বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) গায়ের জোরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ বলতে পছন্দ করে। যদিও, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় লিগগুলো থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে ২০১২ সালে চালু হওয়া এই আসর।
এখানে সবচেয়ে বড় দায় নিশ্চয়ই খোদ বিসিবির। লিগটি যতটা জমজমাট এতদিনে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেটা হয়নি কর্মকর্তাদের স্বদিচ্ছার অভাবে। সবচেয়ে বড় অভাব হল ধারাবাহিকতায়। বিশেষ করে মালিকানা নির্ধারণে বিসিবি বরাবরই খুব ধোঁয়াশা রাখে। দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব না দেওয়ায় বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানই আগ্রহ থাকার পরও যুক্ত হতে চায় না বিপিএলে।
পরিসংখ্যানই এই তথ্যের পক্ষে রায় দেবে। বিপিএলের নয়টি মৌসুমে মোট ২৭ টি ভিন্ন ভিন্ন মালিকানা দেখা গেছে। এটা সম্ভবত, বিশ্বের সকল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ক্ষেত্রেই রেকর্ড। মাঠের ক্রিকেটে না হোক, মাঠের বাইরে বিপিএল রেকর্ডই করেছে বলা যায়।
দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব না পাওয়ার ফলে, কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই আসলে বিপিএল নিয়ে ‘বড়’ করে ভাবে না। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) উদাহরণ যখন, চোখের সামনে তখন বিসিবির এই ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। লম্বা মেয়াদে সুযোগ পেলে, প্রতিটা ফ্র্যাঞ্চাইজির নিজস্ব অবকাঠামো গড়ার সুযোগ থাকতো, খেলোয়াড়দের বিশেষ ক্যাম্প আয়োজিত হত, থাকতো তৃণমূল থেকে ক্রিকেটার খুঁজে আনার ব্যবস্থা।
যেটা হয়ে থাকে আইপিএলে। কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে। আইপিএল শুরু হয়েছে বিপিএল শুরুর চার বছর আগে। আর বিগ ব্যাশের বয়স বিপিএল থেকে মাত্র এক বছর বেশি। কিন্তু, মানের দিক থেকে এই দু’টি লিগের ধারের কাছেও নেই বাংলাদেশের এক নম্বর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।
বিপিএলের চেয়ে বরং এখন বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল)। পিএসএল বিপিএল শুরুরও তিন বছর পর প্রথম আয়োজিত হয়। অন্যদিকে, সিপিএলের বয়স বিপিএল থেকে এক বছরের কম।
এমনকি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে অনেক জটিলতা থাকার পরও লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) গুণগত মান বিপিএলের ওপরে। খেলোয়াড়দের মান, ব্রডকাস্টিং কিংবা ম্যাচের উইকেট দেখেই সেটা বোঝা যায়। বিপিএলের এই হতশ্রী চেহারার কারণেই এই লিগের প্রতি আগ্রহী হন না বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়রা, আসেন না বিশ্বের সেরা কোনো ধারাভাষ্যকার, এমনকি এখানে খেলে রান করেও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ডাক আসে না বিদেশি লিগ থেকে।
সব মিলিয়ে বিপিএলকে সর্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারেনি বিসিবি। বিশ্বায়ন তো দূরের কথা, খোদ বাংলাদেশেই এর পূর্ণাঙ্গ কোনো কাঠামো দাঁড়ায়নি। খোদ ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি কখনও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, কখনও ঢাকা ডায়নামাইটস, ঢাকা প্লাটুন নামে খেলে। এবার যেমন খেলছে দুর্দান্ত ঢাকা নামে। তার ওপর এখনও খেলা হচ্ছে কেবল তিনটা ভেন্যুতে। চাইলেই ভেন্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ পদ্ধতি চালু করা যায়, তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়ে।
কিন্তু, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার মত পদক্ষেপ আর যাই হোক বিসিবি হয়তো সহসাই নিচ্ছে না!