ধীরগতির শুরু এনে দিয়েছে। প্রথম ১৫ বল খেলে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৩ রান। ফলে ১৬২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমেও পাওয়ার প্লের ব্যবহার করতে পারেনি ঢাকাকে। সেখানেই মূলত পিছিয়ে পড়ে ঢাকা।
তামিম ইকবাল শেষ প্ররযন্ত ৪৫ বল খেলে করেন ৫২ রান। ফলে পরের ব্যাটসম্যানরা আর রানরেটের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাটিং করতে পারেননি। তাই তামিমের ইনিংস ঢাকার জন্য আদৌ উপকারী ছিল কিনা সেই প্রশ্নও তোলা যায়। বাংলাদেশের হয়েও এমন স্লো ব্যাটিং করার জন্য সমালোচিত হচ্ছিলেন এই ব্যটসমান। এরপর লম্বা সময়ধরেই তাঁর আর টি-টোয়েন্টি খেলা হচ্ছেনা। এই ব্যাটসম্যান বিপিএলে নিয়মিত রান করলেও সেই রানের কার্যকারিতা নিয়ে থেকে যায় প্রশ্ন।
তবে সব ছাপিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেকে আরেকবার প্রমাণ করে দেখালেন নাসুম। শিশিরের বাঁধা টপকে তাঁর বোলিং এ হিমসিম খেলেন তামিম, রিয়াদ, রাসেলরা। মিরপুরে নাসুম লিখলেন অবিশ্বাস্য এক কাব্য, নাসুমনামা।