যে মেসিকে চিনি না

নামকরা ইতালিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক লুকা কায়েওলির ‘মেসি’ নামে লিওনেল মেসিকে নিয়ে একটি বই আছে। বইটাকে মেসির বায়োগ্রাফি গোছের কিছু বললেও ভুল কিছু বলা হবে না। প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার বইটা গতবছর পড়েছিলাম।একদিনেই পড়েছিলাম। আফটার অল মেসির গল্প বলে কথা।

বইটাতে মেসির জন্ম থেকে শুরু করে বার্সার লিজেন্ড হবার সব গল্প আছে। আসলে এসব নতুন কিছু নয়। সবাই সব জানে। এরপরেও বই পড়া উচিত। কারণ আমরা সাফল্য কিংবা হাসি অথবা সুসময়ের গল্প পড়তে যেমন পছন্দ করে তেমনি এধরনের ছবি কিংবা ভিডিও দেখতেও ভালবাসি। আমরা যেটা দেখিনা সেটা হল ম্যাচ হারার পরে ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের কান্না কিংবা তাঁদের ব্যর্থতার গল্প।

লুকা কায়েওলির বইতে মেসিকে নিয়ে পাওয়া যাবে অনেক গল্প। বার্সায় পেপ গার্দিওলা মেসিকে ফ্রি রোলে খেলতে দিয়েছিল। ফরোয়ার্ডদের পিছনে। তবে এই কাজ পেপই প্রথম করেছে তা কিন্তু নয়। বাচ্চা মেসির শিশু বয়সের ক্লাব নিউওয়েলসের কোচ আদ্রিয়ান কোরিয়া লেপারসদের (ক্লাবের যুবদল) খেলাতেন ৪-৩-১-২ এ। ধরতে পেরেছেন নিশ্চয়,হ্যা মেসি দুই ফরোয়ার্ডের পিছে খেলতেন।

তুলনামূলক ছোট গড়নের ছিলেন বিধায় প্রচুর ট্যাকেলের শিকার হতে হয়েছে মেসিকে। মাটিতে পড়ে থাকতেন আবার উঠে দাড়াতেন। তবে একবার উঠে দাঁড়ানোর পরে আরো ক্ষিপ্র গতিতে বল পায়ে এগিয়ে যেতেন। তখনকার সময়ে একটা কথা বেশ প্রচলিত হয়েছিল মেসি যখন মাঠে থাকেন তখন দলের কোচের প্রয়োজন নেই। মুখে কিছু না বলেই দলের কোচ আর নেতা বনে যেতেন লিওনেল।

একবার যেকোন কারণে কোচ মেসিকে বিকেলের ট্রেনিং থেকে বের করে দিলেন। খুব সম্ভবত কোচের নির্দেশ অনু্যায়ী ওয়ার্ম আপ না করে সরাসরি ফুটবল নিয়েই অনুশীলন শুরু করেছে মেসি। বেশ কিছু সময় চলে গেল। কোচ ভেবেছিল মেসি এতক্ষণে নিশ্চয় বাড়ি চলে গেছে। হঠাৎ মাঠের বাউন্ডারি ঘেষা কাঁটাতারের দিকে চোখ পড়লো কোচের।

দেখতে পেলেন একটি ছেলে অপলক দৃষ্টিতে মাঠ মানে ফুটবল যেদিকে সেদিকে তাকিয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখলেন ছেলেটার চোখে জল। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মেসি দাঁড়িয়ে আছে, কোচ মেসিকে ড্রেসিং রুমে পাঠালেন যাতে আবার খেলায় যোগ দিতে পারে।

সম্ভবত ২০১০ বিশ্বকাপ হবে। জার্মানির কাছে লজ্জাজনক পরাজয়ের পরে ড্রেসিংরুমে মেসি কেঁদেছিল অঝোরে।বেশ কজনের স্বান্তনার পরেও থামছিল না কান্না। এসব আমরা কিছু দেখি না, দেখতে পাই না। আমরা শুধু দেখি ফুটবলারদের আনন্দের মূহূর্ত। ফুটবলারদের কথা বাদ দেই।

আমাদের নিজেদের কথা বলি। বিপদের সময় খুব একটা কাউকে পাওয়া যায় না। কিন্তু অভিনন্দন জানানোর মানুষের অভাব পড়ে না। উৎসাহ তো দূরে থাক, আপনাকে শুধু ভয় আর ভবিষ্যতে ব্যর্থতার স্মৃতি মনে করিয়ে দিবে।

মেসি এবং আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরেছে,সবাই কেঁদেছে। কদিন আগে বলিভিয়ার সাথে মেসি হ্যাটট্রিক করলেন।পেলেকে ছাড়িয়ে গেলেন। আর্জেন্টিনায় আর্জেন্টাইন মানুষদের সাথে জুলাই মাসে জেতা কোপা উৎযাপন করলেন।মেসি এবারও কাঁদলেন। তবে এবার সুখের কান্না। যেটা সবাই দেখতে পেল। মেসি আমাদের শিখালো দুঃখের কান্না লুকিয়ে কাঁদতে হয় আর সুখের কান্না সবাইকে নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link