মাঠে সব দলই খেলতে নামে ম্যাচ জিততে। যেহেতু মাঠে দুই দলেরই একই লক্ষ্য থাকে তাই এক দলকে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসতে হয়। একটি হার দলের জয়ের ধারাতে ছেদ করে এবং দলকে মানসিকভাবে পিছনে ফেলে দেয়। অনেক সময় একটি হার শিরোপার রেস থেকে অনেকটা পিছিয়ে দেয় দলকে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এ প্রতি বছর দলগুলো প্রচুর অর্থলগ্নি করে। এর ফলে তাঁদের সবগুলো দলই হয় মোটামুটি সমমানের দল। এরপরও দেখা যায় কিছু দল টুর্নামেন্টে বেশ খারাপ ভাবেই শুরু করে। খারাপ শুরু করার পরও অনেক সময় দেখা যায় দলগুলো বেশ ভালোভাবে নিজেদেরকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আইপিএলের খারাপ শুরু পর আবারো শিরোপার রেসে ফিরে এসেছে এমন পাঁচটি ঘটনা নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
- রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (২০০৯)
ব্যাঙ্গালুরু ভিত্তিক এই ফ্রাঞ্চাইজির আইপিএল যাত্রাটা খুব একটা ভালো ছিলো না। প্রথম মৌসুমে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আসরের শুরুটা ছিলো দু:স্বপ্নের মত।
প্রথম আসরের ব্যর্থতা ভুলতে দ্বিতীয় আসরের শুরুতেই অধিনায়কের দায়িত্বে পরিবর্তন আনে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। রাহুল দ্রাবিড়ের পরিবর্তে অধিনায়কের দায়িত্ব পান কেভিন পিটারসেন। কিন্তু অধিনায়ক বদলের পরও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি ব্যাঙ্গালুরুর।
প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হারের মুখ দেখে ব্যাঙ্গালুরু। এরপর আবারো অধিনায়ক বদলের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাঙ্গালুরু। এবার অধিনায়কের দায়িত্বে আসেন অনিল কুম্বলে। তাঁর অধিনায়কত্বে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে ব্যাঙ্গালুরুর। পরের পাঁচ ম্যাচে দলকে এনে দেন তিন জয়। এরফলে প্রথম দশ ম্যাচে ব্যাঙ্গালুরুর জয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় চারটিতে।
প্লে অফে খেলার জন্য আরো চার জয়ের প্রয়োজন ছিলো ব্যাঙ্গালুরুর। কুম্বলের অধিনায়কত্বে সেই কাজটিও সম্ভব করে ফেলে ব্যাঙ্গালুরু। প্লে অফে চেন্নাইকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু ফাইনালে ডেকান চার্জার্সের কাছে হেরে খুব কাছে গিয়েও জয় নিয়ে ট্রফি নিয়ে ফেরা হয় নি ব্যাঙ্গালুরুর।
- ডেকান চার্জার্স (২০১০)
ডেকান চার্জার্স ২০১০ সালের আইপিএল শুরু করে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে। কারণ সর্বশেষ মৌসুমে ডেকান ছিলো আসরের চ্যাম্পিয়ন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের নেতৃত্বাধীন ডেকানের ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই ভারসাম্য ছিলো। এর ফলে ভাবা হয়েছিলো টানা দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জিততে যাচ্ছে ডেকান চার্জার্স।
কিন্তু ভাবনার থেকে পুরো বিপরীত ছিলো তাঁদের শুরুটা। প্রথম নয় ম্যাচে মাত্র ৩ টি জয় পায় ডেকান চার্জার্স। এই খারাপ শুরুর পর নিজেদের হোম ভেন্যু পরিবর্তন করে। মুম্বাইয়ের ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে আসার পর ডেকানের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এখানে আসার পর পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয় তুলে নেয় ডেকান।
টানা পাঁচ ম্যাচে জয় পেয়ে প্লে অফ নিশ্চিত করে ডেকান। কিন্তু প্লে-অফে চেন্নাইয়ের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শেষ করে। তবে তাঁদের প্লে-অফে উঠে আসার এই গল্পটা বেশ দূর্দান্ত।
- মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স (২০১৪)
এর আগের আসরেই তরুণ অধিনায়ক রোহিত শর্মার নেতৃত্বে আইপিএল শিরোপা জয় করেছিলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এই একই বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও ঘরে তোলে মুম্বাই।
২০১৪ সালেও শিরোপা জয়ের লক্ষ্যেই টুর্নামেন্ট শুরু করে মুম্বাই। ভারতের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কারণে এই আসরের প্রথম অংশ অনুষ্ঠিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আরব আমিরাতে খেলা পাঁচ ম্যাচেই হারের মুখ দেখে মুম্বাই।
দেশের মাটিতে ফিরেই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় মুম্বাই। পরের পাঁচ ম্যাচে তিনটি জয় তুলে নেয় মুম্বাই। প্লে অফে জায়গা করে নিতে হলে শেষ চার ম্যাচের চারটিতেই জয়ের প্রয়োজন ছিলো মুম্বাইয়ের। সবগুলো ম্যাচ জিতে প্লে অফে জায়গা করে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ১৪.৪ ওভারে ১৯০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে রান রেটের ব্যবধানে প্লে অফে জায়গা পায় মুম্বাই,
প্লে-অফের এলিমেনেটর ম্যাচে চেন্নাইয়ের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। খারাপ শুরুর পরও যেভাবে ফিরে এসেছিলো তাতে প্রশংসা করতেই হয় মুম্বাইয়ের।
- কলকাতা নাইট রাইডার্স (২০১৪)
কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রথম শিরোপা জয় করে ২০১২ সাল। শিরোপা জয়ের পরের আসরে বাজে পারফর্ম করে কলকাতা। এর দলে ২০১৪ সালে বেশ চাপে ছিলো গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বাধীন কলকাতা নাইট রাইডার্স।
শুরুটা বেশ ভালো ছিলো কলকাতার জন্য। প্রথম তিন ম্যাচে দুই জয় পায় কলকাতা। কিন্তু পরের টানা চার ম্যাচে হেরে তাদের অবস্থা গিয়ে দাঁড়ায় সাত ম্যাচে দুই জয়।
গ্রুপ পর্বের শেষ সাত ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে প্লে অফ নিশ্চিত করে কলকাতা। এমনকি শেষ ম্যাচে ১৪.২ ওভারে ১৬১ রানের তাড়া করে লগ টেবিলে দুই নাম্বারে থেকে প্লে অফে যায় কলকাতা।
প্লে অফে উঠে দুইবার পাঞ্জাবকে হারায় কলকাতা। প্রথমবার হারায় প্রথম কোয়ালিফায়ারে। আবার পাঞ্জাবকে ফাইনালে দ্বিতীয় পরাজয়ের স্বাদ দেয় কলকাতা। পাঞ্জাবকে হারিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় আইপিএল শিরোপা ঘরে তোলে কলকাতা।
- মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স (২০১৫)
২০১৩ সালে আইপিএলের প্রথম শিরোপা জয়ের পর ২০১৪ সালে প্লে অফেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের শিরোপার দৌড় থেমে যায়।
২০১৫ সালে মুম্বাই আবারো আসে শিরোপার লড়াইয়ের জন্য। কিন্তু শুরুটা একদমই ভালো ছিলো না মুম্বাইয়ের জন্য। প্রথম ছয় ম্যাচে মাত্র একটিতে জয় নিয়ে লিগ টেবিলে নিচের দিক অবস্থান ছিলো মুম্বাইয়ের। কিন্তু সপ্তম ম্যাচ থেকেই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয় মুম্বাইয়ের।
লিগ পর্বের শেষ আট ম্যাচের সাতটিতেই জয়ের মুখ দেখে মুম্বাই। এর মাধ্যেমে লিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকে প্লে অফে কোয়ালিফাই করে মুম্বাই।
প্লে অফের প্রথম কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হয় মুম্বাই এবং চেন্নাই। এই ম্যাচে চেন্নাইকে হারিয়ে সরাসরি ফাইনালে চলে যায় মুম্বাই। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জিতে ফাইনালে আবারো মুখোমুখি হয় মুম্বাই এবং চেন্নাই।
ফাইনালে আবারো চেন্নাইকে হারিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নেয় মুম্বাই।