বিরাট প্রশ্ন, বিরাট অপেক্ষা

ব্যাট হাতে রান খরা যেনো কিছুতেই কাটছে না ভারতীয় বিরাট অধিনায়ক কোহলির। ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে গোল্ডেন ডাকে আউট হবার পর হয়েছিলেন বেশ সমালোচিত।

এরপর দ্বিতীয় টেস্টে লর্ডসে রানের দেখা পেলেও নিজের নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারেননি তিনি। দল জিতলেও ব্যাট হাতে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিরাট। ব্যর্থতার বৃত্তটা আরো বড় হয় সবশেষ হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিনেই।

টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের স্যুইং আর গতির সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। সেই সাথে ব্যাট হাতে আবারো ব্যর্থ হন বিরাট। মাত্র ৪ রানেই ২ উইকেট পড়ার পর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন তিনি।

কিন্তু, আবারো জিমির ফাঁদে পা দেন বিরাট! ব্যক্তিগত সাত রানে জিমির দেওয়া অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে যেয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক জশ বাটলারের গ্লাভসে। সিরিজে দ্বিতীয় বারের মতো অ্যান্ডারসনের শিকার হয়ে ফেরত যান বিরাট।

একই অবস্থা দ্বিতীয় ইনিংসেও। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে ব্যাট হাতে ভীত গড়ার চেষ্টা করলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বিরাট। অবশ্য টানা ব্যর্থতার মাঝে দেখা পেয়েছেন ফিফটির। ব্যক্তিগত ৫৫ রানে ওলি রবিসনের বলে একই ভাবে উইকেটের পেছনে স্লিপে জো রুটের হাতে ধরা পড়েন তিনি! ম্যাচ শেষে রবিনসন বলেন, ‘বিরাটের জন্য একই পরিকল্পনা ছিলো। চতুর্থ/পঞ্চম স্টাম্পে একটু অ্যাঙ্গেল করে বল করা, আর আশা ছিলো সে এজ হবে! এবং সে ঠিক তাই করেছে।’

রবিনসনের ভাষ্যমতে বোঝা যায় বিরাটকে আউটের কৌশল তারা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে নিয়েছেন। আর বিরাটও সেই একই ফাঁদে পা দিচ্ছেন বার বার। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন বিরাট।

নামটা বিরাট কোহলি বলেই হয়তো সমালোচনার মাত্রাটা অনেক বেশি। এর মূল কারণ তার কাছ থেকে ক্রিকেট সমর্থকদের প্রত্যাশাটাও নিশ্চই অনেক বেশি। তবে নিজকে মেলে ধরতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। কিছুদিন আগেও সেঞ্চুরি না পেলেও নিয়মিতই ব্যাটে রান করেছেন।

কিন্তু, সম্প্রতি বেশ কয়েক ম্যাচেই উইকেট থিতু হতে পারছেন না বিরাট। সবশেষ লর্ডস টেস্টের পর এক সাক্ষাৎকারে সাবেক ভারতীয় কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার বিরাটের ব্যাটিং নিয়ে বলেছিলেন, তিনি বিরাটের ব্যাটিং বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করেছেন। পায়ের ম্যুভমেন্ট ঠিকমতো করতে না পারায় আউট হয়ে যাচ্ছেন বিরাট।

আগের দুই টেস্টের মতোই সবশেষ হেডিংলি টেস্টেও অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ আউট হন তিনি। ফুটওয়ার্কজনিত সমস্যার কারণেই কিনা বিরাট বল ঠিকভাবে টাইমিং করতে পারছেন না? নাকি ইংলিশ পেসারদের স্যুইং সামলাতে পরাস্থ হচ্ছেন বার বার? প্রশ্ন উঠছে – আপাতত কোনো উত্তর নেই।

হেডিংলি টেস্টেও সেঞ্চুরি ব্যর্থতার পর এখন পর্যন্ত বিরাট সেঞ্চুরি পায়নি টানা ৫১ ইনিংসে! ২০১৯ সালে কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এরপর এখন পর্যন্ত আর সেঞ্চুরির দেখা পাননি বিরাট! তবে এই ৫১ ইনিংসে করেছেন ১৮টি ফিফটি! প্রায় ৪০ গড়ের সাথে পাঁচ ইনিংসে আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

এর আগে ২০১৪ সালে ফতুল্লায় বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন বিরাট। তারপরের ২৫ ম্যাচেই আর সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি! এখানেই শেষ নয়; আরো আছে! ২০১১ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মিরপুরে সেঞ্চুরির পর সাত মাস সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। ২৪ ম্যাচ সেঞ্চুরি খরায় ছিলেন এই ভারতীয় অধিনায়ক। এমন অবস্থার পর হয়তো বাংলাদেশের বিপক্ষে পরবর্তীতে খেলার আগেও দু’বার ভাববেন তিনি – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কৌতুকও করছেন কেউ কেউ!

টেস্টে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার বিরাটের উইকেট নিয়েছেন যৌথভাবে জেমস অ্যান্ডারসন ও নাথায় লায়ন – ৭ বার। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ১৮ ইনিংসে একবারও বিরাটকে আউট করতে পারেননি অ্যান্ডারসন। তবে চলতি বছর ২০২১ সালেই চার ইনিংসে ইতোমধ্যে দু’বার বিরাটকে নিজের শিকার বানিয়েছেন জিমি। চলতি সিরিজে এখন পর্যন্ত ৫ ইনিংসে মাত্র ২৪.৮ গড়ে ১২৪ রান করেছেন বিরাট! শেষ ইনিংসে ফিফটির আগের ৪ ইনিংসে মাত্র ১৭ গড়ে করেছিলেন ৬৯ রান! তাঁর নামের পাশে বড্ড বেমানান এই পরিসংখ্যান।

যাই হোক কাগজে কলমে তিনি এখন ব্যর্থতার চাদরে মোড়ানো। আর এই চাদরের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আবারো নিজেকে মেলে ধরার রাস্তাটাই খুঁজছেন বিরাট। আগের ইনিংসের ফিফটিতে হয়তো সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন বিরাট। একবার রাস্তাটা খুজে পেলেই হয়তো আবারো স্বরুপে দেখা যাবে তাঁকে। তবে সে পর্যন্ত করতে হবে অপেক্ষা। আর সেই অপেক্ষায় ক্রিকেট ভক্ত সমর্থকদের কতটা প্রহর গুনতে হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link