বয়স কিংবা নাম নয় — পারফরম্যান্সের ভার

বয়সটা তাঁর ৪২-এ পা দেবে আসছে অক্টোবরেই। তার একসময়ের সতীর্থ বর্তমানে পাকিস্থান দলের কোচ। তার সাথে একই সময়ে খেলা শুরু করা প্রায় সবাই ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কেবল তিনিই ছুটছেন অদম্য গতিতে। উঠতি প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করছেন। ‘বয়স কেবলই একটা সংখ্যা’ বাক্যটার সত্যতা তাকে দেখলেই স্পষ্ট। নামের ভারে নয় বরং অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে করেছে অস্থিতিশীল পাকিস্থান দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি মোহাম্মদ হাফিজ।

বয়সটা তাঁর ৪২-এ পা দেবে আসছে অক্টোবরেই। তার একসময়ের সতীর্থ বর্তমানে পাকিস্থান দলের কোচ। তার সাথে একই সময়ে খেলা শুরু করা প্রায় সবাই ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কেবল তিনিই ছুটছেন অদম্য গতিতে। উঠতি প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করছেন। ‘বয়স কেবলই একটা সংখ্যা’ বাক্যটার সত্যতা তাকে দেখলেই স্পষ্ট। নামের ভারে নয় বরং অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে করেছে অস্থিতিশীল পাকিস্থান দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি মোহাম্মদ হাফিজ।

১৯৮০ সালে পাকিস্থানের পাঞ্জাবের সীমান্তঘেঁষা সারগোডা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ হাফিজ। উপমহাদেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদারদের সাধারণত ১৮-১৯ বছর বয়সেই জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে যায়। কিন্তু হাফিজের জাতীয় দলে সুযোগ পেতে খানিকটা দেরি হয়। ২২ বছর বয়সে ২০০২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক হয় হাফিজের।

নিজের অভিষেক ম্যাচেই নিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখান তিনি। ব্যাট হাতে ১২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নেন দুই উইকেট। কিন্তু ব্যাট হাতে আলো ছড়ান পরের ম্যাচেই, শারজায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তুলে নেন দারুণ এক ফিফটি। পরের বছরেই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে টেস্ট দলে ডাক পান হাফিজ। করাচিতে প্রথম টেস্টেই অভিষেক হয় তার, অভিষেকেই দ্বিতীয় ইনিংসে করেন দারুণ এক ফিফটি।

পেশোয়ারে দ্বিতীয় টেস্টেই খেলেন অপরাজিত ১০২ রানে ঝলমলে এক ইনিংস। দারুণ শুরুর পর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি মোহাম্মদ হাফিজ। ফর্মহীনতা, ইনজুরি সবমিলিয়ে দলে আসা-যাওয়ার মাঝেই ছিলেন পরবর্তী সাত বছর। ২০১১ সালের পরই মূলত জাতীয় দলে থিতু হন তিনি। ওয়ানডেতে তাঁর ১১ সেঞ্চুরিই সবকটিই এসেছে ২০১১ এর পরে।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এ সময়টাতে বোলিংয়েও উন্নতি করেন হাফিজ। সর্বশেষ দশকের শুরুর দিকে সাকিব আল হাসানের সাথে আইসিসি অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান নিয়ে ইঁদুর-বেড়াল লড়াই ছিল তার। এক সিরিজে সাকিব শীর্ষে তো পরের সিরিজেই পুনরুদ্ধার করেছেন হাফিজ। কিন্তু অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের ফলে নিষিদ্ধ হওয়াতে পিছিয়ে পড়েন হাফিজ।

দীর্ঘ এই ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনবার অবৈধ অ্যাকশনের দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনি। বারবার বোলিং অ্যাকশন শোধরে ফিরে এসেছেন তিনি। বল হাতে কুপোকাত করেছেন ব্যাটসম্যানদের। ২০১২ সালে তিন ফরম্যাটেই পাকিস্থান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন তিনি। তার নেতৃত্বেই ২০১২ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে পাকিস্থান।

ক্রিকেট বিশ্বে তিনি পরিচিত ‘দ্য প্রফেসর’ নামে। এই উপাধি তিনি পেয়েছেন স্বদেশী ধারাভাষ্যকার এবং পাকিস্থানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজার কাছে থেকে। এক ম্যাচে রমিজ রাজা তাঁকে প্রফেসর নামে সম্বোধন করেন। এরপর থেকে ক্রিকেটবিশ্বে এই নামেই পরিচিতি পান তিনি। যদিও হাফিজের দাবি প্রফেসর নামটি তিনি পেয়েছেন আরো আগেই, একবার ইংল্যান্ডে খেলতে যাবার আগে তার এক এজেন্টের কাছে থেকে। তিনি নাকি এজেন্টকে অনেক বেশি প্রশ্ন করছিলেন একারণে এজেন্ট তাকে প্রফেসর বলে সম্বোধন করে।

হাফিজের বিশেষত্ব হলো তিনি যেকোনো পজিশনে ব্যাট করতে পারেন। ওপেনিং থেকে শুরু করে লোয়ার মিডল অর্ডার সবখানেই তিনি মানিয়ে নেন দারুণভাবে। আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষ বোলারদের হতবিহবল করে তোলা কিংবা রয়েসয়ে ব্যাট করে দলকে বিপদমুক্ত করা দুই জায়গাতেই তার জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি যোগ করুন বাঁহাতিদের বিপক্ষে তার কার্যকরী অফস্পিন।

ক্যাচ মিসের জন্য পাকিস্থান দলের আলাদা দুর্নাম আছে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সহজ ক্যাচ মিস করার ব্যাপারে পাকিস্থানের ক্রিকেটারদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত! কিন্তু হাফিজ এদিকে ব্যতিক্রম। বয়স চল্লিশ ছাড়ালেও এখনো ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ তিনি। এ বয়সেও পাকিস্থান দলের সেরা ফিল্ডার তিনি।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মনোযোগী হবেন বিধায় ২০১৮ সালেই বিদায় জানান সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে। অবসরের আগে ৫৫ টেস্টে ৩৭.৬৪ গড় এবং ১০ শতকের সাহায্যে সংগ্রহ করেন ৩,৬৫২ রান। তারুণ্যনির্ভর পাকিস্থান গড়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একদিনের ক্রিকেটের দল থেকেও ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে ২১৮ ম্যাচে ১১ সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ৬,৬১৪ রান।

কিন্তু, টি টোয়েন্টিতে এখনো পাকিস্থান দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। এখনো পর্যন্ত ১১০ টি ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছেন ২,৪২৩ রান। এ ফরম্যাটে কোনো সেঞ্চুরি না পেলেও একবার অপরাজিত ছিলেন ৯৯ রানে। জাতীয় দলের পাশাপাশি তিনি চুটিয়ে খেলেছেন বিভিন্ন দেশের ফ্যাঞ্চাইজি লিগে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ(সিপিএল), পাকিস্থান সুপার লিগের (পিএসএল) শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন বিভিন্ন দলের হয়ে।

বয়সটা থেমে না থাকলেও অন্তত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে চান হাফিজ। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার ওভার বল করে মাত্র ছয় রানে এক উইকেট নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি প্রস্তুত এবছরের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের হয়ে এটাই সবচেয়ে ইকোনমিকাল বোলিং ফিগার। ২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে চার ওভার বোলিং করে সমান ছয় রান দিয়ে দুই উইকেট পান পেসার মোহাম্মদ আমির। এবার তাঁরই পাশে হাফিজ। সত্যিই, এই মানুষটার জন্য বয়স শুধুই একটা সংখ্যা!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...