বিরাটের লেগস্পিন ভীতি!

বিরাট কোহলি। ভারতের ক্রিকেট আকাশে বিরাট অংশ জুড়ে যার অবস্থান। শুধু ভারত নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেই তিনি নতুন একটা সুর তুলেছেন। একদম নিজস্ব একটা স্ট্যান্ডার্ড স্থাপন করেছেন। বিরাটের সেই অনন্যতা তাই সামনে চলে আসে অনায়াসেই। কারণ তিন ফরম্যাটেই নিজের প্রভাব কোন ক্রিকেটারই বা সর্বশেষ রেখেছিলেন?

বিরাট কোহলি। ভারতের ক্রিকেট আকাশে বিরাট অংশ জুড়ে যার অবস্থান। শুধু ভারত নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেই তিনি নতুন একটা সুর তুলেছেন। একদম নিজস্ব একটা স্ট্যান্ডার্ড স্থাপন করেছেন। বিরাটের সেই অনন্যতা তাই সামনে চলে আসে অনায়াসেই। কারণ তিন ফরম্যাটেই নিজের প্রভাব কোন ক্রিকেটারই বা সর্বশেষ রেখেছিলেন?

বিরাট কোহলি এখানেই একটা নিজস্বতা তৈরি করেছেন। টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি, তিন ফরম্যাটেই তিনি নিয়মিত রান করেন। সেটা শুধু ‘ধারাবাহিক’ শব্দে বেঁধে রাখলেও হয় না, রীতিমত অতি মানবীয় ইনিংসই তিনি খেলে থাকেন তিন ফরম্যাটেই।

তবে এই বিরাট কোহলিরও একটা সময় অফ ফর্মের তকমা গায়ে লেগেছিল। যে পরিসংখ্যান অন্য দেশের ক্রিকেটারদের জন্য বেশ, সেই পরিসংখ্যানেই কোহলিকে নামিয়ে দেওয়া হল, অফ ফর্মের একটি ট্যাগলাইনে। কারণ গড়পড়তা পারফরম্যান্সে তো আর বিরাট কোহলির থেকে প্রত্যাশা পূরণ হয় না। বিরাট কোহলিকে নিয়ে তো ততদিনে সমর্থকদের আকাঙ্ক্ষা আকাশ ছোঁয়া। 

বিরাট কোহলি সব পেছনে ফেলে একসময় ফিরলেন। একটু সময় নিয়েই ফিরলেন। সহস্র দিন পর প্রথমবারের মত দুই হাত তুললেন। কারণ তার আগে গোটা ১০২১ টা দিন যে তিনি সেঞ্চুরির মুখ দেখেননি। অথচ এই সেঞ্চুরিকেই তিনি একদম ডালভাত বানিয়ে ফেলেছিলেন এক সময়।

যাই হোক, বিরাটের ব্যাটের নিরবতায় সারা বিশ্ব যখন বাবর, রিজওয়ানে আচ্ছন্ন, ঠিক সে সময়টাকেই বেছে নিলেন কোহলি। সেই যে এশিয়া কাপ থেকে শুরু করলেন, এরপর থেকে রানের ফোয়ারা ছুটছেই কোহলির ব্যাটে। বিরাট আবারও নিজেকে নিয়ে আসলেন পাদপ্রদীপের আসনে। 

এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান এসেছে বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে। এর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে একদম ধ্বংসস্তুপ থেকে ভারতকে তুলে এনেছিলেন তিনি। মেলবোর্নে মহাকাব্যিক ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংসেই পাকিস্তানকে বলতে গেলে এক হাতেই হারিয়ে দিয়েছিলেন। কোহলির সেই রানপ্রবাহ এরপরও থামেনি। নেদারল্যান্ডস আর বাংলাদেশ- দুই দেশের পক্ষেই পেয়েছেন ফিফটি।

বহুদিন বাদে চালকের আসনে থেকে ফুরফুরে মেজাজে তাই থাকতেই পারেন কোহলি। তবে ‘নো ওয়ান ইজ পারফেক্ট’ বলে তো একটা কথা আছে। কোহলিরও ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বোলারদের কাছে আত্মসমর্পণের দৃশ্য নিশ্চিতভাবেই আছে। সে হিসেবে কোহলির পরের দুটি ম্যাচ কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। কেন সেটা? আপাতত সেই ব্যাখ্যাই করা যাক। 

