সম্ভবত এটাই শেষ সুযোগ। নিজেকে বার্সেলোনায় থিতু করবার সুযোগটা নিশ্চয়ই হাতছাড়া করতে চাইবেন না, ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং। ২০১৯ সালে ডাচ ক্লাব আয়াক্স অ্যামস্টারডামের জার্সি ছেড়ে ব্লাউগানাদের জার্সিটা গায়ে জড়িয়েছেন। এরপর থেকে ঠিক নিজেকে মেলে ধরার পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি তিনি। অধিকাংশ সময়ই তাকে সময় কাটাতে হয়েছে সাইড লাইনে। কেননা বার্সেলোনার মধ্যমাঠে প্রাধান্য পেয়েছে সার্জিও বুস্কেটস।
লম্বা সময় ধরে সার্জিও বুস্কেটস ছিলেন স্পেন ও বার্সেলোনার মধ্যমাঠের কাণ্ডারি। মাঠে তার উপস্থিতি খুব একটা টের পাওয়া যায় না। একটা সময়ে স্পেন জাতীয় দলের কোচ ছিলেন ভিনসেন্ট ডেল বক্স। তিনি একদা বলেছিলেন, ‘আপনি ম্যাচ দেখেন বুস্কেটসকে দেখতে পাবেন না। বরং আপনি যদি বুস্কেটসকে দেখেন তবে পুরো ম্যাচ দেখতে পাবেন।’ ঠিক এতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। ছিলেন না ঠিক এখনও আছেন।
হ্যাঁ, এখনও বার্সেলোনার কোচ জাভির পছন্দের তালিকায় উপরেই রয়েছেন বুস্কেটস। এমনকি ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও স্পেনের অধিনায়ক ছিলেন বুস্কেটস। ঠিক এতটাই গুরুত্ব বহন করেন তিনি।
অন্যদিকে, বার্সেলোনার ঘরের ছেলে পেদ্রি আর গাভি রীতিমত আগুন ঝড়ানো পারফরমেন্স করে যাচ্ছেন সাম্প্রতিক সময়ে। তাইতো বার্সার মিডফিল্ডে ডি ইংয়ের স্থানটা বেশ নড়বড়ে। সে দশা পরিত্রাণের একটা উপায় হিসেবে ডি ইয়ংয়ের সামনে সুযোগ ছিল দল পরিবর্তনের।
গুঞ্জনটাও উঠেছিল বেশ জোড়ালো। ফ্র্যাঙ্কির সাবেক কোচ এরিক টেন হ্যাগ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেওয়ার পরই গুঞ্জনটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তার জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের বিষয়ে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছিল রেড ডেভিলরা।
কিন্তু, ডি ইয়ং থেকে গেলেন। তিনি বরং থাকতে চাইলেন। নিজেকে চ্যালেঞ্জা জানালেন। বার্সার এই কম্প্যাক্ট মধ্যমাঠে নিজের জায়গাটা তৈরি করে নেওয়ার শেষ একটা প্রয়াস তিনি করতে চাইলেন এখানটায় থেকে।
সেই সুযোগটা এল বলে। অবশ্য সেটার আড়ালে একটা বিষাদের গল্প লেখা হচ্ছে। কেননা ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে বুস্কেটস। বেশ কয়েক সপ্তাহ তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে। সে সময়টুকু কাজে লাগাতে নিশ্চিতভাবেই চাইবেন ফ্র্যাঙ্কি। আস্থা অর্জন করা অবশ্য শুরুই করে দিয়েছেন।
একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে নিজের ডানা মেলে ধরতে শুরু করেছেন তিনি। এই তো আর সর্বোচ্চ বছর দু’য়েক। এরপর বুস্কেটস হয়ত তুলে রাখবেন কিউলদের জার্সি। ঠিক তখন তার অপূর্ণতা পূরণের লক্ষ্যে অবশ্যই কাউকে খুঁজবে কাতালান ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সন্ধানের সেই গণ্ডিটা ছোট করে দেওয়ার কাজটি শুরু করে দিয়েছেন ডি ইয়ং।
যদিও দুইজনের খেলার ধরণে বেশ ভিন্নতা রয়েছে। তবুও বুস্কেটসের ফেলে যাওয়ার শূন্যস্থানটা পূর্ণ করবার সামর্থ্য ডি ইয়ংয়ের নিশ্চয়ই আছে। সেই সামর্থ্যের প্রমাণও তিনি রাখছেন।
দারুণ অ্যাথলেট হওয়ার পাশাপাশি ড্রিবলিং করতেও পারদর্শী ডি ইয়ং। এছাড়া স্বল্প দূরত্বে কার্যকর সব পাস খেলতেও সমান পটু তিনি। তরুণ প্রতিভার ছড়াছড়ি বার্সেলোনার বর্তমান দলটি। সে দলে মুক্ত কোন এক রোলে ডী ইয়ংয়ের পূর্ণ সার্ভিসটা আদায় করে নেওয়া সম্ভব।
সে বিষয়টিও নিশ্চয়ই বুঝতে শুরু করে দিয়েছেন সাবেক ব্লাউগানা তারকা জাভি। তাইতো এই মৌসুমে মূল একাদশে প্রায় নিয়মিত এক মুখ ডাচ এই খেলোয়াড়। শেষবার যখন তার বার্সা ছাড়ার গুঞ্জন উঠেছিল তিনি তখন সকল গুঞ্জন প্রত্যাখান করেছিলেন।
আর সেবার তিনি নিজেকে ‘আজীবন কিউল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। বার্সেলোনার ঐতিহ্য আর ইতিহাসের একটা অংশ হবার প্রবল ইচ্ছে ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ংয়ের। ইচ্ছেটা এবার ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর পালা কাতালান আকাশে।