কিং ভিভ রিচার্ডস

– তুমি কি আজকাল রাম খাচ্ছো?

– নাহ, ব্র্যান্ডিং!

এই দুই লাইন ছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে দলের বিপজ্জনক অবস্থায় থাকাকালীন ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের কথোপকথন। ৯৯-৪ থেকে ২৯৬-৯। শেষপর্যন্ত এই দুজনের ব্যাটেই বিশ্বকাপ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ভিভ রিচার্ডসের অপরাজিত সেঞ্চুরি আর কলিস কিংসের পঞ্চাশেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় তারা। আর বাকি কাজটি সম্পূর্ণ করেন বিগবার্ড জোয়েল গার্নার, ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে।

ক্রিকেটটা শুরু করলেন। এর পাশাপাশি টুকটাক খেলতেন ফুটবল হতে শুরু করে বক্সিং, বাস্কেটবলও। তবে ক্রিকেটেই তাঁর সব ধ্যানজ্ঞান। স্থানীয় পর্যায়ে নামডাক ছড়াতে থাকল। এক স্থানীয় টুর্নামেন্টে ভিভ রিচার্ডস ব্যাটিং করতে নামলেন। প্রথম বলেই আউট তিনি।

আম্পায়ারের দেয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বললেন বলটি আমার জার্সির কিনারা ছুঁয়ে গেছে, ব্যাট নয়। কিন্তু আম্পায়ার তো পারলে বোলারদের সাথেই আবেদন করেন ভিভকে প্যাভিলিয়নে পাঠাতে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অগত্যা মধুসূদন হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন ভিভ। ততক্ষণে হাজারখানের দর্শক হৈহৈ কাণ্ড শুরু করে দিল।

ম্যাচ দেরিতে শুরু হওয়াতে তারা এমনেই ক্ষ্যাপা ছিল। কিন্তু ভিভকে ভুয়া আউট দেয়াতে তাদের রাগকে আটকানো কঠিন ছিল। এর মধ্যে একজন প্ল্যাকার্ড বের করলেন, তাতে লেখা ছিলো ‘No Viv, no match’, দর্শকদের মাঠে ঢুকতে দেখে খেলোয়াড়রা সব দৌড়ে চলে গেলো প্যাভিলিয়নের দিকে। কিন্তু আটকে পড়লেন ভিভকে আউট দেয়া আম্পায়ার।

ততক্ষণে পুলিশও চলে আসলো। কিন্তু আম্পায়ার সাহেব বাঁচতে পারলেন না দর্শকদের চড়াঘাত থেকে। ড্রেসিংরুম থেকে সবই দেখলেন ভিভ, কিন্তু তাঁর মনে এই নিয়ে নেই কোনো ভাবাবেগ। তাঁর সব চিন্তাজুড়ে রইল ম্যালকম রিচার্ডস, ভিভের বাবা। কড়া নিয়মশৃঙ্খলা পছন্দ করা ম্যালকম রিচার্ডস নিশ্চিত এই ঘটনার কথা জানবেন এবং ভিভকেই দায়ী করবেন।

ম্যালকম রিচার্ডসও ক্রিকেটার ছিলেন, ভালোও খেলতেন কিন্তু নিজে তো হননি এমনকি ভিভও যাতে ক্রিকেট বেছে নিক তাও চাননি। স্কুলে থাকতে একবার গির্জায় যাচ্ছে না ভিভ আর তার ভাই। কারণ তাদের পেটে সমস্যা। ম্যালকম সাহেব একাই চলে গেলেন, একটু পরে মনে পড়লো তিনি তাঁর স্তোত্রবই বাসায় ফেলে এসেছেন। বাসায় যখন যান তখন তাঁর দুই ছেলে একেবারে ক্রিকেট খেলার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে বসে আছে। মেজাজ হারিয়ে পেটালেন দুই ভাইকেই। কিন্তু খেলা থেকে তো ভিভকে দূরে রাখার সামর্থ্য ম্যালকম সাহেবের ছিল না।

হ্যাম্পশায়ার আর গ্ল্যামারগনের মধ্যে ম্যাচ চলছে। স্ট্রাইকে ভিভ রিচার্ডস আর বোলার ম্যালকম মার্শাল। মার্শাল বল করার জন্যে এগিয়ে আসছেন কিন্তু হঠাৎ করেই ভিভ রিচার্ডস সরে দাঁড়ালেন। সবার ধারণা হয়তো সাইটস্ক্রিন জনিত কোনো সমস্যা। ভিভ ঔ সাইটস্ক্রিনের দিকেই এগিয়ে যেতে থাকলেন।

আম্পায়ার আর বোলার মার্শাল দুইজনকেই পার করে গেলেন বাউন্ডারির দিকে। সাইটস্ক্রিনের উপরে পত্রিকার পাতায় বুঁদ এক ব্যাটাকে ডাকলেন, ‘হেয়! ইউ!’

আশেপাশের সবার ডাকাডাকির পর লোকটা যেন কানিকটা সম্বিত ফিরে পেয়ে তাকালেন, ‘হ্যাঁ! আমি?’

– ‘হ্যাঁ, তুমি!’

– ‘ডেভিড গাওয়ার আর রবিন স্মিথ স্লিপে দাঁড়ানো। বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলার বোলিং করছে ভিভিয়ান রিচার্ডসকে। আর তুমি এখানে একটা সামান্য পত্রিকায় বুঁদ হয়ে আছো?’

আরেকবার মার্ভ হিউজ ভিভকে পরাস্ত করলেন কয়েকটি বল, এরপর বললেন আরে, ‘বলটা গোল আর লাল, দেখতে পাচ্ছো না?’ পরের বলেই ভিভ ছক্কা মেরে মার্ভকে বললেন যেহেতু চিনোই বলটি কেমন, ‘যাও খুঁজে নিয়ে আসো এবার।’

ভিভ আর বোথামের একইসাথে সমারসেটের হয়ে অভিষেক হবে ম্যাচের আগে ভিভ বোথামকে বলতে লাগলো আমি তোমার ব্যাপারে যেভাবে শুনেছি তা সত্যি হলে এইবার সমারসেটের সব রান আমি করবো আর সব উইকেট তুমি নিবে।প্রথম ম্যাচে ভিভ মারলেন ডাক আর বোথাম ছিলো উইকেটশূন্য কিন্তু ম্যাচে দুইজনেরই অবদান ছিলো।বোথাম করেছিলো সেঞ্চুরি আর ভিভ ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিল।

কাউন্টিতে সমারসেট আর গ্ল্যামারগনের ম্যাচে বোলার রডনি অনটঙকে বেধড়ক পেটাচ্ছে ভিভ।একেকটা ছক্কা গিয়ে পড়তো পাশের ছোট্টো নদীতে।এত বলই নদীতে পড়েছিলো যে শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে একজনকে নদীতেই রাখা হলো যাতে ম্যাচের সময় নষ্ট না হয়।

উপরের এই গল্পোগুলো ক্রিকেট ফোকলোরে স্থান করে আছে অনেক উপরে। শুনতে মজার মনে হচ্ছে কিন্তু এসব করতে সবাই পারতো না, চিন্তা করার সাহসও অনেকের ছিলো না। ভিভের সোয়াসবাক্লিং মনোভাব তাঁকে আলাদা করেছে অন্য সব গ্রেট ব্যাটসম্যান থেকে। ভিভকে নিয়ে নতুন কিছু লিখার সাহস আমার নেই। ভিভকে নিয়ে লিখা শেষ করবো ভিভের কথা দিয়েই – ‘Life isn’t about partying and frolicking, you have to show you care for people.’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link