অশ্বিন-জাদেজা, স্বর্ণালী এক জুটি

স্পিন বোলারদের স্বর্গরাজ্য ভারত। বিষেণ বেদি, এরাপল্লি প্রসন্ন, ভিএস চন্দ্রশেখর, এস ভেংকটরাঘবনদের সেই বিখ্যাত স্পিন কোয়াট্রেটদের পথ অনুসরণ করেন ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করেছেন অনিল কুম্বলে এবং হরভজন সিং জুটি। তাঁদের উত্তরসূরি হিসেবে স্পিনারদের সেই সাফল্যের ধারাটা বজায় রেখেছেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন জুটি। 

স্পিন বোলারদের স্বর্গরাজ্য ভারত। বিষেণ বেদি, এরাপল্লি প্রসন্ন, ভিএস চন্দ্রশেখর, এস ভেংকটরাঘবনদের সেই বিখ্যাত স্পিন কোয়াট্রেটদের পথ অনুসরণ করেন ক্রিকেটবিশ্বে রাজত্ব করেছেন অনিল কুম্বলে এবং হরভজন সিং জুটি। তাঁদের উত্তরসূরি হিসেবে স্পিনারদের সেই সাফল্যের ধারাটা বজায় রেখেছেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন জুটি। 

বোর্ডার – গাভাস্কার ট্রফির প্রথম টেস্টে নাগপুরেও রাজত্ব করেছেন এই দুই স্পিনার। অস্ট্রেলিয়ার বিশ উইকেটের ১৫টিই ছিল এই জুটির দখলে। তাঁদের বিষে নাকাল হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে অজি ব্যাটসম্যানদের। ভারতও পেয়েছে ইনিংস এবং ১৩২ রানের সহজ জয়।

এই দুজনের একত্রে বোলিংয়ের যাত্রাটা শুরু এক দশক আগে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডেড রাবার বনে যাওয়া এক টেস্টে। আগেই সিরিজ ইংল্যান্ড সিরিজ জিতে নেয়ায় নাগপুরের সেই টেস্ট নিয়ে আগ্রহ ছিল না কারোরই। তবে মাস তিনেক বাদেই নিজেদের জাত চেনান এই ডুয়ো, তাঁদের বোলিং জাদুতেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় স্বাগতিকরা। সেই সিরিজে এই দুজন মিলে শিকার করেছিলেন ৫৩ উইকেট। 

২০১৩ সালের পর থেকে ভারতের মাঠে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি কোনো দলই। ভারত ম্যাচই হেরেছে মোটে দুইটি। এই সময়ে ঘরের মাঠে ৩৭ টেস্টে একত্রে মাঠে নেমে দুজনের সম্মিলিত উইকেট সংখ্যা ৩৯৬।

এর মাঝে অশ্বিন নিয়েছেন ২১৭ উইকেট, অন্যদিকে জাদেজার শিকার ১৭৯ উইকেট। তবে ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি এই জুটি। সেই রেকর্ডটা এখনো অনিল কুম্বলে এবং হরভজন সিং জুটির দখলে। এই শতাব্দীর শুরুতে এই দুজনে মিলে ৩৪ টেস্টে নিয়েছেন ৩৫৬ উইকেট।

ঘরের বাইরে অবশ্য এই দুজন একত্রে খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি। কারণটা অবশ্য অনুমিতই, পেসারদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে জায়গা ছাড়তে হয়েছে একজনকে। দুজনের একত্রে রেকর্ডটা অবশ্য মন্দ নয়, ছয় টেস্টে নিয়েছেন ৪৫ উইকেট। নাগপুর টেস্টের পর অশ্বিন বলেন, ‘সত্যি বলতে জাড্ডুর কাছে থেকে আমি বেশ সাহায্য পাই। তাঁর সাথে আমার বোঝাপড়াটা ভালো, এমন বোলিং পার্টনার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।’ 

ভারতের মাটিতে অবশ্য পিচ থেকে খানিকটা সাহায্য পেয়ে থাকেন স্পিনাররা। তবে কেবল উইকেট থেকে সাহায্য নয়, তাঁদের দক্ষতাও প্রশ্নাতীত। এমনি এমনি তো আর অশ্বিন ক্যারিয়ারে ৪৫০ উইকেট তুলে নেননি। অন্যদিকে, জাদেজাও ২৫০ উইকেটের মাইলফলক থেকে মাত্র এক উইকেট দূরে রয়েছেন।

ভারতের সাবেক স্পিনার মনিন্দর সিংয়ের মতে, ‘তাঁরা সেরা বোলিং জুটির একটি। আপনি দেখুন তাঁরা ভারতকে কতগুলো ম্যাচ জিতিয়েছে। আমি উইকেট থেকে সাহায্য পাবার কথা বলছি না। হ্যাঁ, ঘরের মাঠে তাঁরা খানিকটা সুবিধা পায়, কিন্তু সেটা তো বাকি স্পিনাররাও পায়। তাঁরা কেনো ভালো করতে পারে না? বছরের পর বছর তাঁরা পারফরম্যান্সে ধারবাহিকতা বজায় রেখেছে।’ 

নাগপুর টেস্টই তাঁর জ্বলন্ত প্রমাণ। অশ্বিন – জাদেজা জুটি যেখানে মাত্র ৬২ ওভারে অজিদের ১৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন, অথচ অভিজ্ঞ অজি স্পিনার নাথান লিওন পাল্টা আক্রমণ করতে পারেননি। অভিষিক্ত টড মারফি সাত উইকেট নিয়ে খানিকটা মান রক্ষা করেছেন সফরকারীদের। মূল কথা হচ্ছে, অশ্বিন – জাদেজারা ক্রমাগত ভালো জায়গায় বল করে ভুল শট খেলতে বাধ্য করেছেন অজি ব্যাটসম্যানদের। 

ব্যাটিং জুটি সফল হতে যেমন দুই প্রান্তের ব্যাটসম্যানদের বোঝাপড়া ভালো হতে হয়, বোলারদের ক্ষেত্রেও সেটা সমানভাবে প্রযোজ্য। দুজনের একে অন্যের শক্তিমত্তায় পরিপূরক হতে হয়। অশ্বিন যেমন বোলিং ভ্যারিয়েশন আছে, তেমনি জাদেজার ভরসা গতির পরিবর্তন আর দুর্দান্ত আর্মার ডেলিভারি। সে কারণেই এই দুজন একত্রে বোলিংয়ে এলে বেকায়দায় পড়েন ব্যাটসম্যানরা। 

অশ্বিন এবং জাদেজা একে অন্যকে ভালো বুঝতে পারেন। তাঁরা জানেন নিজের দায়িত্বটা। দুই প্রান্ত থেকেই চাপ বজায় রাখার মূলমন্ত্রটা তাঁদের আয়ত্বে। তাঁদের বোলিং স্টাইল আলাদা হলেও, লক্ষ্যটা একই। এই দুজনের ফর্মটা বজায় থাকলে সিরিজের সামনের দিনগুলোতে অজি ব্যাটসম্যানদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ দু:সময়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...