এই বিরাটকে সত্যিই বাদ দেবে ভারত!

ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় একটা গুঞ্জন বেশ জোরালো। বিরাট কোহলি থাকবেন না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে। তিনি ঠিক এখনকার টি-টোয়েন্টি ঘরনার ব্যাটার নন, এমন এক তকমা জুড়ে দিয়ে তাকে রেখেই দল গঠনের ফন্দি আঁটছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

আবার বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নিতে পারফরম করতে হবে আসন্ন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। সে কথাও চাওড় হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে। সত্যিই কি বিরাটের প্রমাণ করতে হবে নিজেকে? আসলেই কি তিনি ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন?

হয়ত এসবের উত্তর রয়েছে। তবে যদিও বা বলা হয় এই বিরাটকেই ভারতের প্রয়োজন- তাহলেও যে খুব একটা ভুল বলা হয় না। না, শুধু নামের ভারে তিনি সুযোগ পাবেন- বিষয়টি তেমন নয়। তিনি যোগ্য বলেই সুযোগটি তার প্রাপ্য। তিনি যোগ্য বলেই এবারের বিশ্বকাপেও তিনি খেলার দাবি রাখেন।

বিরাট কোহলি হয়ত উদ্বাবনী সব শট খেলে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন না। আবার হার্দিক পান্ডিয়ার মত বেধরক ব্যাট চালাতেও তিনি খুব একটা পারদর্শী নন। তবুও দিনশেষে তিনিই যে ভারত দলের নিউক্লিয়াস। তিনিই যে ভারতের সবচেয়ে বড় ‘ম্যাচ উইনার’ সেসব আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

১০৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতের জার্সি গায়ে ব্যাট করেছেন বিরাট কোহলি। যার মধ্যে ৭০ ম্যাচেই জয়ের দেখা পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। নিশ্চয়ই চমকপ্রদ বিষয়। তবে চমকের শেষ এখানেই নয়। সেই সব ম্যাচে ২৮২৮ রান করেছেন তিনি ৬৭.৩৩ গড়ে! না বিস্মিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। ১৫ দফা তিনি ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও নিজের করে নিয়েছেন।

তাছাড়া রানতাড়া তিনি এখনও অনন্য। ৭১.৮৫ গড়ে তিনি রান করেছেন জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে। স্ট্রাইকরেটও তার যথেষ্ট ভাল- ১৩৭। ১০টি শীর্ষ ক্রিকেট খেলুড়ে দলের মধ্যে এই পরিসংখ্যানে তার কাছাকাছি অবস্থান করছেন স্রেফ সুরিয়াকুমার যাদব। যদিও বিরাটের স্বদেশী সতীর্থের গড় কম, ৫০.১২ তবে স্ট্রাইকরেট ঢের বেশি ১৫৯।

৪৬ ম্যাচে রান তাড়া করতে ব্যাট হাতে বাইশ গজে নেমেছিলেন বিরাট। যার ৪০ ম্যাচেই জয়ের মুখ দেখেছে ভারত। সেসব ম্যাচে তার গড় ছিল ৮৬.৮৪। স্ট্রাইকরেট ছিল ১৩৬-১৩৮ এর মধ্যেই। তার এই স্ট্রাইকরেটকেই আসলে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে অধিকাংশ সময়ে। সেটাই তার দূর্বলতার জায়গা বলে চিহ্নিত করবার চেষ্টা চলেছে প্রতিনিয়ত।

তবে আদোতে বাস্তব চিত্র অনেকটাই বিরাটের পক্ষে। বিরাটের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইকরেট ১৩৮.১৫। হ্যা, একথা সত্য যে তা অতিমানবীয় নয়। তবে এ কথাও সত্য যে এমন স্ট্রাইকরেটে একেবারেই তুচ্ছ কোন বিষয় নয়। রোহিত শর্মা সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বিরাটের থেকে। রোহিতের স্ট্রাইকরেট ১৩৯.৯৭।

অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিনোদনের ফেরিওয়ালা বলা হয় ক্রিস গেইলকে। যার বিধ্বংসী ব্যাটিং আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। তার স্ট্রাইকরেট ১৩৭.৫০। বিরাটের আরেক সতীর্থ হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি হার্ডহিটার হিসেবেই প্রসিদ্ধ। তার স্ট্রাইকরেট ১৩৯.৮। কোহলির স্ট্রাইকরেটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গিয়ে প্রায়শই তার ব্যাটিং রোলকে এড়িয়ে যাওয়া হয়।

বিরাট কোহলি নম্বর তিন পজিশনে ব্যাট করেছেন অধিকাংশ সময়ে। তার দায়িত্বই থাকে দলের রানের চাকা সচল রাখা। ম্যাচটাকে মিডল ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া। উইকেট বাঁচিয়ে রানের গতি স্লথ হতে না দেওয়া। যাতে করে পরবর্তী ব্যাটাররা নির্দ্বিধায় হাতখুলে ব্যাট চালাতে পারে। তিনি নিজেও যেন দেদারছে বাউন্ডারি আদায় করতে পারেন।

আরও একটি বিষয় কোহলির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। তার বাউন্ডারির মারার দক্ষতাকেও সমালোচনার পাত্রে ফেলা হয়। অথচ তিনি প্রায় প্রতি ৬.১ বলে একটি করে বাউন্ডারি আদায় করতে পারেন। রোহিতের যেখানে একটি বাউন্ডারির জন্যে ৬.৩ বল অপেক্ষা করতে হয়। স্রেফ সুরিয়াকুমার যাদব অন্তত বিশ ম্যাচ খেলে বাউন্ডারির অনুপাতে এগিয়ে রয়েছেন। প্রতি ৩.৯ বলে একটি করে বাউন্ডারি আদায় করতে পারেন সুরিয়া।

তবে এই পরিসংখ্যানের বলেই বিরাটকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া উচিত বিষয়টি তেমন নয়। বরং তিনি নিজেকে ভেঙে গড়তে জানেন বলেই তাকে নেওয়া উচিত। ভারতের হয়ে শেষ ১৪ ম্যাচে ১৪৬.৩১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন বিরাট। বাউন্ডারি হাঁকিয়েছন প্রতি ৫.৩ বলে। তিনি নিজেকে ছাপিয়ে গেছেন প্রতিটা মুহূর্তে। তাইতো তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরাদের একজন।

তাইতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাটের মত অভিজ্ঞ একজনকে ভারতের নিশ্চয়ই প্রয়োজন হবে। সকল ধরণের বিরুপ পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কি করে ম্যাচের মোমেন্টাম ব্যাট হাতে নিজেদের করে নিতে হয়, তিনি তা ভাল করেই জানেন। সর্বোপরী তিনি পারফরমার। তিনি দলের জন্যে নিজেকে বদলে আবার নতুন করে গড়তে জানেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link