সব প্রশ্নের উত্তর হয়ত জানা নেই। সব সমস্যার সমাধানও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে বাংলাদেশি স্পিনারদের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে। সমাধান করে দেওয়ার কাজটা নিবিড়ভাবে করে যান একটি ক্ষীণকায় লোক। ক্রিকেট পাড়ায় যখন কোন আলোড়ন থাকে না ঠিক তখনও তাঁর দেখা মেলে। ক্ষুদে স্পিনারদের নিয়ে কাজ করতে সোহেল ইসলামের যেন কখনোই ক্লান্তি আসে না।
দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরা থেকে উঠে এসেছেন বর্তমানে বাংলাদেশ টাইগার্স দলের স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করা সোহেল ইসলাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পর্দার আড়ালে থাকা নায়কদের তালিকা হলে সেখানটায় সোহেল ইসলামের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত। এমনকি তালিকার উপরের দিকেই হবে তাঁর অবস্থান। ক্রিকেটের জন্য নিবেদিত এক সাদামাটা মানুষ। তবে, তিনি থাকেন আড়ালে, আলোচনার বাইরে।
নিজের ক্যারিয়ারে সোহেল ইসলাম ছিলেন একজন ডানহাতি স্পিন বোলার। বহুকাল আগেই ছেড়েছেন ক্রিকেট খেলা। তবে জাতীয় দলের খুব কাছে আসার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। বাংলাদেশ ‘এ’ দল অবধি একসময় চলে এসেছিলেন তিনি। তবে ভাগ্যের নির্মমতা তাঁকে গায়ে জড়াতে দেয়নি জাতীয় দলের লাল-সবুজ জার্সিটা। সে নিয়ে আক্ষেপে পুড়েছেন তিনি একটা সময়।
তবে সে আক্ষেপ হয়ত এখন তাঁকে খুব একটা ছুঁয়ে যায় না। কিংবা বলা যায়, আক্ষেপে পুড়ে পুড়েই তিনি শক্তি সঞ্চার করেছেন নিজের ভেতরে। কেননা তিনি তো বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলা প্রায় প্রতিটা স্পিনারের আস্থাভাজন। তিনি তো এখন তাঁদের রুপকথার নায়ক। বাংলাদেশ জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ মেহেদী হাসান মিরাজ থেকে শুরু করে তাইজুল ইসলাম ও হালের নাঈম ইসলাম সবারই পছন্দের স্পিন বোলিং কোচ সোহেল ইসলাম।
এমন পছন্দের কারণ প্রায় ২০০৭ সাল থেকে তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে। এর আগে অবশ্য তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ ছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে। এই দুই মিলিয়ে তিনি বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের প্রতিবন্ধকতা আর দর্শন বোঝেন। সেই সাথে যুব দলের সাথে বহুবার কাজ করার সুযোগ হয়েছে তাঁর। সে সুবাদে তিনি খেলোয়াড়দের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের বেঁড়ে ওঠাটা দেখেছেন একেবারে সামনে থেকে।
তাই তিনি খুব সহজেই সমস্যা গুলো ধরে ফেলতে পারেন। এই যে যেমন তাইজুল ইসলামের কথাই ধরা যাক। নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন স্বল্প মেয়াদে। সে সময় তিনি তাইজুল ইসলামকে তাঁর বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে পরামর্শ মোতাবেক তাইজুল নিজের বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন করেন। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
অন্যদিকে তাঁর অস্ত্রাগার থেকে ‘আর্ম বল’ নামক এক মহাগুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হারিয়ে যেতে বসে। তবে সেখান থেকে আবারও তিনি পরিবর্তন আনেন নিজের বোলিং অ্যাকশনে। এরপর তো জাতীয় দলের রঙিন জার্সিতেও তিনি দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। সাদা পোশাকে তো তিনি অবিচ্ছেদ্য। এই যে আঁধারে হারিয়ে যাওয়া থেকে আবার আলোর দিক ফিরে পাওয়া, এই পুরোটা সময় তাইজুলকে সাহায্য করেছিলেন সোহেল ইসলাম।
অন্যদিকে মেহেদী হাসান মিরাজকে খুব ছোট্ট বেলা থেকে গড়ে তুলেছেন সোহেল ইসলাম। বয়সভিত্তিক দলের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সোহেলের। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথেও যুক্ত হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। করোনার থাবায় যখন জাতীয় দলের বিদেশি কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আসতে অস্বীকৃতি জানান তখন সোহেল ইসলামের উপর ভরসা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আরেক দফা তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়, সবখানেই তাঁর সমান বিচরণ। তিনি চেষ্টা করেন বাংলাদেশকে স্পিন সংকট থেকে মুক্ত রাখতে। আর তাইতো কোন সমস্যার সম্মুখীন হলেই বাংলাদেশের স্পিনাররা ছুটে চলে যান সোহেল ইসলামের কাছে। সবার কথা একটাই, ‘সোহেল স্যার আছেন।’ এই স্যারই এখন বাংলাদেশের সকল স্পিনারদের সকল সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান।