সংকট যখন মধুমাখা

মধুর এক দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত। অন্ততপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্যে মধুময় চিন্তার তীব্রতা একটু বেশিই। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টিতে রীতিমত ভরাডুবির সম্মুখীন হয়েছে ভারত। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিলো বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন দল। মূলত ব্যাটিং বিপর্যয় এবং বোলিং আক্রমণের নিষ্প্রভতা ছিলো তাঁদের ভরাডুবির কারণ।

তবে সেই পরিস্থিতি থেকে নিজেদের খুব দ্রুতই যেন সরিয়ে নিয়ে এসেছে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী ভারত। ভারতের পাইপলাইন যে ঠিক কতটা শক্ত তারই যেন প্রমাণ পাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব। মধুর সেই সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে টি-টোয়েন্টি দলের মিডল অর্ডারকে ঘিরে। একের পর এক বারুদ জমিয়ে রেখেছিলো ভারত। যেই আসে সেই যেন তারকা হয়েই আসে।

ক’দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটিং তাণ্ডব দেখেছিলো ভারত সমর্থকরা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ সেরা হয়েছিলেন সুরিয়াকুমার। ইনিংস শেষ করে দলের জয়ে রেখেছিলেন অবদান। ইনজুরির কারণে শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে ছিটকে যান সুরিয়াকুমার। সুযোগটা পেয়ে যান আরেক তরুণ শ্রেয়াস আইয়ার। তিনি যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন নিজের সুযোগের।

সেই সুযোগটা কাজেও লাগালেন শ্রেয়াস দারুণভাবে। লংকানদের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচে আরেক তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটার ঈশান কিষাণের ৮৯ রানের এক অনবদ্য ইনিংসের পর তিনি ইনিংসের শেষের দিকে ঝড় তোলেন শ্রেয়াস। মাত্র ২৮ বলে ৫৭ রানের এক দারুণ ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। দ্বিতীয় ম্যাচে ওপেনারদের দ্রুত প্যাভিলনে ফেরার পর দায়িত্ব নিয়ে খেলেছেন তিনি।

সেই ম্যাচে করেছেন ৪৪ বলে ৭৪। তাঁকে আবার সঙ্গ দিয়েছিলেন সাঞ্জু স্যামসন ও রবীন্দ্র জাদেজা। শ্রেয়াসের উল্লাসের দিনে তারাও যুক্ত হয়েছিলেন রানের উৎসবে। স্যামসন করেছিলেন ২৫ বলে ৩৯ আর জাদেজা ইনিংস শেষ করেছিলেন স্টাইলে। ৪৫ করেছিলেন ১৮ বল থেকে। তৃতীয় ম্যাচেও দায়িত্ববান তবু মারকুটে শ্রেয়াসের দেখা মিলেছে। সেই ম্যাচে শ্রেয়াস করেছেন ৪৫ বলে ৭৩। মজার বিষয় তিন ম্যাচেই ছিলেন তিনি অপরাজিত। দলে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিতে পারলেন বোধহয়। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে একটা। সেটাই ভারতের মধুর সমস্যা।

ব্যাটারদের এমন দূর্দান্ত পারফরমেন্সের সাথে নতুন সব বোলারও নিজেদেরকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে মানিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাটা চালাচ্ছে। সবার মূল লক্ষ্য এই বছরের শেষের দিকে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নেওয়া। নিসঃসন্দেহে সুরিয়াকুমার, শ্রেয়াস দুইজনই সেই দলে জায়গা করে নেবেন। তবে প্রশ্নটা হচ্ছে একাদশে জায়গাটা করে নেবেন কে? এই এক দারুণ দ্বিধায় পড়ে গেছেন ভারত ক্রিকেট দলের ম্যানেজমেন্ট। শ্রেয়াস দলে সুযোগ পেয়েছেন বিরাটের অবর্তমানে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে বিরাটকে বিশ্রাম দেওয়ার ফলশ্রুতিতে শ্রেয়াস জায়গা পেয়েছিলেন একাদশে এবং ব্যাট করেছিলেন তিন নম্বর পজিশনে। সেরা ধারা অব্যাহত ছিলো লংকানদের বিপক্ষে সিরিজেও। তবে বিরাট দলে ফিরলে তিন নম্বর জায়গাটা হারাবেন শ্রেয়াস তা সুনিশ্চিত। আর অন্যদিকে দলে সুরিয়াকুমার ও ঋষাভ পান্তদের মতো ব্যাটাররাও রয়েছেন যারা কিনার চার এবং পাঁচ নম্বর পজিশনের জন্যে উপযুক্ত।

এমন এক সমস্যায় পড়েছে ভারত কাকে ছেড়ে কাকে রাখবে সেই নিয়ে চিন্তার যেন শেষ। শ্রেয়াসকে যদি একাদশে নিতেই হয় তবে একধাপ করে নামবে বাকিদের ব্যাটিং পজিশন। সেক্ষেত্রে একজন অলরাউন্ডার হয়ত জায়গা পাবেন একাদশে। সেখানেও রয়েছে প্রতিদ্বন্দীতা। রবীন্দ্র জাদেজা ও ভেঙ্কেটেশ আইয়ারের মধ্যে চলছে সে লড়াই। নিশ্চয়ই ভারত তাঁদের এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবে অতিসত্তর।

শ্রেয়াস, সুরিয়াকুমার, ঋষাভ পান্ত, জাদেজা ও ভেঙ্কেটেশ এরা সবাই নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ প্রতিনিয়তই রেখে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সেই সাথে উঁকি দিচ্ছেন সাঞ্জু স্যামসনে মতো ব্যাটাররাও। ভারত শেষমেষ তাঁদের এই মধুময় সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা তাঁর জন্যে অপেক্ষা করতে হবে বছরের শেষ অবধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link