ভারতে জন্ম নেওয়া সেরা ব্যাটসম্যান কে? অবশ্যই শচীন টেন্ডুলকার। আর একালে ভারতের সেরা কে? নিশ্চয়ই বিরাট কোহলি। দু’জনই ভারতের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা। দু’জনের মধ্যে তুলনাও চলে বিস্তর। আবার দু’জনের মধ্যে পার্থক্যও অনেক। ভারতের সাবেক ডানহাতি পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ কথা বলেছেন সেই পার্থক্য নিয়ে।
১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত খেলা ৩৩ টি টেস্ট ও ১৬১ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে অনেক ম্যাচেই প্রসাদ সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। এমনকি তাঁর অধিনায়কত্বেও খেলেছেন। এই কারণে তাঁকে খুব কাছে থেকে দেখার, জানার সুযোগ হয়েছিলো প্রসাদের।
তিনি একটি ইন্টারভিউতে শচীন টেন্ডুলকার সম্পর্কে বলেন, ‘শচীন কোন অবস্থাতেই মুখে বা শরীরি ভাষায় নিজের অভিব্যক্তি জানাতেন না। ব্যাট করার সময় কোন কিছুই তাকে বিচলিত করতে পারতো না। শচীনের মনোসংযোগে চিড় ধরে এমন কোন কাজ শচীন করতেন না।’
কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা মাঠ বা মাঠের বাইরের কিছু কথায় না ব্যাটে বলের পারফরম্যান্সে জবাব দেন। ভিরাট ও শচীন সেই সারিরই একজন। তারা ব্যাটে জবাব দিলেও ভেঙ্কটেশ প্রসাদ তাঁদের এই অভিব্যক্তির পার্থক্যটা বোঝাতে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
ঘটনাটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে অনুষ্ঠিত একটি ভারত-পাকিস্তানের একটি ম্যাচের কথা। সেই সময় ওয়াসিম আকরাম আর শচীন টেন্ডুলকার দ্বৈরথ ছিলো ভারত-পাকিস্তান খেলার অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত। সেই ম্যাচে ওয়াসিমের একটি আক্রমণাত্মক গতিশীল বাউন্সার শচীনের হেলমেটে আঘাত করেছিলো।
পরের বলও আগের মতো একই লাইন লেংথে ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে করে শচীনকে ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে শচীন সে বলটিকে হুক করে ছয় মেরে জবাব দিয়েছিলেন ব্যাট হাতে।
প্রসাদ বলেন, ‘একটা ঘটনার কথা বলতে চাই। শারজায় একবার ওয়াসিম আকরামের বল শচীনের হেলমেটে আঘাত করেছিলো। অত্যন্ত গতিশীল বল ছিলো। বোধহয় ১৪৫ কিলোমিটারের আশেপাশে হবে। এতটা আশা করেনি ও। হেলমেটে বল লাগার পর ও শুধু লেগ আম্পায়ারের দিকে একটু হেটে গিয়ে শরীরটাকে ঝাকিয়ে নিয়েছিল। হেলমেট খোলেওনি। শুধু গ্রিলটা ধরে সেটাকে ভালো করে পরে নিয়েছিল। এ-র বেশি কিছু করেনি।’
পরক্ষণে প্রসাদ আরও বলেন, ‘ও ফিরে এসে ব্যাটিং শুরু করে। পরের বল ওয়াসিম আকরাম ঠিক একই গতিতে একইভাবে শচীনের হেলমেট লক্ষ্য করে বাউন্সার দেয়। নিখুঁত নিশানায় ছিলো বল। শচীন সেটাতে ছক্কা হাকায়। তার পরেও ওর মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া ছিলো না।’
প্রসাদ মনে করে এক্ষেত্রে বিরাটের আচরণ হত অন্যরকম। তিনি বলেন, ‘বিরাটের আক্রমণাত্মক হওয়ায় খেলার মাঠেই, এটা তার স্বভাবগত না। এটা শুধু খেলার মাঠেই কারণ সে সব ম্যাচ জিততে চায়, পারফর্ম করতে চায়। শচীন ও চাইতো একই কিন্তু সে মাঠের খেলায় হিট হলেও আমরা তার কাছে থেকে আবেগ প্রকাশ করতে দেখি না, কিন্তু ভিরাট সেই প্রকৃতির যে নিজেকে প্রকাশ করতে পছন্দ করে।’
আবার শচীন ও বিরাটের তুলনায় তিনি আরো বলেন, ‘শচীন একদিকে কোমল নমনীয় তবে দৃঢ়, বিরাট আরেকদিকে আগ্রাসী, কঠিন। কিন্তু, দুইজনই মাঠ ও মাঠের বাইরে দারুণ ব্যক্তিত্ব বজায় রাখে। এবং দুই জনই দুই প্রজন্মের কিংবদন্তি।’
প্রসাদ মনে করেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুই জন তাদের ভিন্ন স্বভাবে আবেগ প্রকাশ করলেও দুইজনই তাদের খেলা দিয়েই সেরা হয়েছেন। ক্রিকেটের শেষ্ঠত্বে, সমৃদ্ধিতে তাঁরা দুজনই সমান গুরত্বপূর্ণ।