আকাশে বাতাসে এখন শারদ বন্দনায় চলছে আগমণী বার্তার বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। এই উৎসবের পরেই আবার আসছে আরেক উৎসব। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের মহাযজ্ঞ বসছে আর দিন বিশেক পরেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজনে এবার প্রথমবারের মত আতিথেয়তা দিবে অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যেই ১৫ সদস্যের দল চূড়ান্ত করে ফেলেছে অংশগ্রহণকারী সব দেশ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জাগরণে এই ফরম্যাটের অন্যতম আকর্ষণ সুপার ওভার। কোনো ম্যাচ টাই হলে ম্যাচ জয় নির্ধারণে এক ওভারের ম্যাচ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা। ছয় বলের ম্যাচে কে করবেন বল আর কোন দুজনই বা ব্যাট হাতে নামবেন- এ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহেরও কমতি থাকে না। তবে বোলারদের জন্যই চ্যালেঞ্জটা বেশি।
কারণ খরুচে বোলিং করলেই ম্যাচ থেকে দলের ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠে। তাই সুপার ওভারে ম্যাচ জেতার জন্য একটি দলের সুপার ওভার স্পেশালিস্ট বোলারের দিকেই চোখ রাখতে হয়। এবারের বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বে খেলা আট দলের কোন আট জন বোলার সুপার ওভারে বল তুলে নিতে পারেন তা নিয়েই আজকের আয়োজন।
- রশিদ খান (আফগানিস্তান)
সাদা বলের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে স্পিনারদের মধ্যে সেরাদের সেরা বলা যায় রশিদ খানকে। গুগলি, স্লাইডার, ফ্লিপার- সব ধরনের রসদই তাঁর বোলিংয়ে রয়েছে। সীমিত ওভার ক্রিকেটে প্রচুর ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কারণ বছর জুড়েই বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাঁর সরব উপস্থিতি থাকে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও রয়েছে তাঁর কীর্তি। এই ফরম্যাটে সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা তাঁর। বোলার র্যাংকিংয়েও রয়েছেন শীর্ষ পাঁচে। জশ হ্যাজলউড, তাব্রাইজ শামসি, আদিল রশিদের পরেই চতুর্থ অবস্থানে আছেন তিনি। লেগ স্পিনার হলেও ব্যাটারের ইন্টেন্ট বুঝে রশিদ কুইকার ডেলিভারি দিতে পারেন। এ ছাড়া যেকোনো ফ্ল্যাট উইকেটেও দারুণ কার্যকরী তিনি। এজন্য আফগানিস্তান কোনো ম্যাচে সুপার ওভারের সম্মুখীন হলে নিশ্চিতভাবেই বল করার দায়িত্বটা পড়বে রশিদ খানের উপরেই।
- মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
আইসিসির যেকোনো টুর্নামেন্টেই বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ভরসার নাম মিচেল স্টার্ক। দলের হয়ে সর্বোচ্চটা দেওয়ার জন্য আর অহেতুক ইনজুরি এড়ানোর জন্য ফ্রাঞ্চাইজি লিগই খেলেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়া দলে হ্যাজলউড, কামিন্স থাকলেও ইয়র্কার, পেস, বাউন্সের কারণে সুপার ওভারে প্রথম পছন্দ হতে পারেন স্টার্ক।
ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৫১ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৬৩ টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। আর বড় মঞ্চে পারফর্ম করার একটা সুনাম রয়েছে তাঁর। তাই এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা ধরে রাখার মিশনে গুরুদায়িত্ব থাকবে স্টার্কের কাঁধেই।
- মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)
সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা ভাল বল করছেন না। বিশেষত, উপমহাদেশীয় কন্ডিশনের বাইরে গেলেই যেন তিনি নির্বিষ হয়ে যাচ্ছেন। তারপরও সুপার ওভারের ক্ষেত্রে মুস্তাফিজই বাংলাদেশের প্রধান অপশন। ডান হাতি ব্যাটারদের বেলায় মুস্তাফিজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠেন অনবদ্য।
লেগ মিডল স্ট্যাম্প লাইন বরাবর বল ফেলে অফ কাটারের মাধ্যমে ব্যাটারদের সহজেই বোকা বানাতে পারেন তিনি। এ ছাড়া ব্যাটারের মুভমেন্ট বুঝে স্লোয়ার, কুইকার- দুই ধরনেরই ডেলিভারি করতে পারেন তিনি। তাই সুপার ওভারের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অটোমেটিক চয়েসই থাকবেন দ্য ফিজ।
- ক্রিস জর্ডান (ইংল্যান্ড)
ডেথ ওভারে দারুণ বল করে থাকেন ক্রিস জর্ডান। ওয়াইডার ইয়র্কার, সাথে স্লোয়ার দিয়ে ব্যাটারকে ভালই পরাস্ত করতে পারেন। এ ছাড়া এর আগেও সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের হয়ে বল করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জিতিয়ে ছিলেন তিনি। তাই অতীত অভিজ্ঞতায় সুপার ওভারের সময় ইংল্যান্ডের হয়ে বল হাতে দেখা যেতে পারে ক্রিস জর্ডানকে।
- আর্শদ্বীপ সিং
এশিয়া কাপে দারুণ বোলিং করেছিলেন আর্শদ্বীপ। বিশেষত স্লগ ওভারগুলোতে ব্যাটারের দুর্বলতাকে টার্গেটে বল করায় সফল হয়েছিলেন তিনি। দলে ভূবনেশ্বর, হার্শাল প্যাটেল থাকার পরও আর্শদ্বীপ সিংকে সুপার ওভারে বল হাতে দেখা যেতে পারে।
কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে ভূবি, হার্শাল কেউই স্লগ ওভারে ভাল করতে পারেনি। উল্টো ভূবির শেষ দিকে বাজে বোলিংয়ের কারণে ভারতকে কিছু ম্যাচ হারতে হয়েছে। তাই সুপার ওভারে ভারতের বোলিং লাইন আপে প্রথম পছন্দ হতে পারেন আর্শদ্বীপ সিং।
- লকি ফার্গুসন (নিউজিল্যান্ড)
সুপার ওভার মানেই যেন নিউজিল্যান্ডের হার। বিশ্বকাপে যতবারই তাঁরা সুপার ওভারের সম্মুখীন হয়েছে ততবারই তাদের মাঠ ছাড়তে হয়েছে হারের ব্যথা নিয়ে। এবারে তাঁরা সুপার ওভারের জন্য লকি ফার্গুসনকে চিন্তা করতে পারে।
কারণ, লাইন লেন্থ ঠিক রেখে লকি প্রায় ৯০ মাইল গতিতে প্রতিটা বলই ছুড়তে পারেন। যেটি প্রতিপক্ষ ব্যাটারের কাছে আতঙ্কের কারণ হতে পারে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বেশ ভাল বোলিং করেছেন লকি ফার্গুসন। ৬.৮৪ ইকোনমিতে ২১ ম্যাচে নিয়েছেন ৩২ উইকেট।
- হারিস রউফ (পাকিস্তান)
এই কিছুদিন আগেই মেলবোর্নকে নিজের মাঠ বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তাই অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে সুপার ওভারের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রথম পছন্দ হতে পারেন হারিস রউফ। যদিও দলে শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ রয়েছে। তারপরও সাম্প্রতিক সময়ের ফর্ম আর অস্ট্রেলিয়ার চেনা কন্ডিশনের জন্য বাবর আজমের প্রথম ভরসা হতে পারেন হারিস রউফ।
- কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এখনকার সেরা পেসারদের তালিকা করলে রাবাদার নাম প্রথম দিকেই থাকবে। দারুণ সুইংয়ের সাথে দুর্দান্ত পেসে বোলিং করতে পারেন তিনি। তাই সুপার ওভারের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম পছন্দই থাকবে রাবাদা।
এখানে এনরিচ নর্কিয়াও সুপার ওভারে বোলিং করতে পারতেন। তবে ক্রাঞ্চ মুহূর্তে বেশ কিছু ম্যাচে তিনি খরুচে বোলিং করেছেন। তাই সুপার ওভারের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং প্রান্তে রাবাদাকেই দেখা যেতে পারে।