টি-টোয়েন্টির লিটন ধাঁধা

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে অনেক সমালোচনার পর শেষ পর্যন্ত নিজের প্রতিভার প্রতিফলন মাঠে দেখাতে শুরু করেছেন লিটন দাস। চলতি বছরে ইতোমধ্যে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে আছেন তিনি। কিন্তু তিন ফরম্যাট একসাথে না ভেবে শুধু টি-টোয়েন্টি নিয়ে যদি ভাবা হয়? তাহলেও কি লিটন সম্পর্কে একই কথা বলা যাবে?

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে অনেক সমালোচনার পর শেষ পর্যন্ত নিজের প্রতিভার প্রতিফলন মাঠে দেখাতে শুরু করেছেন লিটন দাস। চলতি বছরে ইতোমধ্যে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে আছেন তিনি। কিন্তু তিন ফরম্যাট একসাথে না ভেবে শুধু টি-টোয়েন্টি নিয়ে যদি ভাবা হয়? তাহলেও কি লিটন সম্পর্কে একই কথা বলা যাবে?

আপনি কিংবা আমি যাই ভাবি, পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে লিটন এখন যতটা উজ্জ্বল ঠিক ততটাই ম্লান ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে একটি অর্ধশতকের কথা বলা যায়, কিন্তু পুরো বছরের রানখরা এই এক ইনিংসকে অঘটন হিসেবেই উপস্থাপন করছে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টির আগে লিটন দাসের শেষ বিশ ইনিংসে ওই একবারই তিনি ভাল করেছিলেন, বাকিটা সময় ছিলেন একেবারে নিষ্প্রাণ। আবার গত বছরের ষোল ইনিংসে ছিল না কোন ফিফটি, বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি চল্লিশোর্ধ ইনিংস খেললেও স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০ এর মত। দলকেও সেদিন জেতাতে পারেননি।

আরেকটু গভীরে গেলে পাওয়া যাবে আরো তথ্য, শেষ বিশ ইনিংসে মাত্র পাঁচবার ২০ বলের বেশি স্থায়ী হয়েছেন এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। এর মাঝে স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর উপর গিয়েছে মাত্র একবার। সবমিলিয়ে ২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লিটনের ব্যাটিং গড় পনেরোর আশেপাশে!

তবে টানা অফ ফর্ম কাটিয়ে অবশেষে রানের দেখা পেয়েছেন লিটন দাস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪১ বলে ৪৯ রানের ধীরস্থির একটি ইনিংস খেলেছেন তিনি। পুরো সফর জুড়েই টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টির সাথে কিছুটা বেমানান ব্যাটিং করলেও অন্তত এই ম্যাচে শুরুতেই ব্যাকফুটে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন টিম টাইগার্সকে। পুরোপুরি টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিং অবশ্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব কমই দেখা যায়। সে হিসেবেও লিটন দাসের ইনিংসকে মন্দের ভালো বলতে হয়।

কয়েক বছর আগে অবশ্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে লিটন দাস ছিলেন অন্যতম সেরা পারফর্মার। ১৪০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। অথচ এখন স্ট্রাইক রেট হ্রাস পেয়ে নেমে এসেছে ১২২ এ। মূলত টেস্ট এবং ওয়ানডেতে সফল হওয়ার উদ্দেশ্যে লিটন দাস পরিবর্তন এনেছিলেন নিজের ব্যাটিংয়ের ধরনে। আগের মত প্রথম বল থেকেই শট না খেলে ধীরেসুস্থে এগুনোর পরিকল্পনা আছে তার।

সফলতাও মিলেছে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের, অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ দুই ফরম্যাটেই এখন ভরসা করার মত ব্যাটার তিনি। বিশেষ করে টেস্টে লিটন দাস অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন বটে। তাছাড়া সাদা পোশাকে খেলতেও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। তার বর্তমান ব্যাটিংয়ের অ্যাপ্রোচের সাথে বেশ মানানসই টেস্ট ক্রিকেট।

এছাড়া সময় নিয়ে ব্যাটিং করার কারনে ওয়ানডেতেও স্ট্রাইক রেট হ্রাস পেয়েছে এই উইকেট কিপার ব্যাটারের। ব্যাটিংয়ের এই ধাঁচ বদলাতে পারেননি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এসেও, তাই এখন আর আগের মত আক্রমনাত্মক লিটনকে দেখা যাচ্ছে না। অনেকটা পাকিস্তানি তারকা বাবর আজমের মত ইনিংস খেলার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন লিটন। শুরুতে দেখেশুনে এগিয়ে এরপর স্লগ করে ইনিংস বড় করাই মূল লক্ষ্য।

কিন্তু, কখনও কখনও এমন অ্যাপ্রোচ দলের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। কেননা খেলাটা মাত্র ১২০ বলের, তাই অ্যাংকরিং রোল প্লে করতে গিয়ে দলের রানের চাকা থামিয়ে দেয়ার মানে হয় না। বিশেষ করে সবসময় তো আর বাবর আজমের মত শেষদিকে ‘বিগ হিট’ করে দলকে ভাল সংগ্রহ এনে দেয়াও সম্ভব নয়।

আবার ব্যাটিংয়ে স্থায়ী কোন পজিশনে ব্যাট করতে পারছেন না লিটন দাস; নিজের স্বভাবসুলভ ওপেনিংয়ের পাশাপাশি তিন বা চার নম্বরেও কখনো কখনো নামতে হচ্ছে তাকে।

আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নবাগত মুনিম শাহরিয়ার এবং অনেকদিন পর দলে ফেরা এনামুল হক বিজয়কে আরো কিছু ম্যাচ সুযোগ দিবে নির্বাচকরা। তাই বলাই যায় যে, সহসাই ইনিংস উদ্বোধনের দায়িত্বে ফেরা হচ্ছে না লিটন দাসের৷ অথচ টি-টোয়েন্টিতে তিন নম্বর পজিশনে নয় ম্যাচ খেলা লিটন দাসের স্ট্রাইক রেট ১১২.৮। চার নম্বরে সেটা নেমে এসেছে ৮০ এর নিচে।

সামনেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ; এমন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট সামনে রেখে দলের সেরা ব্যাটারকে ভুলভাবে ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয়। তিন নম্বর কিংবা মিডল অর্ডারে খেলিয়ে লিটন দাসের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার কোন অর্থ হয় না। তাই দ্রুতই লিটনের এপ্রোচের সাথে মানানসই ব্যাটিং পজিশন খুজে বের করতে হবে।

অথবা আরেকটা বিকল্প পথ বেছে নিতে পারে টিম ম্যানেজম্যান্টের সামনে। অন্য দুই ফরম্যাটে ক্যারিয়ার-সেরা ফর্মে থাকা লিটনকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বিশ্রাম দেয়া যেতে পারে। ওয়ার্ক লোড কমে গেলে হয়তো আরো ক্ষুরধার লিটনের দেখা পাবে বাংলাদেশ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...