ব্যালন ডি’অর তবে ভিনিই জিতবেন!

চাঁদেরও কলঙ্ক আছে, কলঙ্ক আছে ভিনিসিয়াস জুনিয়রেরও। ব্রাজিলকে কোপা আমেরিকায় আকাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে পারেননি তিনি, এমনিতেও ব্রাজিলের জার্সিতে রং হারান। কিন্তু ব্যালন না পাওয়ার জন্য বড্ড ঠুনকো যুক্তি এটা, মর্যাদার পুরষ্কার তাঁরই পাওয়া উচিত অন্য যেকারোর তুলনায় - আগামী দিনে হয়তো হাল্যান্ড বা এমবাপ্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হবে তবে এবার তিনিই সর্বেসর্বা।

ভিনিসিয়াস জুনিয়র ব্যালন ডি’অর জিতবেন; না গোলের জন্য নয়, কোন পরিসংখ্যানের জন্য নয়। তাঁর ব্যালন জেতা উচিত ইম্প্যাক্টের জন্য। বার্সেলোনার বিপক্ষে আগস্টের ফ্রেন্ডলি ম্যাচে একটু নজর দেয়া যাক, ৬০ মিনিটের মাথায় মাঠে এসেছিলেন তিনি। কোন গোল করেননি, অ্যাসিস্ট করেননি; কিন্তু যতবার বল পায়ে এসেছে ততবারই ঝড় তুলেছিলেন, গ্যালারির প্রতিটা দর্শক বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন।

টুইস্ট, টার্ন, স্টেপ ওভার, বিদ্যুৎ গতি – ভিনিসিয়াসের মাঝে জাদু দেখানোর সব উপাদানই আছে; শুরুর দু:স্বপ্ন কাটিয়ে সেই জাদু তিনি দেখিয়ে এসেছেন গত কয়েক মৌসুম ধরে। কিন্তু ২০২৩/২৪ মৌসুমে সত্যিকারের ‘ডিফারেন্স মেকার’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

করিম বেনজেমার সাথে দুর্দান্ত বোঝাপড়ার সুবাদে তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। কিন্তু বেনজেমা হুট করে সৌদি আরবে পাড়ি জমানোর ফলে স্ট্রাইকার সংকটে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। বাধ্য হয়ে তাঁকে দেয়া হয় ওয়াইড স্ট্রাইকারের ভূমিকা। যার ফিনিশিংয়ে আজন্ম দুর্বলতা, সে কিভাবে স্ট্রাইকার হবে – এমন গুঞ্জন উঠিয়ে দিয়ে তিনি ঠিকই নতুন ভূমিকায় মানিয়ে নিয়েছিলেন।

নতুন যাত্রায় ইনজুরি হানা দিয়েছিল বটে, খানিকটা সময়ের জন্য মনে হয়েছিল ম্লান হয়েছেন মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। কিন্তু মেঘের আড়াল থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সোনালী হাসি নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন তিনি, জুড বেলিংহ্যাম যখন গোল করতে ব্যস্ত তখন তাঁর পায়ে ছিল মোহনীয় ম্যাজিক।

প্রতিপক্ষ ফুলব্যাক বা সেন্টারব্যাক কিছু আন্দাজ করার আগেই ভিনি বদলে দেন বলের গতিপথ, চোখের পলকে গতি বাড়িয়ে ছাড়িয়ে যান। দৌড়ের মধ্যেই জাগলিং করেন কখনও আবার রেইনবো ফ্লিকের চেষ্টা – বিপক্ষ দলকে রাগিয়ে দেয়ার সবই করেন। তবে দর্শক হিসেবে মানতেই হবে, ফুটবলকে আরও বেশি রোমাঞ্চকর করেছেন তিনি আর তাঁর মত হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালারা।

এই তারকার ব্যালন জেতার পিছনে সবচেয় বড় যুক্তি তাঁর সময় জ্ঞান। ঠিক যখন যেই ম্যাচে তাঁকে সবচেয়ে বেশি দরকার হয় দলের তখনই নিজের সর্বোচ্চ ভয়ানক রূপ নিয়ে হাজির হন। সুপার কোপাতে প্রথমার্ধেই হ্যাটট্রিক করেন তিনি, একাই ছিঁড়ে খুবলে নেন বার্সেলোনার স্বপ্ন।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচগুলো তো সাম্বা বয় নিজের অনুশীলন সেশন বানিয়ে ফেলেছেন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু তো বটেই; ইতিহাদ থেকে শুরু করে অ্যানফিল্ড কিংবা অ্যালেঞ্জ অ্যারেনাতে তিনি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন বটে। এবং অতি অবশ্যই দুইবার ফাইনাল খেলে দু’বারই গোল এসেছে তাঁর পা থেকে।

চাঁদেরও কলঙ্ক আছে, কলঙ্ক আছে ভিনিসিয়াস জুনিয়রেরও। ব্রাজিলকে কোপা আমেরিকায় আকাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে পারেননি তিনি, এমনিতেও ব্রাজিলের জার্সিতে রং হারান। কিন্তু ব্যালন না পাওয়ার জন্য বড্ড ঠুনকো যুক্তি এটা, মর্যাদার পুরষ্কার তাঁরই পাওয়া উচিত অন্য যে কারোর তুলনায় – আগামী দিনে হয়তো হাল্যান্ড বা এমবাপ্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হবে তবে এবার তিনিই সর্বেসর্বা।

Share via
Copy link