ছিলেন, আছেন, থাকবেন!

অ্যান্ডারসন কেবল ১৪ টেস্টেই টেন্ডুলকারকে আউট করেছেন সর্বোচ্চ নয় বার। তার গতি-সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে টেন্ডুলকার কখনো ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে কিংবা উইকেটরক্ষকের কাছে আবার কখনোবা উড়ে গেছে তার স্ট্যাম্প। জিমির ক্যারিয়ারের সেরা সময় শুরু হবার আগেই অবসর নিয়েছেন শচীন নইলে উইকেটসংখ্যা যে আরো বাড়ত সেটা বলাই বাহুল্য। বিরাট কোহলির অবশ্য সে সৌভাগ্য হয়নি। জিমির ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তেই তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। সে কাজে কোহলি যে খুব একটা সফল সেটা বলা যাবে না, ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ দশবার তার বলেই আউট হয়েছেন শচীন পরবর্তী সেরা এই ব্যাটসম্যান। বলা যায় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন জিমি অ্যান্ডারসনের বানি।

বর্তমান সময়ে যেখানে ত্রিশের পরই ফর্ম হারিয়ে ফেলেন পেসাররা। সেখানে গত জুলাইতে ৩৯ পা দেওয়া জিমি অ্যান্ডারসনের থামার কোনো লক্ষণই নেই। বয়স যত বাড়ছে তত যেন তীক্ষ্ণ হচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন পেসারদের মাঝে সর্বোচ্চ ১৬৫ টেস্ট।

গ্লেন ম্যাকগ্রাকে পেছনে ফেলেছেন আরো বছর দুয়েক আগে, সম্প্রতি অনিল কুম্বলেকে ছাপিয়ে ৬২৯ উইকেট নিয়ে উঠে এসেছেন ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকার তৃতীয় স্থানে। যেভাবে এগোচ্ছেন তাতে করে শেন ওয়ার্নের ৭০৮ উইকেটের রেকর্ডও হয়ে গেছে হুমকির সম্মুখীন।

অ্যান্ডারসনের টেস্ট অভিষেক ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। লর্ডসে নিজের অভিষেক ম্যাচেই পাঁচ উইকেট নেন তিনি। যদি পরের কয়েক বছর দলে থিতু পারেননি তিনি। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, স্টিভ হার্মিসনরা অবসরে যাবার পর ইংল্যান্ডের বোলিং লাইন আপের নেতৃত্ব বর্তায় তাঁর কাঁধেই।

শুরুতে কেবল সুইং বোলার হিসেবে আবির্ভাব হলেও ধীরে ধীরে নিজের তূণে যোগ করেছেন স্লোয়ার, ইয়োর্কার, রিভার্স সুইংয়ের মতো অস্ত্র। টেস্টে মনোযোগ বাড়াতে ২০১৫ সালেই অবসর নিয়েছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে। এরপর থেকে যেন আরো ভয়ংকর রূপে দেখা দিয়েছেন জিমি।

এ বছর খেলা ৯ টেস্টে ইতোমধ্যেই শিকার করেছেন ২৯ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকা করলে সবার উপরের দিকেই থাকবেন শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেটে ১০০ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ওডিয়াই কিংবা টেস্ট দুই ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। যেকোনো বোলার ক্যারিয়ারে একবার-দুবার শচীনকে আউট করতে পারলেই বর্তে যান।

সেখানে অ্যান্ডারসন কেবল টেস্টেই টেন্ডুলকারকে আউট করেছেন সর্বোচ্চ নয় বার। তার গতি-সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে টেন্ডুলকার কখনো ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে কিংবা উইকেটরক্ষকের কাছে আবার কখনোবা উড়ে গেছে তার স্ট্যাম্প। জিমির ক্যারিয়ারের সেরা সময় শুরু হবার আগেই অবসর নিয়েছেন শচীন নইলে উইকেটসংখ্যা যে আরো বাড়ত সেটা বলাই বাহুল্য। বিরাট কোহলির অবশ্য সে সৌভাগ্য হয়নি।

জিমির ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তেই তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। সে কাজে কোহলি যে খুব একটা সফল সেটা বলা যাবে না, ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ দশবার তার বলেই আউট হয়েছেন শচীন পরবর্তী সেরা এই ব্যাটসম্যান। বলা যায় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন জিমি অ্যান্ডারসনের বানি। বোলিংয়ের পাশাপাশি মাথাটাও সমান চালু জিমির।

কেবল বোলিং নয়, অনেকসময় কেবল বুদ্ধির জোরের হতভম্ভ করেছেন ব্যাটসম্যানদের। চলমান ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজে কোহলিকে করা আউটটাই মনে করে দেখুন না। ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন কোহলি। এর আগেই চারটি বলেই কোহলিকে এলোমেলো বোলিং করে বাউন্ডারির জন্য প্রলুন্ধ করেন জিমি। এরপর কোহলির ছটফটে মানসিকতার সুযোগ নিয়ে বাধ্য করেছেন উইকেটের পেছনে।

আগের ম্যাচেই জাসপ্রিত বুমরাহ অহেতুক বাউন্সার দিয়ে রাগিয়ে দিয়েছিলেন জিমিকে। আশির দশকে যেখানে বোলারদের বাউন্সার দেয়া লজ্জার ব্যাপার বলে পরিগণিত হতো সেখানে বুমরাহ অহেতুক অ্যান্ডারসনের শরীর তাক করে বল করে গেছেন। এ যেন ঘুমন্ত সিংহকে রাগিয়ে দেয়া, পরের টেস্টেই তাও অ্যান্ডারসনের আগুনে পুড়ে ছাড়খার ভারতের টপ অর্ডার। ভারতের টপ অর্ডারের তিনটি উইকেটই নিয়েছেন অ্যান্ডারসন।

শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং সহায়ক এক পিচে কোহলিরা গুটিয়ে গেছেন ৭৮ রানেই। সব রেকর্ডই গড়া হয় ভাঙার জন্য। কিন্তু ব্র‍্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড় কিংবা মুরালিধরনের ৮০০ উইকেটের মতো কিছু রেকর্ড থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বর্তমানের টানা তিন ফরম্যাট খেলার ধকল সামলে কোনো পেসার যে অ্যান্ডারসনকে পেছকে ফেলতে পারবেন না ঝুঁকি নিয়ে সে ভবিষ্যদ্বানী কিন্তু করাই যায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...