টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নিয়মিতই। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ব্যাটসম্যানদের দাপুটে পারফরম্যান্সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও সেখানে ঘাটতি ছিল অনেক। বাংলাদেশের বড় সমস্য ছিল পাওয়ার প্লেতে। সিরিজের তিন ম্যাচেই পাওয়ার প্লেতে পর্যাপ্ত রান তুলতে ব্যর্থ ছিলেন ব্যাটসম্যানরা।
পাওয়ার প্লের সমস্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ সহ বড় ইভেন্টে ভোগাবে বাংলাদেশকে। বড় কোন দলের সাথে ভালো করতে সব বিভাগে ভালো করার কোন বিকল্প নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও পাওয়ার প্লেতে রক্ষণশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ঝুলে আছে। পাওয়ার প্লের যথার্থ ব্যবহার করতে না পারা সমস্য মনে করছেন অনেকেই।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৫৩ রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ১৩.১ ওভারে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ ১০২ রান তুললেও পাওয়ার প্লেতে সংগ্রহ ছিল ছয় ওভারে মাত্র ৪৩ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে সংগ্রহ ছিল ৪২ রান। আর শেষ ম্যাচে ১৯৪ রান তাড়া করে জয় পেলেও পাওয়ার প্লেতে সংগ্রহ ছিল ৫০ রান।
এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৪৪ রান, দ্বিতীয় ৩৭ রান ও শেষ ম্যাচে তিন ওভারে ৩১ রান। প্রায় ম্যাচেই সাবধানী ব্যাটিং করে উইকেট হাতে রাখার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। আর কিছু ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে বেশি উইকেট হারিয়ে পরে ম্যাচেই ফিরে আসতে পারেনি বাংলাদেশ।
এখানে উইকেটও বড় ভূমিকা রাখে। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৪৪ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দুইশো এর উপর রান হয়েছে মাত্র তিন ম্যাচে। হোম অফ ক্রিকেটে গড় রান প্রতি ইনিংসে মাত্র ১৫২ যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে যায় না। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট গুলোতেও উইকেট স্লো থাকার কারণে রান হয়না বলেই চলে।
ক্রিকেটভিত্তিক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এবং কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও জানিয়েছেন নিয়মিত স্লো উইকেটে খেলার প্রভাবও পরে পাওয়ার প্লেতে। পাওয়ার প্লেতে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উইকেট হারিয়ে ফেললে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যায় দেখেই উইকেট হাতে রেখে সাবধানী ব্যাটিং করে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ‘সমস্যা হল উইকেট আমাদের সমস্য করে। আমরা যেই উইকেটে খেলে রান হয়না বলেই চলে। তাই আমরা উইকেট হাতে রাখলে খুশি হই। যা আমরা অতীতে দেখেছি। পাওয়ার প্লেতে আমরা যদি তিনটি উইকেট হারাই তবে ফিরে আসা কঠিন। আমাদের আন্দ্রে রাসেল বা হার্দিক পান্ডিয়ার মত কোন ব্যাটসম্যান নেই যারা শেষের দিকে ইয়র্কার সামলে রান বের করবে।’
পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের বড় সমস্য হলো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের স্টাইকরোটেট করে খেলতে না পারা। সুজন মনে করেন উইকেট হারালেও স্টাইকরোটেট করে হলেও পাওয়ার প্লেতে ৫০-৫৫ রান করার লক্ষ্য থাকা উচিত। এক্ষেত্রে ডট বল কম খেরতে হবে। সুজনের মতে বেশি ডট বল না খেলে চাপ কমানোর পারদর্শী ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু দুই সিরিজ হলো দলেই নেই তিনি।
সুজন জানিয়েছেন পাওয়ার প্লেতে শান্তর কার্যকরিতা সম্পর্কে, ‘শান্ত এমন একজন খেলোয়াড় যিনি স্ট্রাইকরোটেট করে খেলে এবং এটি তাকে চাপ কমাতে সাহায্য করে। পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি যেটা মনে করি তা হল আমরা যদি কয়েকটা উইকেট হারাই তবুও আমাদের পাওয়ার প্লেতে ৫০-৫৫ রান করার লক্ষ্য থাকা উচিত।
শুধু পাওয়ার প্লেতে নয়। বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সহ বাকি সবার স্টাইকরেটই টি-টোয়েন্টি উপযোগী নয়। গত এক যুগ হলো টি-টোয়েন্টি খেলা অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালের টি-টোয়েন্টিতে স্টাইকরেট ১১৭.২। ৫৬ ম্যাচ খেলা ফেলা সৌম্য সরকারের ১২৭.৬১ স্টাইকরেট একটু মানসম্মত হলেও ১২ ম্যাচ খেলা নাঈম শেখের স্টাইকরেট মাত্র ১১৮.৭৩।
লিটন দাসের স্টাইকরেট ১৩৪.২ হলেও টপ অর্ডারে ব্যাট করা মুশফিকুর রহিমের স্টাইকরেট মাত্র ১১৯.৭৩ ও সাকিব আল হাসানের ১২৪.৫৩। আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্টাইকরেটও মাত্র ১২২.৮৫।
গত কয়েকটা সিরিজ হলো নিয়মিত ছয় নম্বরে ও সাত নম্বরে সুযোগ পাওয়া আফিফ হোসেন ধ্রুবও নিজকে খুব একটা প্রমাণ করতে পারেননি। ১৮ ম্যাচ খেলা ফেলা আফিফের স্টাইবরেটও মাত্র ১২৪.১। মাত্র দুই ম্যাচ খেলা শামিম হোসেন পাটোয়ারির স্টাইকরেট ২২৪.২৯ হলেও তাকে নিয়ে এখনই ভবিষ্যৎবাণী করা যাচ্ছে না।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন এই সিরিজটা বড় পরিক্ষা হতে পারে এই তরুণের জন্য। এছাড়া প্রায় চার বছর পর জিম্বাবুয়ে সিরিজে সুযোগ পাওয়া উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানও কার্যকরি হতে পারে টি-টোয়েন্টিতে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে নিজকে প্রমাণ করা সোহানের জাতীয় দলের হয়ে খেলা ১২ ম্যাচে স্টাইকরেট ১৩০।