রেলওয়ে কেরানি থেকে আইপিএলের মঞ্চে

রেলওয়ে স্টেশন, ক্রিকেট মাঠ, ভারত জাতীয় দল - গল্পটা যে মহেন্দ্র সিং ধোনির সেটা না বললেও জানা আছে সবার। খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট চেকার ছিলেন ধোনি, সেখান থেকে ক্রিকেটের মাঠ হয়ে এসেছেন ভারতের জাতীয় দলে। দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে কিংবদন্তি হয়েই বিদায় নিয়েছেন তিনি।

রেলওয়ে স্টেশন, ক্রিকেট মাঠ, ভারত জাতীয় দল – গল্পটা যে মহেন্দ্র সিং ধোনির সেটা না বললেও জানা আছে সবার। খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট চেকার ছিলেন ধোনি, সেখান থেকে ক্রিকেটের মাঠ হয়ে এসেছেন ভারতের জাতীয় দলে। দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে কিংবদন্তি হয়েই বিদায় নিয়েছেন তিনি।

তবে এই গল্পটা যার তিনি রেলওয়ে স্টেশন টিকিট চেকার নন, জুনিয়র ক্লার্ক। তাই গল্পটাও মহেন্দ্র সিং ধোনির বলা যাচ্ছে না। বরং আজকের গল্পটা উপেন্দ্র যাদবের; পেশায় মিল না থাকলেও ক্রিকেটীয় বিচারে ধোনি আর উপেন্দ্র কিন্তু একই বিন্দুতে এসে মিলেছেন; দুইজনেই যে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর নিলামের পরেই মূলত পরিচিতি লাভ করেছেন উপেন্দ্র যাদব। ২০ লক্ষ রুপি ভিত্তিমূল্যের তাঁর নাম ঘোষণা করতেই আগ্রহ দেখিয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। তবে পরের বিডেই আইপিএলের সফলতম দলকে হারিয়ে এই তরুণকে নিজেদের দলে টেনে নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ।

এই ফ্রাঞ্চাইজির তৃতীয় উইকেট কিপার ব্যাটার হিসেবেই স্কোয়াডে থাকবেন তিনি। কেননা এর আগে থেকেই অরেঞ্জ আর্মিরা গ্লেন ফিলিপস এবং হেনরিখ ক্ল্যাসেনকে নিজেদের করে নিয়েছিল।

২০২০ সালে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে হাঁকানো এক ডাবল সেঞ্চুরির সাহায্যে প্রথম আইপিএলের নির্বাচকদের নজরে এসেছিল উপেন্দ্র যাদব। টেলএন্ডারদের সাথে জুটি করে ২৩৯ বলে অপরাজিত দ্বিশতক রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

এর দুই মাস আগে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ৪১ বললে ৭০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছিলেন উপেন্দ্র। চার চার এবং পাঁচ ছয়ের মারে খেলা এই ইনিংসের উপর ভর করেই তামিলনাড়ুকে হারিয়েছিল উত্তর প্রদেশ।

২০১৭ সাল থেকে লক্ষ্ণৌ জেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে স্টেশনের ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে জুনিয়র ক্লার্কের দায়িত্ব পালন করেন উপেন্দ্র যাদব। তবে ক্রিকেটের মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি, তাই চাকরির পাশাপাশি খেলেছেন ব্যাট-বলের খেলাটাও। আপাতত ক্যারিয়ারে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে তাঁর; আইপিএলে অভিষেক হওয়ার দৌর গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন এই ডান হাতি।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে দল পাওয়ার খবর অবশ্য সাথে সাথে পাননি উপেন্দ্র যাদব। তাঁরই এক সতীর্থ জানিয়েছিল এই খুশির সংবাদ। এই ব্যাপারে উপেন্দ্র বলেন যে, ‘নিজেদের ম্যাচ খেলার পর আমরা একটি টিম মিটিংয়ে ছিলাম, সেখানেই আমার এক টিমমেট আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারটি জানায়। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অংশ হতে পারে আমি খুবই আনন্দিত।’

উত্তর প্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর দেওয়ান সিংয়ের ছোট ছেলে উপেন্দ্র যাদব তাঁর এই সফলতার সবটুকু কৃতিত্ব দিয়েছেন নিজের বড়ভাই বরুণ যাদবকে।

এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমার ভাইও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু আমার জন্য সে তাঁর নিজের স্বপ্ন উৎসর্গ করেছে। সকাল ছয়টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে আমার সাথে লেগে থাকতো। আমাকে দিকনির্দেশনা দিতো; খেলায় মনোযোগ ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দেখভালও সে করতো।’

১৯৯৬ সালে কানপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন উপেন্দ্র যাদব। স্থানীয়ভাবেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। এই কানপুরেই নিজের পড়ালেখা আর ক্রিকেটের প্রাথমিক বিদ্যা আয়ত্ত করেন এই ক্রিকেটার। এরপর ২০১৬ সালে ২২ বছর বয়সী উপেন্দ্র যাদবের অভিষেক হয় রঞ্জি ট্রফিতে। ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি ব্যাটার সুরেশ রায়নার নেতৃত্বে সেসময় খেলেছিলেন তিনি।

আপাতত উপেন্দ্র যাদবের অপেক্ষা আরেকটি নতুন অভিষেকের। এবার মঞ্চটা আরো বড়, উপেন্দ্রের স্বপ্নটাও এর সাথে পাল্লা দিয়ে আরো বেশি জায়গা জুড়ে ডানা মেলেছে। ভারতের আকাশি নীল জার্সিটা গায়ে জড়ানোর ইচ্ছে বুকে চেপেই হয়তো আইপিএলের পরবর্তী আসরে নিজের সবটুকু নিংড়ে দিতে চাইবেন উপেন্দ্র যাদব।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...