বাবর-বিরাট-বিজয়-বয়স ও অন্যান্য

কথাগুলো মাথায় আসলো ২০১২ সালের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান দেখে। বাবর আজমকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের এনামুল হক বিজয়। এই আসরে সর্বোচ্চ রান নেন বিজয়। বাবর ছিলেন তার পেছনে। তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের বয়স নিয়েও গুঞ্জন কম নেই। যেটা পাকিস্তানে আছে সেটা হচ্ছে প্রতিভা ও সামর্থ্যের যে মিশেল, সেটার আউটকাম দারুণ।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বয়সভিত্তিক কাঠামোর সবচেয়ে বড় লুপহোল মনে হয় সঠিক বয়সে সঠিক বয়সী টুর্নামেন্ট না খেলা। যে কারণে আসল চিত্র পাওয়া যায় না। উল্টো প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে দেখা যায় পদ্মা সেতুর এপার-ওপার ব্যবধান।

আপাতত এটা প্রমাণ করার মতো কোনো জো নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগও তোলা কঠিন যেহেতু কাগজ কলম বলবে অমুকের বয়স ১৮ বছর ৭ মাস।

কিন্তু ফলাফলে এটা প্রমাণের বা একটা প্রেক্ষাপট তৈরির উপায় থাকে। নতুবা ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এতোগুলো বয়সভিত্তিক দল ফুটবলের নানা টুর্নামেন্টে জয় পেল তাদের গত ৪ বছরে তেমন কোনো আপডেট নেই। শুধু বাহারি হেডলাইন ও সুন্দর হাস্যোজ্বল ছবিতে টুর্নামেন্ট শেষ করেই সেখানে ইতি টানা হয় সাফল্যগাঁথার।

দার্জিলিং, গ্যাংটক, ডুয়ার্স- সফর শেষে যেদিন ফিরছিলাম, সেদিন ভারতের সাথে বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল চলে। পুরো বাসে মনে হয় আমি একাই ছিলাম ভারতের পক্ষে। যতটা ভারতের পক্ষে তার চেয়ে বেশি চাইসি যাতে বাংলাদেশ না জেতে। এর পেছনে একটাই কারণ বাংলাদেশ জিতে গেলে এটা হবে বাংলাদেশে শক্ত ক্রিকেটীয় অবকাঠামোর একটা উদাহরণ, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটার তুলে আনার দৃষ্টান্ত। যেটা কি না আদৌ না! সেকথা প্রমাণ করতে সম্পাদ্য উপপাদ্যর প্রয়োজন হয় না।

আপনি যখন আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ের সাথেও সাকিব, তামিম, মুশফিক ছাড়া দল গড়ার সাহস পাননা। আবার ঘটনাচক্রে হেরেও যান তখন বোঝা যায় আপনি আসলে হারার জন্যই প্রস্তুত। জয়টা কালেভদ্রে আসে আর কী। ২০ টা খেললে তো ৬ টা জিতবেন এটাই স্বাভাবিক।

এই কথাগুলো মাথায় আসলো ২০১২ সালের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান দেখে। বাবর আজমকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের এনামুল হক বিজয়। এই আসরে সর্বোচ্চ রান নেন বিজয়। বাবর ছিলেন তার পেছনে। তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের বয়স নিয়েও গুঞ্জন কম নেই। যেটা পাকিস্তানে আছে সেটা হচ্ছে প্রতিভা ও সামর্থ্যের যে মিশেল, সেটার আউটকাম দারুণ।

বাবরের জন্ম তারিখ দেয়া আমার চেয়ে ২ মাসের ছোট। বাবর পাকিস্তানের বিখ্যাত আকমল ভাইদের কাজিন। বাবর যেখানে বিশেষ সেটা হচ্ছে তাঁর দেশের নাম পাকিস্তান। যেখানে দল যেমনই থাকুক তারা র‍্যাংকিংয়ের উপরের জায়গায় আসতে ভোগে। কারণ তারা কেউ ধারাবাহিক না। পাকিস্তানে টপ লেভেলে শেষ ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান ছিলেন, ইউসুফ ইয়োহানা, বর্তমান মোহাম্মদ ইউসুফ।

ইউসুফের সাথে বাবরের সবচেয়ে দারুণ সাদৃশ্য হচ্ছে, উইকেটের পেছনে সাবলীল ভঙ্গিতে রান আনা। ইউসুফ ছিলেন কনভেনশনাল, লেট কাট, লেগ গ্লান্সে ছিলেন ডেলিকেট। বাবর খানিকটা ইমপ্রোভাইজড। সপ্রতিভ, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চৌকস।

ভিরাটের সাথে তুলনা না চাইলেও আসবে বাবরের। এবং একটা জায়গায় বাবর আজম থাকবেন বিশেষ একজন হিসেবে। পাকিস্তানে নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে বর্তমান নাম্বার ওয়ান ওয়ানডে ব্যাটসম্যান মাত্র ছয় ম্যাচ খেলতে পেরেছেন পাকিস্তানের মাটিতে।

এই ছয় ম্যাচে তিনি ১০৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন, গড় ৮৪। ২টি সেঞ্চুরি, ২টি ফিফটি। অর্থাৎ দেশের মাটিতে খেলার পুরো নির্যাসটুকু নিতে চেয়েছেন বাবর এবং পেরেছেনও।

দেশের বাইরে খেলেছেন ৭২ ইনিংস। সেখানে গড় ৫৪, স্ট্রাইক রেট ৮৭। বাবরের ক্যারিয়ার গড় টেস্টে ৪৪, ওয়ানডেতে প্রায় ৫৭, টি টোয়েন্টিতে ৪৯! তিন ফরম্যাটে স্ট্রাইক রেটও মানানসই! যখন যেখানে যেমন প্রয়োজন। বাবর মাত্র ছয় বছরে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে সেঞ্চুরির মালিক।

পাকিস্তানের ক্রিকেটে এমন ধারাবাহিকতা কয়েক যুগ মিলিয়ে একবার আসে। তিন ফর‍ম্যাটেই পাকিস্তানের এই অধিনায়ক প্রতি বছর নিজেকে নিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০১৫ ও ২০১৮ সাল বাদে প্রতি বছর বাবর ৬০ বা তার কাছাকাছি গড়ে ব্যাট করেছেন। দৃশ্যমান উন্নতি যেটা সেটা হলো বল প্রতি রানের গতিতে। ২০১৫ সালে যেটা ছিল ৮৯, সেটা ৯৫ হয়ে গত দুই বছরে ১০১ ও ১০৪! যদিও ২০২০ ও ২০২১ এ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হয়নি।

এই বাবর আজকের বাবর হয়েছেন খুব বেসিক নিয়মে। খেলার প্রতি নিবেদন, অধ্যবসায়, নতুন জিনিস শেখা ও সেরা হওয়ার চেষ্টা। এই ক্লিশে ব্যাপারগুলোই কোহলি, বাবর, রোনালদোদের এগিয়ে নেয় সাধারণ প্রতিভাধরদের থেকে।

প্রথম ৭৮ ম্যাচ শেষে বাবরের রান ৩৮০৮, কোহলির ছিল ৩১০০! বাবরের গড় ৫৬, কোহলির ৪৫

বাবরের স্ট্রাইক ৮৮, কোহলির ৮৩। বাবরের শতক ১৩, কোহলির ৮। পার্থক্য আরেকটা আছে, ৭৮তম ম্যাচে কোহলি ছিলেন ২৩, বাবর ২৬!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...