বিরাট কোহলি স্পিন, পেস-দুই ধরনের বলেই ভাল খেলেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শটও খেলে থাকেন। তবে তুলনামূলক স্পিনারদের বিপক্ষে তিনি একটু রয়ে শয়ে খেলেন। কিন্তু স্পিনটা যখন লেগস্পিন হয়ে যায়, তখন কিন্তু আবার বিরাট কোহলির কিঞ্চিত পরিমাণ অসহায়ত্বও ফুটে ওঠে। আর এমন সব স্পিনারদের বিপক্ষেই আগামী নক আউট রাউন্ড সামলাতে হবে কোহলিকে। 

সেমিতে ভারতের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আর এই ইংলিশ দলেই আছেন আদিল রশিদ। পরিসংখ্যান বলে, আদিল রশিদের বলে বড্ড নড়বড়ে বিরাট। সব ফরম্যাট মিলিয়ে এই আদিল রশিদের বলেই বিরাট আউট হয়েছেন ৯ বার। ১০ টেস্টে ৪ বার, ৮ ওয়ানডেতে ৩ বার আর ১১ টি-টোয়েন্টিতে ২ বার তিনি আদিল রশিদের বলে পরাস্ত হয়েছেন। ইংলিশ বোলারদের মধ্যে আদিল রশিদই যে কোহলির জন্য একমাত্র হুমকি, সেটিও কিন্তু নয়।

ইংল্যান্ডের আরেক স্পিনার মইন আলীর বলে ক্যারিয়ারে ১০ বার আউট হয়েছেন বিরাট কোহলি। আর বোলার বেন স্টোকস বনাম ব্যাটার বিরাট লড়াইয়েও এগিয়ে বেন স্টোকস। ক্যারিয়ারে বেন স্টোকসের কাছে বিরাট পরাস্ত হয়েছেন ৯ বার। 

এ তো গেল সেমিফাইনাল বাঁধা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো ভাবে টপকে গেলে বিরাট কোহলি ফাইনালে পেতে পারেন ইশ সোধি অথবা শাদাব খানকে। আর কিউই লেগি ইশ সোধির বিপক্ষেও ক্যারিয়ারে তেমন আগ্রাসন দেখাতে পারেননি বিরাট কোহলি। ক্যারিয়ারে ১৫ ইনিংসে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন এ দুই ক্রিকেটার। আর সেই ১৫ ইনিংসে বিরাট কোহলিকে ৬ বার আউট করেছেন ইশ সোধি। আর বিরাটের সেই ১৫ ইনিংসে ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৩।

পাকিস্তানের লেগ স্পিনার শাদাব খান বিরাটকে কখনও আউট করতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু শাদাবের উপর কখনও চড়াও হতে পারেননি বিরাট নিজেও। ক্যারিয়ারে শাদাবের ৬৭ বল ফেস করেছেন, রানও করেছেন ৬৭। আর এই ৬৭ রানের মধ্যে নেই কোনো ছক্কার মার। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, বিরাট কোহলি কতটা সাবধানী ব্যাটিং করেছেন শাদাবের বিপক্ষে। 

আদিল রশিদ, ইশ সোধি, শাদাব- এই তিনজনই বিরাট কোহলির আগামী ম্যাচগুলোতে প্রধান হুমকি। ডেটা অ্যানালাইসিস করে অন্তত সেইটা বলা যায়। কিন্তু ব্যাটার বিরাটের স্বরূপের দিনে এসব কোনো পরিসংখ্যানই আদৌতে কোনো কাজে আসবে না। নিজের দিনে যেকোনো বোলারের উপরেই তিনি আগ্রাসন দেখাতে পারেন।

তবে, সেটির বৈপরীত্য ঘটলে, পরিসংখ্যানের পাতায় বিরাটের লেগ স্পিন দূর্বলতার বিষয়টিও যুক্ত হবে নিশ্চিতভাবেই। পরিসংখ্যানের সংখ্যা রেখায় সেসব দুর্বলতা নিয়ে চর্চাও হবে অনেক। কারণ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোও তো বিরাট কোহলির দুর্বলতার জায়গা খোঁজার জন্য ওঁত পেতে থাকে।           

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...