একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার বিস্তর নজীর পাওয়া যায় ইতিহাসে। এক সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন দুই ভাই এমন নজীরও নেহায়েৎ কম নয়।
তবে, এমন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খুব বেশি নয় – যেখানে দু’দলেই দু’জন করে সহোদরের দেখা মিলেছে। ওয়ানডে ইতিহাসে এই ঘটনা ঘটেছে ১৪। সেই গুটিকয়েক ম্যাচ ও ম্যাচে খেলা ভাইদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
- পান্ডিয়া বনাম কুরান (ভারত-ইংল্যান্ড: ২০২১)
ক্রুনাল পান্ডিয়ার অভিষেক ম্যাচ। হার্দিক পান্ডিয়া আগে থেকেই ছিলেন দলে। ২৭ বছর বয়সী হার্দিকের চেয়ে তিন বছরের বড় ক্রুনাল। প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন দুই ভাই – ২৬ বছর বয়সী টম কুরান ও ২২ বছর বয়সী স্যাম কুরান। কুরানদের বাবা কেভিন কুরান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন জিম্বাবুয়ের হয়ে।
ব্যাটিংয়ে হার্দিক এক রান করলেও ক্রুনাল ৩১ বলে ৫৮ রান করেন। কুরান ভাইরা উইকেটশূন্য ছিলেন। বোলিংয়ে নেমে ক্রুনাল এক উইকেট নেন, হার্দিক বোলিংই করেননি। টম ও স্যাম যথাক্রমে ১১ ও ১২ রান করেন। ইংল্যান্ড ২৫১ রান করে। ভারত জিতে ৬৬ রানের বড় ব্যবধানে।
- আকমল বনাম হাসি (পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া: ২০১২)
মাইকেল হাসি ও ডেভিড হাসির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আকমল ভাইরা দু’টি ওয়ানডে খেলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট প্রথম ম্যাচে শারজাহতে অস্ট্রেলিয়া চার উইকেটে জিতে। পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে ১৯৮ রান করে। উমর আকমল ৫২ ও কামরান আকমল ৪ রান করেন। জবাবে মাইকেল হাসি পাঁচ ও ডেভিড হাসি তিন রান করেন।
আবুধাবিতে দু’দিন বাদে অনুষ্ঠিত হয় পরের ম্যাচ। সেখানে পাকিস্তান জিতে সাত উইকেটে। মাইকেল হাসি ৬১ রান করলেও ডেভিড হাসি রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে নয় উইকেট হারিয়ে করে ২৪৮ রান। জবাবে আকমল ভাইদের ব্যাট করতে নামার প্রয়োজন পরেনি। পাকিস্তান মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে ৪৩.৪ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
- ওয়াহ বনাম ফ্লাওয়ার (অস্ট্রেলিয়া-জিম্বাবুয়ে: ১০ ওয়ানডে)
নিয়মিত জাতীয় দলে খেলা সহোদরদের মধ্যে প্রথমেই আসবে অস্ট্রেলিয়ার দুই ভাই মার্ক ওয়াহ ও স্টিভ ওয়াহ। দু’জন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় করেন। বড় ভাই স্টিভ ছিলেন অধিনায়ক।
অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের দুই ভাই অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারও লম্বা সময় এক সাথে খেলেন জাতীয় দলে। ফলে এই সময় ওয়ানডেতে ১০ বার ওয়াহ ভাইদের মুখোমুখি হন ফ্লাওয়াররা।
- অমরনাথ বনাম মোহাম্মদ (ভারত-পাকিস্তান: ১৯৭৮)
ক্রিকেটে ভারতের অমরনাথ পরিবার বেশ বিখ্যাত। সুরিন্দর অমরনাথ ও মহিন্দর অমরনাথ হলেন খ্যাতনামা লালা অমরনাথ। অন্যদিকে পাকিস্তান ক্রিকেটে একইরকম বিখ্যাত হল মোহাম্মদ পরিবার। একগাদা গ্রেটের জন্ম হয়েছে এই পরিবারে।
১৯৭৮ সালের ১৩ অক্টোবর শিয়ালকোটে পাকিস্তানের দুই ভাই সাদিক মোহাম্মদ ও মুশতাক মোহাম্মদের মুখোমুখি হন অমরনাথ ভাইয়েরা। সেবারই প্রথম কোনো ওয়ানডে ম্যাচে দু’দলেই দু’জন সহোদর খেলার প্রথম নজীর দেখা যায়। পাকিস্তানের অধিনায়ক সেদিন ছিলেন মুশতাক মোহাম্মদ।
ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং ছিল যাচ্ছেতাই। ৩৪.২ ওভারে মাত্র ৭৯ রান করে অলআউট হয় ভারত। সুরিন্দর এক রান করে রান আউট হন। মহিন্দর ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ৩৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন। জবাবে ওপেন করতে নেমে সাদিক এক রান করে কপিল দেবের বলে আউট হন। পাকিস্তান ১৬.৫ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। মুশতাকের সেদিন ব্যাটিং করার প্রয়োজন পরেনি।