আলোর বাইরে নীরব লড়াই

তিনি একটু অন্যরকম।

তিনি ঋষাভ পান্তের মতো গ্লামারাস নন। তিনি বিরাট কোহলির মতো হিরো নন। এমনকি চেতেশ্বর পূজারার মত ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ’ বলেও বিশেষ কোনো হইচই হয় না তাঁকে নিয়ে। অনেক আলোর আড়ালে লড়াই করে যেতে হয় তাকে।

ভারতে চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), ইংল্যান্ডে চলছে কাউন্টি ক্রিকেট। এরও বাইরে প্রদীপের অনেক দূরে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে লড়াই করে তিনি জানান দিচ্ছেন নিজের উপস্থিতির। ব্যাট দিয়েই বোঝাচ্ছেন, তিনি লড়তে জানেন। হ্যাঁ, লড়াই করতে জানেন হনুমা বিহারি।

২০১৮ সালে টেস্ট অভিষেক হয়েছে। তার আগেই ভারতের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অসাধারণ এক নামে পরিণত হয়েছেন। চার বছর ধরে টেস্ট দলে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এর মধ্যে একটি সেঞ্চুরি, পাঁচটি ফিফটিসহ আট শতাধিক রানও করে ফেলেছেন। কিন্তু গত বছরের সিডনি টেস্টের আগে পর্যন্ত যেনো তাকে কেউ চিনতোই না।

সিডনিতে ১৬১ বলে ২৩ বলের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ বাঁচিয়েছিলেন। সারা শরীরের স্টার্ক-কামিন্সদের আঘাতের ক্ষত নিয়েও পড়েছিলেন উইকেটে। ভারতীয়রা সেই প্রথম যেনো উপলব্ধি করল, হনুমা নামেও একটি ছেলে আছেন – যিনি লড়তে জানেন বুক চিতিয়ে।

সিডনিতে সেই ঐতিহাসিক টেস্টের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ সহ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও সুযোগ পাননি বিহারি। সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তার জায়গায় সুযোগ পান শ্রেয়ার আইয়ার। এরপর সবশেষে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবারও খেলার সুযোগ পান বিহারি! বিরাট কোহলি ও আইয়ার না থাকায় মূলত সুযোগ মেলে বিহারির। প্রথম ইনিংসে ২০ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংস।

এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে প্রথম টেস্টেই সুযোগ পান তিনি। তিনে ব্যাট করতে নেমে খেলেন ৫৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। প্রায় চার বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৩ টেস্ট। যেখানে বিহারির অভিষেকের পর ৩৫ টেস্ট খেলেছে ভারত! ৫,৬,৭ এ ব্যাটিং করা বিহারি এবার সুযোগ পেয়েছেন তিনে! তবুও এখন পর্যন্ত দলে কোনো স্থায়ী জায়গা পাননি এই ব্যাটার।

বিহারিকে দলে জায়গা পাঁকা করতে হলে প্রতিনিয়ত পারফরম্যান্সের লড়াই করতে হবে শ্রেয়াস আইয়ার কিংবা শুভমান গিলদের সাথে। তবে তামাম ক্রিকেট বোদ্ধারা মনে করেন তিন নম্বরে বিহারি আদর্শ একজন ব্যাটার হতে পারে! টেকিনিকের জন্য পুজারা একটু এগিয়ে থাকলেও সব দিক মিলিয়ে বেশ সম্ভাবনাময় এক তারকা হনুমা বিহারি!

এরপর আবার তিনি সব আলোচনার বাইরে।

টেস্ট খেলছেন, রান করছেন। রঞ্জি খেলছেন; নিয়ম করে সেঞ্চুরি করছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে কারো কোনো আগ্রহ নেই। তার ভাবাবেগশূন্য চেহারা যেনো বলে দেয়, তিনিও এই আগ্রহের খুব ধার ধারেন না।

ভারতীয় দলের আশেপাশে যারা আছেন, তাদের সবাইকেও এই সময়টা গ্রাস করে রেখেছে আইপিএল। কোটি কোটি রুপির এই ঝণঝনানির আসরে হনুমাকে নিয়ে কারো আগ্রহ নেই। তিনি দল পাননি। সে দল তো পূজারাও পাননি। কিন্তু পূজারা কোথায়? তিনি কাউন্টি খেলতে চলে গেছেন ইংল্যান্ডে।

হনুমার যেন সেখানেও কোনো খুটির জোর নেই। একেবারেই বেকার ছেলেটির মত অনুশীলন করছিলেন। তখন ডাক পেলেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ থেকে, আবাহনীর হয়ে খেলার জন্য। শুরুটা খুব ভালো না হলেও শেষ তিন ম্যাচে ৪৫, অপরাজিত ১১২ এবং ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছেন।

যেন হনুমা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, তিনিও পারেন। এবার কী হনুমাকে নিয়ে লোকেদের একটু আগ্রহ তৈরি হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link