দেশের ক্রিকেটে মাঝে একটা কথা বেশ প্রচলিত ছিল। তামিম ইকবাল রান করলে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে না। একই কথা বোধহয় খুলনা টাইগার্সের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। বিপিএলে প্রথম তিন ম্যাচ হারা খুলনাকে জয়ের মুখ দেখাতে পারতেন একমাত্র তামিম ইকবালই। তামিম আজ খুলনাকে জয় যেমন এনে দিয়েছেন, তেমনি রোমাঞ্চিত করেছেন দেশের ক্রিকেট ভক্তদেরও।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিংটা কেমন ফ্যাঁকাসে হয়ে গিয়েছিল। তাই তো নিজেই এই ফরম্যাট থেকে অবসরও নিয়েছেন। তবে তামিমের ক্লাসটা তো আর মিথ্যে হয়ে যায় না। আজ যেমন সেই ক্লাস দেখানোরই দিন ছিল। নিজ শহরে ফিরে গেলেন পুরনো দিনগুলোতে, সাথে করে নিয়ে গেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদেরও।
কমেন্ট্রি বক্স থেকে বারবার একটা শব্দ ভেসে আসছিল, ‘ভিনটেজ তামিম’। সত্যিই তামিম কী করেননি আজ ব্যাট হাতে। ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মেরেছেন, বলের গতি ব্যবহার করে বাউন্ডারি আদায় করেছেন, কাভারের উপর দিয়ে বলকে সীমানা ছাড়া করেছেন, আবার ফ্লিক করে চার। একটা শব্দেই এই ইনিংসকে বর্ণনা করা যায়-ভিনটেজ তামিম।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি কার্যকর নন। তাঁর ব্যাটিং করার ধরণ এই ফরম্যাটের সাথে যায় না। তবে আজকে তামিম অবশ্যই কার্যকর ছিলেন। খুলনা অবশেষে ম্যাচ জিততে পেরেছে তাঁর ব্যাটে চড়েই।
চট্টগ্রামের উইকেট অবশ্য আজ স্বভাবসুলভ ব্যবহার করেনি। রান করা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছিল ব্যাটারদের জন্য। রংপুরের ব্যাটিং লাইন আপও ভুগেছে এখানে রান করতে গিয়ে। রনি তালুকদার, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ নেওয়াজ কেউই রানের দেখা পাননি।
একমাত্র শেখ মেহেদী ৩৪ বল থেকে করেছেন ৩৮ রান। এছাড়া ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাট থেকে এসেছে ২৫ রানের ইনিংস। তাঁদের ব্যাটে চড়েই রংপুর রাইডার্স করতে পেরেছিল ১২৯ রান। খুলনার হয়ে ওয়াহাব রিয়াজ নিয়েছিলেন চার উইকেট।
চট্টগ্রামের এই উইকেটে পেসার, স্পিনার সবাই সুবিধা পাচ্ছিলেন খানিকটা। ফলে ১৩০ রানের টার্গেটও সহজ ছিল না খুলনার জন্য। এছাড়া টানা তিন ম্যাচ হেরে মানসিকভাবেও পিছিয়ে ছিল দলটা। মানসিকভাবে পিছিয়ে ছিলেন তামিম ইকবালও।
কেননা প্রথম তিন ম্যাচে তিনিও ভাল ইনিংস খেলতে পারেননি। একটা ৪০ রানের ইনিংস থাকলেও সেটা যথেষ্ট কার্যকর ছিল না। তবে আজ তামিম দলকে জেতানোর জন্য সব কিছুই করেছেন। উইকেটের চারপাশে বাহারি শটের পশরা সাজিয়েছেন।
মুনিমের সাথে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেছেন ৪১ রান। মুনিম আউট হয়ে যাওয়ার পর যেন আরো চড়াও হয়েছেন তামিম। ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম অর্ধশতকের পথে। মাত্র ৩৫ বল থেকেই তুলে নেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি।
তবে তাতেই থেমে যাননি খুলনার এই ওপেনার। ব্যাট হাতে দলকে নিয়ে যেতে থাকেন জয়ের পথে। জুটি বড় করতে থাকেন মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে। জয় একপ্রান্তে ধীরগতির ইনিংস খেললেও স্কোরবোর্ডে সেই চাপ পড়তে দেন তামিম ইকবাল।
তামিমের এই ইনিংসে পর ১৩০ রানের টার্গেটটা আর বড় মনে হয়নি খুলনার জন্য। সহজ জয়ের পথেই এগিয়ে যেতে থাকে তাঁরা। শেষ পর্যন্ত তামিম-জয় জুটিই জয় এনে দেয় খুলনাকে। ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তামিম।