বুকের আগুন ব্যাটে দ্বিগুন

এই সুযোগটা তাঁর নামে লেখা হয়েছিল আগেই। তিনি যে আসবেন দলে সেটা জানাই ছিল। অপেক্ষা ছিল কেবল একটা মোক্ষম সময়ের। আর সেই সময়টাও পেয়ে গেলেন শাহাদাত হোসেন দিপু।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই দলে নতুন মুখদের একজন এই দিপু। ঘরোয়া লিগে পারফর্ম করে সুযোগ পেলেন জাতীয় সার্কিটে। দিপুর জীবনের বিরাজ করছে সবচেয়ে সুখের সময়। তবে ২১ বছর বয়সী দিপুর শুরুর জীবন ছিল না এত সুখের।

২০০২ সালে দিপুর জন্ম। মাত্র ৯ বছর বয়সেই হারিয়েছেন বাবাকে। এমন অবস্থায় পরিবারে চরম সংকট। ছোট দিপুর মনে তখনও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন।

বিধাতা হয়তো দিপুকে সাহসী করতে চেয়েছিলেন ছোটকালেই। বাবাকে হারানোর পর সুযোগ হারিয়েছিল বিকেএসপিতে ভর্তির। ২০১৩ সালে ট্রায়ালে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। এরপর জীবনে এসেছিলেন সুদীপ্ত দেব নামের একজন। তার হাত ধরেই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা।

সুদীপ্তের পরিশ্রমে ইসপাহানি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয় দিপু। এরপর বদলে যায় ক্রিকেটীয় ভাগ্য। বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করে জায়গা পায় অনুর্ধ্ব-১৯ দলে। ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন দাপটের সাথে।

বিসিবির রাডারে যতজন রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার দিপু। উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে করেছেন পারফরম্যান্স। নির্বাচক হাবিবুর বাশারের মন করেছেন জয়। দিপুকে নিয়ে বাশার ছোট করেই বলেছিলেন, খুব গুছানো, টেকনিকও খুব ভালো।

দিপুর টেস্ট মেজাজ অন্তত তাই বলে। উইন্ডিজের এ দলের বিপক্ষে ছিল ৭৩ ও ৫০ রানের ইনিংস। দিপু এমন ইনিংসের ম্যাচে পিচে টিকে থাকার সংগ্রাম করেছিল আফিফ,জাকিররা।

সিলেটে ঘাসের উইকেট দিয়ে ব্যাটারদের পরীক্ষা নিয়েছে ম্যানেজম্যান্ট। সেই পরীক্ষায় পাশ করেছেন দিপু। এর ফলেই সুযোগ পেলেন জাতীয় দলের স্কোয়াডে।

দিপু নিজেকে প্রমাণ করেই এসেছেন জাতীয় দলে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশে সুযোগের সম্ভাবনা কম। তবে এই সুযোগ তরুণ দিপুর জন্য শিক্ষা সফর। কেননা ‘এ’ দল, এইচপি দলের পরিবেশ আর জাতীয়  দলের পরিবেশ কখনই এক নয়।

বর্তমানে লিটন দাসের ব্যাটিং স্টাইল এক প্রকার শিল্প। অনেকেই আবার লিটন দাসের পর জায়গা দিয়েছেন দিপুকে। সেই দিপু এবার সুযোগ পাচ্ছেন লিটন দাসের সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ারের। একই সাথে দলে রয়েছেন আরও অভিজ্ঞ কয়েকজন।

দিপু এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০টি। এই ২০ ম্যাচে করেছেন ১২৬৫ রান। ক্যারিয়ারে ২ শতকের সাথে অর্ধশতক সংখ্যা ১০টি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ডাটাও কথা বলছে দিপুর পক্ষেই। ৩৬ ম্যাচে করেছেন ১১৫০ রান। এখানে অর্ধশতক ও শতক সংখ্যা সমান ৩টি করে। সবশেষ ডিপিএলে দিপু করেছে ৪৮০ রান।

দিপুর ক্যারিয়ার কোথায় গিয়ে থামবে, তা সময়ে বলবে। বাস্তবতা বলছে দিপুকে সঠিক সময়ে জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছে। তবুও জাতীয় দলে পারফর্ম করা নিয়ে কাজ করতে পারে শঙ্কা।

এর আগে মাহমুদুল হাসান জয়ও স্বপ্ন দেখিয়ে করতে পারেননি পূরণ। শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন দল থেকে। দিপুকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিলে তিনি করতে পারেন বড় কিছু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link